আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী।

by - August 04, 2025

আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী। 




আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী।  


১. নীতি প্রণয়ন :- 
আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী হল প্রশাসনিক বিষয়ে নীতি প্রণয়ন। নীতি প্রণয়নের সময় শাসন বিভাগকে জনস্বার্থ , দলীয় স্বার্থ এবং সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হয়। শাসন বিভাগের সঠিক এবং বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়নের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের স্বার্থ এবং শাসক দলের  অস্তিত্ব। 

২. প্রশাসনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ :- 
আধুনিক জটিল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসন বিভাগকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও জনকল্যাণমূলক কাজ ও বিভিন্ন কর্মসূচি বিষয়েও শাসনবিভাগকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এই সিদ্ধান্তগুলির উপর রাষ্ট্রীয় স্বার্থ , দলের জনপ্রিয়তা এবং সর্বোপরি ভোট রাজনীতিতে সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। 

৩. কর্মসূচী রূপায়ণ :- 
শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই শাসন বিভাগের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না ; সিদ্ধান্তগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্বও শাসন বিভাগকে গ্রহণ করতে হয়। প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচী সঠিকভাবে রূপায়িত হলে শাসনবিভাগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় , সমাজে রাজনৈতিকভাবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে এবং জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ হয়। 

৪. দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা :- 
দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা করা হল শাসন বিভাগের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দৈনন্দিন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি হল - জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী রূপায়ণ , দোষী ব্যক্তিকে আদালতের নিকট উপস্থাপন , অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা , জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত পরিস্থিতির মোকাবিলা করা , সরকারি বিভিন্ন দপ্তরগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন , সরকারি কর্মসূচির সুফলগুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া , জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা - ইত্যাদি। 


৫. নিয়োগ ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
সকল উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারী যেমন - নির্বাচন কমিশনার , অ্যাটর্নি জেনারেল , অডিটর জেনারেল , সামরিক বাহিনীর প্রধান - প্রমুখের  পদ ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত কার্যাবলী শাসন বিভাগের হাতে ন্যাস্ত থাকে। এছাড়াও শাসন বিভাগ রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরগুলির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ করে। 

৬. আইন সংক্রান্ত কার্যাবলী :- 
আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা , স্থগিত রাখা বা আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসন বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। যেমন , ভারতে আইনসভা কর্তৃক আইন প্রণীত হয় ঠিকই ; কিন্তু রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারেনা। এছাড়াও আইনসভা যেসকল আইন প্রণয়ন করে তাতে শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। 

৭. পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা :- 
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বা শান্তি স্থাপন , বিভিন্ন চুক্তি সাক্ষর , বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্ধারণ , কূটনীতি পরিচালনা , আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিতে অংশগ্রহণ , কূটনৈতিক প্রতিনিধি গ্রহণ ও প্রেরণ - ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব শাসন বিভাগের উপর ন্যাস্ত থাকে। 

৮. সামরিক কার্যাবলী :-
দেশের সর্বভৌমিকতা রক্ষা করা হল শাসন বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় সর্বভৌমিকতা ও অখন্ডতা রক্ষার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে শাসনবিভাগের হাতে ন্যাস্ত। সৈন্য বাহিনীর গঠন ও পরিচালনা , যুদ্ধ সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ ও পরিচালনা , অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে শত্রুর গতিবিধির উপর নজর রাখা , প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জোট গঠন করা বা জোটের অংশীদার হওয়া - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সামরিক কার্যাবলীর ভার শাসন বিভাগের হাতে ন্যাস্ত থাকে। 

৯. রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পরিচালনা :- 
রাষ্ট্রের অর্থনীতি পরিচালনার সুম্পূর্ণ দায়িত্ব শাসন বিভাগের। রাষ্ট্রীয় প্রগতি ও গতিশীলতা বহুলাংশে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর। বিভিন্ন কর ও রাজস্ব সংগ্রহ , নতুন কর প্রবর্তন , সরকারি বাজেট প্রস্তুত করা , প্রগতিশীল অর্থিক নীতি প্রণয়ন , সরকারি ব্যয় - বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ , বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ - ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলী পরিচালনা করে শাসন বিভাগ। 

১০. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত কার্যাবলী :- 
রাষ্ট্রের সম্মুখে উদ্ভুত বিভিন্ন প্রকার জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ ও ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার বিশ্বের প্রতিটি শাসনবিভাগের হাতে ন্যাস্ত থাকে। যেমন ভারতের রাষ্ট্রপতি ৩৫২ , ৩৫৬ ও ৩৬০ নং ধারা অনুসারে যথাক্রমে জাতীয় জরুরি অবস্থা , অঙ্গরাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা এবং আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। 

পরিশেষে বলা যায় , উপরোক্ত কার্যাবলীগুলি ছাড়াও শাসনবিভাগকে অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে হয়। যেমন - জনস্বাস্থ্য , জনশিক্ষা , উচ্চশিক্ষার বিস্তার , শিল্প ও কৃষির উন্নয়ন , গ্রাম ও নগরোন্নয়ন , পঞ্চায়েৎ উন্নয়ন , নারী ও শিশুকল্যাণ , যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন , জনসংযোগ - ইত্যাদি।    

You May Also Like

0 comments