Discuss the causes of the American War of Independence. আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো।

by - November 28, 2021

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো। 



ভূমিকা : - সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ইংল্যান্ডের Stuart রাজবংশের ধর্মীয় অনাচারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে বহু ইংরেজ আমেরিকা মহাদেশের ১৩ টি উপনিবেশে বসতি গড়ে তোলে। উপনিবেশগুলির আদি বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের পাশাপাশি থেকে উপনিবেশবাসীরা এক গভর্নরের পরিচালনায় স্বায়ত্তশাসনের অধীনস্থ ছিল। কিন্তু ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষ Declaratory Act জারি করে বলে - এখন থেকে উপনিবেশবাসীদের অধিকার ঠিক করবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এই ঘোষণা অনুযায়ী উপনিবেশবাসীদের উপর বিভিন্ন কর চাপানো হতে থাকে। এর বিরুদ্ধে উপনিবেশবাসীরা ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করে যা লর্ড অ্যাকটন এর মতে ছিল '' আমেরিকার বিপ্লব। '' এই বিপ্লবের কারণগুলি নিম্নরূপ :- 


১. ধর্মীয় বিদ্বেষ :- 
ইংল্যান্ডের Stuart রাজাদের ধর্মীয় অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে যে ইংরেজরা মাতৃভূমি ছেড়ে আমেরিকার উপনিবেশগুলোতে এসেছিল , তাদের মধ্যে অনেকেই পিউরিটান ধর্মাবলম্বী ইংরেজের বংশধর। বংশপরম্পরায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই পিউরিটানদের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত ছিল। তারা কোনোমতেই ব্রিটেনের রাজার সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে রাজি ছিল না। 

২. জাতীয়তাবোধের উন্মেষ :- 
কয়েক প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পাশাপাশি বসবাস করে , একই গির্জায় উপাসনা করে উপনিবেশবাদের মধ্যে এক ঐক্যবোধ গড়ে উঠেছিল। তারা অনুভব করেছিল ব্রিটিশদের থেকে তাদের অস্তিত্ব আলাদা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকা এবং আমেরিকাতে নিজেদের অস্তিত্ব সুরক্ষিত থাকায় তারা আমেরিকার জাতীয় চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ে। এছাড়াও টম পেইন , টমাস জেফারসন , মিল্টন , মন্তেস্কু - প্রমুখের দার্শনিক ভাবনায় প্রভাবিত হওয়ায় উপনিবেশবাদের মনে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ সহজ হয়েছিল।  

৩. সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের প্রভাব :- 
সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ( ১৭৫৬ - ৬৩ খ্রিস্টাব্দ ) ফ্রান্সে পরাজিত হওয়ায় উত্তর আমেরিকার ফরাসি উপনিবেশ কানাডা ইংল্যান্ডের দখলে আসে। ফলে উপনিবেশবাদীদের মন থেকে ফরাসি ভীতি দূর হয়।  তারা একজোট হয়ে স্বাধীনতা লাভের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক এডমন্ড রাইটের মতে , ফরাসি ভীতি দূর হওয়ায় আমেরিকার বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে। 


৪. নেভিগেশন আইন :- 
Stuart রাজা দ্বিতীয় চার্লসের আমলে পাস করানো এ আইনে ( ১৬৬০ ) বলা হয় - 
(i) আমেরিকাতে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা গড়ে তোলা যাবেনা। 
(ii) আমেরিকার তেরোটি উপনিবেশে উৎপাদিত সামগ্রী - যথা - নীল , চিনি , তুলো ,তামাক ইত্যাদি ইংল্যান্ডের জাহাজের মাধ্যমে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডেই রপ্তানি করা যাবে। 
(iii) ইংল্যান্ডজাত সমস্ত পণ্য সামগ্রীও ইংল্যান্ডের জাহাজের মাধ্যমে আমেরিকার ১৩ টি উপনিবেশে আসবে। 
(iv) উপনিবেশগুলিতে তুলোজাত কোনো দ্রব্যাদি প্রস্তুত করা চলবেনা। 

৫. সহায়তার পরোয়ানা :- 
সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ইংল্যান্ডের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় জাতীয় ঋণ অত্যধিক বেড়ে যায়। এই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় উপনিবেশবাসীদের কাছ থেকেই আদায় করার নীতি নেয় ব্রিটিশরা। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী লর্ড গ্রেনভিল চোরাচালান বন্ধের জন্য ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তার পরোয়ানা নামক এক আইন পাশ করেন ( ১৭৬৩ ) ।  এই আইনের বলে কোনোরকম আগাম সতর্ক না করে উপনিবেশবাসীদের ঘর বাড়ি তল্লাশি চালানো হত। 

৬. চিনি আইন ( ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ ) :- 
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গ্রেনভিল সুগার অ্যাক্ট বা চিনি আইন জারি করেন। এতদিন ধরে উপনিবেশবাসীরা সস্তায় ফরাসি উপনিবেশ কানাডা থেকে যে চিনি ও ঝোলাগুড় আমদানি করত , সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ জয়ের ফলে কানাডা ব্রিটিশদের দখলে আসায় এই আমদানি দ্রব্যের ওপর করের হার ২.৫ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এর পরোক্ষ প্রভাবে আমেরিকায় মদের দাম বেড়ে যায় , ফলে উপনিবেশবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 

৭. স্ট্যাম্প অ্যাক্ট  ( ১৭৬৫ ) :- 
উপনিবেশগুলোতে মোতায়ন করা ১০ হাজার ব্রিটিশ সেনার মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ তোলার লক্ষ্যে গ্রেনভিল মন্ত্রিসভা স্ট্যাম্প অ্যাক্ট জারি করে। এই আইনে বলা হয় - আমেরিকার সমস্ত দলিলপত্র ও  লাইসেন্স - এ ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কেনা স্ট্যাম্প লাগাতে হবে , নতুবা তা আইনানুগ হবেনা।  এই কালা আইনের বিরুদ্ধে বোস্টনের আইনজীবী জেমস ওটিস বলেন - যেহেতু ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আমেরিকার কোনো প্রতিনিধি নেই , তাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ধার্য করা কোনো কর দিতে আমেরিকানরা বাধ্য নয়। 

৮. ঘোষণার আইন ( ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দ ) :- 
পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রকিংহ্যাম স্ট্যাম্প আইন প্রত্যাহার করে নেন। রকিংহ্যাম মন্ত্রিসভার রাজস্ব মন্ত্রী চার্লস টাউনসেন্ট জারি করেন ঘোষণা আইন। এই আইনে বলা হয় উপনিবেশবাসীদের উপর কর ধার্যের অধিকার রয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের। এই আইন অনুসারে আমেরিকার উপনিবেশগুলিতে  আমদানি করা চা , চিনি ও কাঁচের উপর কর চাপানো হয়। এই ঘোষণার আইনের বিরুদ্ধে উপনিবেশবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। 

৯. বোস্টন টি পার্টি :- 
আমেরিকার ১৩ টি উপনিবেশ জুড়ে বিভিন্ন করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সমস্ত কর প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু উপনিবেশবাসীদের ওপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের যে কর চাপানোর অধিকার রয়েছে তা বোঝানোর জন্যই তিনি শুধুমাত্র চায়ের ওপর পাউন্ড প্রতি ৩ পেনি কর বহাল রাখেন। এর প্রতিবাদস্বরুপ স্যামুয়েল অ্যাডামসের নির্দেশে বেশ কিছু উপনিবেশবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ছদ্মবেশে একরাতে ( ১৬ ই ডিসেম্বর ১৭৭৩ ) ডার্টমাউথ নামক জাহাজে উঠে ৩৪২ পেটি চা সমুদ্রের জলে ফেলে দেয়। এই ঘটনা বোস্টন টি পার্টি নামে পরিচিত। এই ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার বোস্টন বন্দর বন্ধ করে দেয় ও বিভিন্ন দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে যা স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি গড়ে দেয়। 

১০. স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র :- 
ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার উপনিবেশগুলি ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। জর্জিয়া ছাড়া আমেরিকার ১২ টি উপনিবেশের ৫১ জন প্রতিনিধি ফিলাডেলফিয়া শহরে এক অধিবেশনে মিলিত হন ( ৫ ই সেপ্টেম্বর , ১৭৭৪ ) । এই অধিবেশনেই ইংল্যান্ড রাজ তৃতীয় জর্জ - এর কাছে আমেরিকাবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকারের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু তৃতীয় জর্জের কাছে উপনিবেশবাসীদের সমস্ত আবেদন ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ সৈন্যরা বোস্টনের কাছে লেক্সিংটন ও কনকর্ড নামক জায়গায় গুলি চালানোর ফলে বিদ্রোহের আগুন তীব্রতর হয়ে ওঠে। উপনিবেশবাসীরা জর্জ ওয়াশিংটনকে তাদের সেনাপতি নির্বাচিত করে টমাস জেফারসন রচিত ঘোষনাপত্রের মাধ্যমে ৪ ই জুলাই ১৭৭৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করল। অবশেষে ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশ আমেরিকার উপনিবেশবাসীদের স্বাধীনতা মেনে নেয়। 

উপসংহার :- 
আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে উপনিবেশবাসীদের সঙ্গে হল্যান্ড , ফ্রান্স ও স্পেন যোগ দিয়েছিল। ব্রিটিশ সেনাপতি কর্নওয়ালিসের আত্মসমর্পণে ও টমাস জেফারসন , বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন , আলেকজান্ডার হ্যামিলটন , জন অ্যাডামস - প্রমুখের সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে আমেরিকাবাসী স্বাধীনতার সূর্যোদয়  প্রত্যক্ষ করল। স্বাধীন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন জাতির জনক ওয়াশিংটন। 



You May Also Like

0 comments