Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর। 




ঐতিহাসিক বস্তুবাদ :- 


মার্কস সমাজের ঐতিহাসিক বিবর্তনের সূত্র ধরে সমাজে দ্বন্দ্বের অবস্থান এবং তার ফলে সামাজিক পরিবর্তনের বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি ঐতিহাসিক বস্তুবাদ নামে পরিচিত। মার্কসের মতে , ইতিহাসের কোনো ঘটনা পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয় , তাদের মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র বর্তমান। প্রতিটি ঘটনা এবং তার প্রতিক্রিয়া সমাজে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে। যার ফলে সমাজে সাধিত হয় পরিবর্তন। 

মার্কস সমাজ ও সামাজিক পরিবর্তনের মূল আধার হিসাবে উৎপাদন ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেছেন। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যা যা কিছু প্রয়োজন তার কিছুটা মানুষ প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে এবং বাকীটা উৎপাদন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা পাল্টেছে এবং তার সঙ্গে পাল্টেছে উৎপাদন ব্যবস্থা। মার্কস এই উৎপাদন ব্যবস্থাকেই সমাজ পরিবর্তনের মূল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। অর্থনীতি ও উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত থাকে - রাজনীতি , সংস্কৃতি , শিল্প - সাহিত্য , শিক্ষা - ইত্যাদি সবকিছুই। মার্কসবাদীরা এই পরিবর্তনশীল ইতিহাস ও বস্তুবাদকে সমাজ পরিবর্তনের মূল প্রতিপাদ্য হিসাবে বিবেচনা করেছেন - এই দৃষ্টিভঙ্গিই ঐতিহাসিক বস্তুবাদ নামে পরিচিত। 

উৎপাদিকা শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্ক :- 

মার্কস উৎপাদনের দুটি দিক চিহ্নিত করেছেন - একটি হল উৎপাদিকা শক্তি (forces of production) ও অপরটি হল উৎপাদন সম্পর্ক (relation of production)। উৎপাদন শক্তি হল উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক এবং তাদের শ্রম ক্ষমতা , মূলধন ও বিভিন্ন যন্ত্র , কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি। অন্যদিকে উৎপাদন সম্পর্ক হল - উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানুষে মানুষে ও শ্রেণীতে শ্রেণীতে পারস্পরিক সম্পর্ক। 

মার্কস বলেছেন , উৎপাদিকা শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের পারস্পরিক সঙ্গতির ভিত্তিতেই উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গতি বিনষ্ট হয়। ফলে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে ওঠে। তাই মার্কস উৎপাদন ব্যবস্থাকেই সমাজ পরিবর্তনের মূল ভিত হিসাবে উল্লেখ  করেছেন।    

সমাজের ভিত ও উপরিকাঠামো :- 

মার্কস মনে করেন , অর্থনীতি ও উৎপাদন ব্যবস্থা হল সমাজের ভিত বা সবকিছুর মূল। সমাজের অন্যান্য উপাদানগুলি - যেমন - রাজনীতি , শিক্ষা , শিল্প - সংস্কৃতি , সাহিত্য - ইত্যাদি সবকিছু অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থনৈতিক  ব্যবস্থার পরিবর্তন হলে তার উপরিকাঠামো অর্থাৎ অন্যান্য সবকিছুর পরিবর্তন সাধিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ঐতিহাসিক বস্তুবাদের নিরিখে উৎপাদনের বৈশিষ্ট :- 


(ক ) উৎপাদনে গতিশীলতা : স্তালিনের মতে , মানুষের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন ব্যবস্থা সদা পরিবর্তনশীল। উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সূত্র ধরে সমগ্র রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাতে পরিবর্তন সাধিত হয়। 

(খ ) উৎপাদন শক্তির সচলতা : উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক এবং তাদের শ্রম ক্ষমতা , মূলধন ও বিভিন্ন যন্ত্র , কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি হল উৎপাদন শক্তি। উৎপাদনে গতিশীলতা আনে উৎপাদন শক্তি। তাই উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে ও সেই পরিবর্তন অব্যাহত রাখতে উৎপাদন শক্তিকেও সচলতা বজায় রাখতে হয়। 

(গ ) উৎপাদন শক্তির বৈপ্লবিক প্রকৃতি : মার্কস বলেছেন সমাজে উদ্ভুত বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতির সাপেক্ষে উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। উৎপাদন সম্পর্ক যখন উৎপাদিকা শক্তির সহায়ক না হয়ে বিরোধী হয়ে ওঠে তখন উৎপাদন শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক বিপ্লবের সূচনা ঘটায়। 

(ঘ ) শ্রেণীর উদ্ভব : উৎপাদন ব্যবস্থার হাত ধরে সমাজে শ্রেণিভেদের উদ্ভব ঘটে। মার্কস মূলতঃ দুই ধরণের শ্রেণীর কথা বলেছেন। যেমন সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ভূমিদাস ও ভূস্বামী শ্রেণী এবং তার পরবর্তীকালে আধুনিক শিল্প সমাজে মালিক ও শ্রমিক শ্রেণী। একদল সর্বদা নিজ অধিকার হতে বঞ্চিত এবং অপর দল সর্বদা সুবিধাভোগী শ্রেণী হিসাবে সমাজের সকল প্রকার সুবিধা ভোগ করে। 

(ঙ ) পুরাতন উৎপাদন ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে উৎপাদন শক্তির বিকাশ : সমাজে উৎপাদন শক্তির বিকাশ ঘটে পুরাতন উৎপাদন ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে। পুরাতন ব্যবস্থার সঙ্গে ক্রমান্বয়ে যুক্ত হয় আধুনিক উদ্ভাবন ও নিত্য নতুন প্রযুক্তি। মানুষের চাহিদা নতুন নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করে। পুরাতন সমাজে প্রচলিত দ্বন্দ্ব , শ্রেণীবৈষম্য ও শ্রেণীশোষণ বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করে। 

এইভাবে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মাধ্যমে মার্কস দেখিয়েছেন ঐতিহাসিকভাবে  সমাজের বিবর্তন মূলতঃ উৎপাদন  ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফসল। উৎপাদন ব্যবস্থা সমাজের বস্তুবাদী সকল উপাদানের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং এর ফলে গড়ে ওঠে শ্রেণীদ্বন্দ্ব - যা কালক্রমে বিপ্লবের রূপ নিয়ে সমাজকে পরিবর্তন করে। 

ঐতিহাসিক বস্তুবাদের সীমাবদ্ধতা / সমালোচনা :- 


বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের সমালোচনা করা হয়। যেমন - 

(ক ) মার্কস অর্থনীতিকে সমাজের একমাত্র একক হিসাবে গণ্য করেছেন। কিন্তু সমাজের অন্যান্য সাংস্কৃতিক , ভাষাগত , ধর্ম , রাজনীতি - ইত্যাদি উপাদান গুলিও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা , ইতিহাস পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র অর্থনীতি একমাত্র কারণ হিসাবে কাজ করেনা। যেমন ভারতে মুসলিম আক্রমণ বা কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন - ইত্যাদি বিষয়গুলির সঙ্গে অর্থনীতির তুলনায় ধর্মীয় কারণ অনেক বেশি দায়ী ছিল। 

(খ ) কাঠামো ও উপরিকাঠামো তত্ত্বের সমালোচনা : মার্কস ঐতিহাসিক বস্তুবাদের আলোচনায় অর্থনীতিকে সমাজের কাঠামো এবং অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে সমাজের উপরিকাঠামো হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সমালোচকেরা মনে করেন - এই ধারণা সর্বাংশে সঠিক নয়। কেননা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সমাজকে প্রভাবিত করে ঠিকই , কিন্তু সমাজও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। 

(গ ) অর্থনীতি  সমাজের একমাত্র নিয়ন্ত্রক নয় : মার্কস একমাত্র অর্থনৈতিকভাবে বলশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সমাজর মূল নিয়ন্ত্রক বলে দাবী করেছেন। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে অর্থনীতি সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন ধারণা সঠিক নয়। কেননা মধ্যযুগে পোপের সর্বময় ক্ষমতার সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক ছিল নগন্য। এছাড়াও আধুনিক বিশ্বের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর ঠান্ডা লড়াই ছিল কেবলমাত্র আদর্শগত সংঘাত , সেখানে অর্থনৈতিক কোনো প্রভাব ছিল না। 

(ঘ ) পরিবর্তন সম্পর্কে  অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা : সমালোচকদের মার্কস সামাজিক ও অর্থনৈতিক উপাদানগুলির পরিবর্তনের কথা বললেও কীভাবে অর্থনৈতিক উপাদানগুলি সামাজিক উপাদানগুলির পরিবর্তন ঘটায় - তার  কোনো রূপরেখা মার্কস প্রদান করেননি। তাই কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে অসম্পূর্ন বলে দাবী করেন। 

পরিশেষে বলা যায় যে , ঐতিহাসিক বস্তুবাদের বিরুদ্ধে সমালোচকেরা যেসকল অভিযোগ এনেছেন তা সত্য নয়। কেননা , প্রথমতঃ - আদিম সমাজ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে যেসকল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে - তত্ত্বগতভাবে বিচার করলে দেখা যাবে প্রতিটি পরিবর্তনের জন্য অর্থনীতি তার প্রভাব বিস্তার করে।      
দ্বিতীয়তঃ - মার্কস এবং এঙ্গেলস কখনোই অর্থনীতিকে সমাজের একমাত্র চালিকাশক্তি বলেননি। তাঁরা অন্যান্য উপাদানগুলিরও গুরুত্ব স্বীকার করেছেন এবং অর্থনীতিকে মূল উপাদান বলেছেন।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মার্কসবাদের মূল সূত্রগুলি আলোচনা কর। 

মার্কসবাদের মৌলিক উপাদানগুলি কী কী ? আলোচনা কর। 




মার্কসবাদের মূল সূত্র / মৌলিক উপাদান :-


মার্কসবাদের মূল সূত্র বা মৌলিক উপাদানগুলি হল - 
A. দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ 
B. ঐতিহাসিক বস্তুবাদ 
C. উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব 
D. শ্রেণিসংগ্রাম 
E. রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব 
F. বিপ্লব সম্পর্কিত তত্ত্ব। 

A. দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ :- 

মার্কসবাদীরা মনে করেন জগৎ দ্বন্দ্ব এবং বস্তুর সমাহার। সমাজের ঘটনাপ্রবাহ , সমাজ বিবর্তন সবকিছুই হল দ্বন্দ্বমূলক এবং বস্তুজগতের ব্যাখ্যা হল বস্তুমূলক। তাই দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হল দ্বন্দ্ব ও বস্তুর সমষ্টি। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকে দুটি ভাগে আলোচনা করা যেতে পারে - দার্শনিক দিক ও পদ্ধতিগত দিক। 

দার্শনিক দিক : দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের দার্শনিক দিক জগৎকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করে। এক্ষেত্রে মার্কসবাদীরা কার্য - কারণ তত্ত্বে বিশ্বাসী। তাঁরা মনে করেন প্রকৃতি বা সমাজের যেকোনো ঘটনার পেছনে নির্দিষ্ট কারণ দায়ী থাকে। আবার , কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রাণী ব্যতীত জগৎ সংসারের সবকিছুই মন - নিরপেক্ষ এবং মানুষ এই মন - নিরপেক্ষ বস্তু জগতের সকল তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম। 

পদ্ধতিগত দিক : পরিবেশ ও মানব সমাজের পরিবর্তন ও বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার জন্য মার্কসবাদীরা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্ব প্রয়োগ করেন। এই পদ্ধতি অনুসারে মার্কসবাদীরা মনে করেন প্রতিটি বস্তু ও মানুষের জন্ম , প্রসার ও ধ্বংস নিশ্চিত ; তাই কোনোকিছুই স্থিতিশীল নয়। বিবর্তন ও দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে সবকিছুরই পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয় এবং এই পরিবর্তনের মূল কারণ হল অন্তর্দ্বন্দ্ব। তাই মার্কসবাদের আলোচনা এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

B. ঐতিহাসিক বস্তুবাদ :- 

ঐতিহাসিক বস্তুবাদ  সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সমাজের অন্যতম কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে। মার্কসবাদীরা মনে করেন , অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে রাজনীতি , সংস্কৃতি , শিল্প - সাহিত্য , আইন ও বিচার , ধর্ম - যাবতীয় সবকিছুই। 

মার্কসবাদীরা মনে করেন সমাজ পরিবর্তনের মূল কারণ হল - উৎপাদন শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্কের দ্বন্দ্ব। আদিম সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু ক্রমে সমাজে ব্যক্তি মালিকানার উদ্ভব ঘটে , সামন্ততান্ত্রিক যুগ শুরু হয় এবং শ্রেণী শোষণের সূচনা হয়। এরপর পুঁজিবাদী সমাজে মালিক ও শ্রমিকের দ্বন্দ্ব সমাজ পরিবর্তনের মূল উপাদান হিসাবে কাজ করে। এইভাবে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের সাহায্যে মার্কসবাদীরা দেখিয়েছেন  সমাজ পরিবর্তনের মূল উপাদান হল দ্বন্দ্ব। 

C. উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব :-

উদ্বৃত্ত সংক্রান্ত বিষয়টির  সূচনা ঘটে সমাজে ব্যক্তি মালিকানার সূচনার পর থেকে। উদ্বৃত্ত মূল্যের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ এবং পরবর্তীকালে পুঁজিবাদী সমাজে শ্রেণী শোষণ চলতে থাকে। কৃষক ও শ্রমিকেরা যা উৎপাদন করে তাতে তাঁদের কোনো অধিকার থাকেনা ; তাদেরকে সামান্য কিছু মজুরি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। অন্যদিকে উদ্বৃত্ত পণ্যের মুনাফা সম্পূর্ণরূপে ভোগ করে মালিক সমাজ। একদিকে মালিক শ্রেণী মুনাফার পাহাড়ে বসে থাকে এবং অন্যদিকে কৃষক ও শ্রমিক থাকে সর্বদা বঞ্চিত। 
এইভাবে পুঁজিপতি ও মালিকের  বিরুদ্ধে কৃষক ও শ্রমিকের ক্ষোভ জন্মে এবং সমাজে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এই দ্বন্দ্বের ফলে ক্রমশঃ সমাজে পরিবর্তন সাধিত হয়।   

D. শ্রেণিসংগ্রাম :-

শ্রেণী বলতে লেনিন বুঝিয়েছেন একটি নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় পৃথক পৃথক অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ। মার্কসবাদের শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বের মূল বিষয় হল - সুবিধাভোগী ও সর্বহারা শ্রেণীর একই আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় পৃথক পৃথক অবস্থান। 

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো গ্রন্থে মার্কস - এঙ্গেলস দাবী করেছেন - আজ পর্যন্ত যতগুলি সমাজ দেখা গেছে সেই সকল সমাজের ইতিহাস হল শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে সমাজ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ; এরপর পুঁজিবাদী সমাজে মালিকের হাতে শ্রমিক শোষিত হতে থাকে। ফলে উভয় শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্বের উদ্ভব ঘটে যা জন্ম দেয় শ্রেণী সংগ্রামের। পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় , সমাজের প্রতিটি স্তরে যা পরিবর্তন এসেছে - তার মূলে আছে শ্রেণী সংগ্রাম। 

মার্কসবাদীরা মনে করেন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে যেসকল শ্রেণিসংগ্রাম সংগঠিত হয় তার দ্বারা সম্পূর্ণভাবে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কেননা , এই ধরণের আন্দোলনকে উৎখাৎ করতে মালিক শ্রেণী বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে পারে। তাই মার্কসবাদীরা শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক শ্রেণীসংগ্রামের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

E. রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব :- 

মার্কসবাদীদের মতে , রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে নির্দিষ্ট কার্য - কারণের ভিত্তিতে। মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রকে মূলতঃ বলপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে মনে করেন। এক্ষেত্রে শাসক শ্রেণী শোষিতের উপর সর্বদা বলপ্রয়োগ করে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে। এ প্রসঙ্গে এঙ্গেলস বলেছেন - রাষ্ট্র হল একটি সর্বাধিক শক্তিশালী সংগঠন যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভুত্ব বিস্তার করে কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করে। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ থেকে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ - সর্বত্রই দেখা যায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে হাতিয়ার করে সুবিধাভোগী ও মালিক শ্রেণীর প্রতিনিধিরা বঞ্চিত ও সর্বহারারদের শোষণ করে। 

তাই মার্কসবাদীদের মতে , সমাজে শোষণের অবসান ঘটাতে গেলে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে শ্রমিক শ্রেণীর ঐকবদ্ধ বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ সরাসরি প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। পুঁজিবাদী ও বুর্জোয়া রাষ্ট্রের অবসান ঘটে প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বহারার একনায়কতন্ত্র। 

মার্কসবাদীরা বলেন , প্রকৃত সাম্যবাদী সমাজে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে সকলে শ্রেণী শোষণের কোনো অবকাশ থাকবে না। তার ফলে শ্রেণী শোষণের যন্ত্র হিসাবে রাষ্ট্রের অবলুপ্তি ঘটবে। 

F. বিপ্লব সম্পর্কিত তত্ত্ব :-

সামাজিক ক্ষেত্রে বিপ্লব এমন একটি প্রক্রিয়া যার ফলে পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার অবসান ঘটে এবং নতুন সমাজের সূচনা হয়। বিপ্লবের কারণ হিসাবে মার্কসবাদীরা উৎপাদন - শক্তির সঙ্গে উৎপাদন - সম্পর্কের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন। লেনিন বিপ্লবের শর্ত হিসাবে Objective ও Subjective এই দুই শর্তের উল্লেখ করেছেন। মার্কস বিপ্লবের পূর্বে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির গুরুত্বের কথা বলেছেন। মার্কসের মতে , এই বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সংগঠিত হয় সাধারণত তিনটি কারণে - (ক ) সমাজে সমস্যার চূড়ান্ত আত্মপ্রকাশ (খ) সমাজে দারিদ্রতা , বেকারত্ব , অশিক্ষা চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে এবং (গ ) উক্ত পরিস্থিতির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সমাজ পাল্টে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী হবে। 

অন্যদিকে Subjective বা বিষয়ীগত অবস্থা হল - জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা , বিপ্লবী চেতনা , গণশক্তির বিকাশ , নেতৃত্ব প্রদানকারী গণসংগঠনের উপস্থিতি। লেনিন বলেছেন - বিপ্লবকে সার্থক করে তুলতে হলে বিষয়গত পরিস্থিতির সঙ্গে বিষয়ীগত পরিবেশের যথার্থ মেলবন্ধন প্রয়োজন। 

আবার প্রলেতারিয়েত ও সর্বহারারদের বিপ্লবকে ধ্বংস করে দেবার জন্য শাসক ও সুবিধাভোগীরা সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করবে ; রাষ্ট্রশক্তিকে প্রয়োগ করে তারা বিপ্লব দমন করতে চাইবে। তাই মার্কস মনে করেন সংগঠিত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছাড়া সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। 

পরিশেষে বলা যায় , মার্কসবাদের সমালোচক সাধারণতঃ বুর্জোয়া , পুঁজিবাদের সমর্থক দক্ষিণপন্থীরা। কিন্তু পৃথিবীর সর্বত্র আজও শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক , শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক , সর্বহারা ও সুবিধাভোগীর সম্পর্ক - ইত্যাদি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মার্কসবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক সময়কালেও মার্কসের প্রাসঙ্গিকতা তাই বিশ্বজুড়ে অনুভূত হয়। মার্কসবাদ শোষিত মানুষকে বিপ্লব ও সাম্যবাদী সমাজের যে পথ দেখিয়েছেন -তা আজও শোষিত ও সর্বহারাদের মুক্তির পথ প্রদর্শন করে।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী। 




আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী।  


১. নীতি প্রণয়ন :- 
আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী হল প্রশাসনিক বিষয়ে নীতি প্রণয়ন। নীতি প্রণয়নের সময় শাসন বিভাগকে জনস্বার্থ , দলীয় স্বার্থ এবং সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হয়। শাসন বিভাগের সঠিক এবং বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়নের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের স্বার্থ এবং শাসক দলের  অস্তিত্ব। 

২. প্রশাসনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ :- 
আধুনিক জটিল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসন বিভাগকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও জনকল্যাণমূলক কাজ ও বিভিন্ন কর্মসূচি বিষয়েও শাসনবিভাগকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এই সিদ্ধান্তগুলির উপর রাষ্ট্রীয় স্বার্থ , দলের জনপ্রিয়তা এবং সর্বোপরি ভোট রাজনীতিতে সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। 

৩. কর্মসূচী রূপায়ণ :- 
শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই শাসন বিভাগের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না ; সিদ্ধান্তগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্বও শাসন বিভাগকে গ্রহণ করতে হয়। প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচী সঠিকভাবে রূপায়িত হলে শাসনবিভাগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় , সমাজে রাজনৈতিকভাবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে এবং জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ হয়। 

৪. দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা :- 
দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা করা হল শাসন বিভাগের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দৈনন্দিন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি হল - জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী রূপায়ণ , দোষী ব্যক্তিকে আদালতের নিকট উপস্থাপন , অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা , জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত পরিস্থিতির মোকাবিলা করা , সরকারি বিভিন্ন দপ্তরগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন , সরকারি কর্মসূচির সুফলগুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া , জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. নিয়োগ ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
সকল উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারী যেমন - নির্বাচন কমিশনার , অ্যাটর্নি জেনারেল , অডিটর জেনারেল , সামরিক বাহিনীর প্রধান - প্রমুখের  পদ ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত কার্যাবলী শাসন বিভাগের হাতে ন্যাস্ত থাকে। এছাড়াও শাসন বিভাগ রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরগুলির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ করে। 

৬. আইন সংক্রান্ত কার্যাবলী :- 
আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা , স্থগিত রাখা বা আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসন বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। যেমন , ভারতে আইনসভা কর্তৃক আইন প্রণীত হয় ঠিকই ; কিন্তু রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারেনা। এছাড়াও আইনসভা যেসকল আইন প্রণয়ন করে তাতে শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। 

৭. পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা :- 
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বা শান্তি স্থাপন , বিভিন্ন চুক্তি সাক্ষর , বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্ধারণ , কূটনীতি পরিচালনা , আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিতে অংশগ্রহণ , কূটনৈতিক প্রতিনিধি গ্রহণ ও প্রেরণ - ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব শাসন বিভাগের উপর ন্যাস্ত থাকে। 

৮. সামরিক কার্যাবলী :-
দেশের সর্বভৌমিকতা রক্ষা করা হল শাসন বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় সর্বভৌমিকতা ও অখন্ডতা রক্ষার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে শাসনবিভাগের হাতে ন্যাস্ত। সৈন্য বাহিনীর গঠন ও পরিচালনা , যুদ্ধ সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ ও পরিচালনা , অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে শত্রুর গতিবিধির উপর নজর রাখা , প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জোট গঠন করা বা জোটের অংশীদার হওয়া - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সামরিক কার্যাবলীর ভার শাসন বিভাগের হাতে ন্যাস্ত থাকে। 

৯. রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পরিচালনা :- 
রাষ্ট্রের অর্থনীতি পরিচালনার সুম্পূর্ণ দায়িত্ব শাসন বিভাগের। রাষ্ট্রীয় প্রগতি ও গতিশীলতা বহুলাংশে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর। বিভিন্ন কর ও রাজস্ব সংগ্রহ , নতুন কর প্রবর্তন , সরকারি বাজেট প্রস্তুত করা , প্রগতিশীল অর্থিক নীতি প্রণয়ন , সরকারি ব্যয় - বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ , বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ - ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলী পরিচালনা করে শাসন বিভাগ। 

১০. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত কার্যাবলী :- 
রাষ্ট্রের সম্মুখে উদ্ভুত বিভিন্ন প্রকার জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ ও ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার বিশ্বের প্রতিটি শাসনবিভাগের হাতে ন্যাস্ত থাকে। যেমন ভারতের রাষ্ট্রপতি ৩৫২ , ৩৫৬ ও ৩৬০ নং ধারা অনুসারে যথাক্রমে জাতীয় জরুরি অবস্থা , অঙ্গরাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা এবং আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। 

পরিশেষে বলা যায় , উপরোক্ত কার্যাবলীগুলি ছাড়াও শাসনবিভাগকে অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে হয়। যেমন - জনস্বাস্থ্য , জনশিক্ষা , উচ্চশিক্ষার বিস্তার , শিল্প ও কৃষির উন্নয়ন , গ্রাম ও নগরোন্নয়ন , পঞ্চায়েৎ উন্নয়ন , নারী ও শিশুকল্যাণ , যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন , জনসংযোগ - ইত্যাদি।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কাকে বলে ? ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও। 




ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ :-


ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি অন্যতম উপাদান। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে আধুনিক গণতন্ত্র রক্ষার অন্যতম শর্ত হিসাবে বিবেচিত করা হয়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি হল - আইন , শাসন ও বিচার - সরকারের এই তিনটি মূল বিভাগের পূর্ণ স্বাতন্ত্রীকরণ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে সরকারের মূল তিনটি বিভাগ আইন , শাসন ও বিচার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং একটি বিভাগ অপর একটি বিভাগের কাজে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। 

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রধান প্রবক্তা মন্টেস্কু। এছাড়াও ইংরেজ দার্শনিক ব্ল্যাকস্টোন কেও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির একজন প্রবক্তা বলা যেতে পারে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত মন্টেস্কুর স্পিরিট অব দ্য লজ গ্রন্থে। মন্টেস্কু ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। 

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পক্ষে যুক্তি :- 


১. মন্টেস্কুর অভিমত :- 
মন্টেস্কুর মতে সরকারের তিনটি বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ একান্ত অপরিহার্য। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হলে কোনো একটি বিভাগ অপর একটি বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ফলে প্রতিটি বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। এছাড়া আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষমতা যদি একটি হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে তাহলে ক্ষমতার অপব্যবহার অবসম্ভাবী।    

২. ম্যাসিডনের অভিমত :- 
ম্যাসিডন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা। তাঁর মতে - আইন , শাসন ও বিচার - এই তিনটি বিভাগের ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ না করা হলে স্বৈরাচারের আত্মপ্রকাশ অনিবার্য। তাই ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ একান্ত অপরিহার্য। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. ব্ল্যাকস্টোনের অভিমত :- 
ইংরেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্ল্যাকস্টোন Commentaries on the Laws of England গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্ৰীকরণের পক্ষে বলেছেন - ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ একদিকে সরকারের বিভাগগুলির স্বাধীনতা বজায় রাখে এবং অন্যদিকে সরকারের বিভাগগুলির কর্মকুশলতা বৃদ্ধি করে। 

৪. স্বৈরাচার প্রতিরোধ :- 
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে সরকারের বিভাগগুলি একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা এবং তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে। ফলে যেকোনো একটি বিভাগের পক্ষে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দূর হয়  .

৫. দক্ষতা বৃদ্ধি :- 
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে সরকারের তিনটি বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। ফলে একদিকে সরকারের বিভাগগুলি যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে , অন্যদিকে বিভাগগুলির মধ্যে পরনির্ভরশীলতার মানসিকতা দূর হয়। এইভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বারা সরকারের তিনটি বিভাগের দক্ষতা ও কর্মকুশলতা বৃদ্ধি পায়। 

৬. বিভাগীয় স্বতন্ত্রতা :- 
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রতিটি বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে স্বতন্ত্র রাখে , ফলে একটি বিভাগ অপর একটি বিভাগের কাজে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। ফলে ক্ষমতা স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হলে - আইন , শাসন ও বিচার - এই তিনটি বিভাগের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণের বিপক্ষে যুক্তি  :- 


১. পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় :-
আধুনিক জটিল শাসন ব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়। বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকারের বিভাগগুলি পরিচালিত হয় পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে। যেমন মার্কিন শাসনব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গৃহীত হলেও মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। আবার ভারতের মত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাষ্ট্রপতি একই সঙ্গে আইনবিভাগ ও শাসন বিভাগের সদস্য এবং তিনি হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। তাই পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

২. পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ সমীচীন নয় :- 
সফলভাবে সরকারের বিভাগগুলি পরিচালনা করতে হলে দরকার বিভাগগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা। তাই জন স্টুয়ার্ট মিল , ল্যাস্কি - প্রমুখেরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পূর্নাঙ্গ প্রয়োগের বিপক্ষে মতামত পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হলে সরকারের বিভাগগুলির মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে বৈরিতা তৈরী হবে। 

৩. ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে উপযুক্ত নয় :- 
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে সরকারের তিনটি বিভাগ একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। কেননা, আইনবিভাগ যদি জনস্বার্থ বিরোধী আইন প্রবর্তন করে তাহলে সেই আইন প্রতিরোধের ক্ষমতা কারো থাকেনা। আবার শাসন বিভাগ স্বৈরাচারী হয়ে উঠলেও তাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো থাকেনা। তাই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কোনোভাবেই ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হতে পারেনা। 

৪. তিনটি বিভাগের ক্ষমতা বাস্তবে সমান নয় :- 
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে আইনবিভাগকে অন্য দুটি বিভাগ থেকে অধিক শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। কেননা , শাসন বিভাগকে আইননিকট দায়িত্বশীল থাকতে হয় আবার , বিচারবিভাগ আইনবিভাগের তৈরী আইন দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করে। তাই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসরণ করা হলেও গণতন্ত্র উপকৃত হয়না। 

৫. জৈব মতবাদসম্মত নয় :- 
ব্লুন্টসলি প্রমুখ জৈব মতবাদীরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচনা করেছেন। জৈব মতবাদের প্রবক্তারা মনে করেন রাষ্ট্র ও জীবদেহ একই বৈশিষ্টপূর্ণ। জীবদেহ থেকে যেমন অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলিকে বিচ্ছিন্ন করা যায়না তেমনিভাবে রাষ্ট্রের বিভাগগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা অলীক কল্পনামাত্র। 

৬. মার্কসবাদীদের সমালোচনা :-
মার্কসবাদীরাও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচনা করেছেন। মার্কসবাদীদের মতে রাষ্ট্র হল শ্রেণী শোষণের যন্ত্র। তাই এক্ষেত্রে সরকারের সবগুলি বিভাগই সুবিধাভোগী শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করতে সদা তৎপর থাকে। তাই প্রকৃত অর্থে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুসরণ অর্থহীন।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates