মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে সুলতানি শাসকদের ভূমিকা।

by - June 30, 2022

মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে সুলতানি শাসকদের ভূমিকা। 

মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে দিল্লির সুলতানি শাসকদের অবদান। 

মোঙ্গল কারা ? মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে দিল্লির সুলতানি শাসকদের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলি আলোচনা কর। 




মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে সুলতানি শাসকদের ভূমিকা :- 


মোঙ্গলরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার এক যাযাবর সম্প্রদায়ের অন্তর্গত যোদ্ধা। আমির খসরু মোঙ্গলদের নৃশংস যোদ্ধা ও যাযাবর বলে উল্লেখ করেছেন। মোঙ্গলরা ছিলেন প্রচন্ড সাহসী , রণনিপুণ , পারদর্শী যোদ্ধা। দিল্লির সুলতানি শাসনকালে ইলতুৎমিশের সময়কাল থেকে অজস্রবার মোঙ্গলরা ভারত আক্রমণ করেন। মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে দিল্লির সুলতানি শাসকগণ ভিন্ন ভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছিলেন।    


মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে ইলতুৎমিশের ভূমিকা :- 

১২২১ খ্রিস্টাব্দে ইলতুৎমিশের রাজত্বকালে দুর্ধর্ষ মোঙ্গল অধিপতি চেঙ্গিস খাঁ খারাজিম রাজ্য আক্রমণ করেন। ফলে খারাজিম রাজ্যের অধিপতি কাস্পিয়ান সাগর অভিমুখে পলায়ন করেন এবং যুবরাজ জালালউদ্দিন মাঙ্গবার্ণী পাঞ্জাবে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে চেঙ্গিস খাঁ সিন্ধু পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে পশ্চিম পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশের বিস্তীর্ন অঞ্চল ধ্বংস করেন। এই সময় অন্য কোনো পথ খোলা না থাকায় জালালউদ্দিন মাঙ্গবার্ণী ইলতুৎমিশের সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু ইলতুৎমিশ এই সময় তাঁকে আশ্রয় প্রদান করে তথা চেঙ্গিস খাঁর বিরাগভাজন হয়ে নিজের তথা দিল্লি সুলতানির বিপদ ডেকে আনার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই ইলতুৎমিশ জালালউদ্দিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইলতুৎমিশের বিচক্ষণতা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিতায় প্রসন্ন হয়ে চেঙ্গিস খাঁ ভারত ত্যাগ করেন। বলা বাহুল্য ইলতুৎমিশের এই রাজনৈতিক বিচক্ষণতার ফলে দিল্লি সুলতানি এক ভয়ানক বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায়। 

মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা :- 

১. বলবনের ভাতুষ্পুত্র দুর্ধর্ষ সেনাপতি শের খাঁ - কে সমগ্র সীমান্ত অঞ্চলে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। 
২. বিরাট অশ্বারোহী বাহিনী সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিযুক্ত হয়। প্রতিটি বাহিনীতে প্রায় আঠারো হাজার অশ্বারোহী সেনা ছিল। 
৩. সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বহু দুর্গ নির্মাণ করেন এবং সেগুলিতে সর্বদা সেনাবাহিনী নিযুক্ত থাকতো। 
৪. শের খাঁ - এর মৃত্যুর পর মোঙ্গলদের হাত থেকে সীমান্তের নিরাপত্তাবিধানের জন্য বলবন সীমান্ত অঞ্চলকে দুটি ভাগে ভাগ করেন - মুলতান ও দীপালপুর , সামানা অঞ্চল। মুলতান ও দীপালপুরের দায়িত্বে থাকে জ্যেষ্ঠ পুত্র সুলতান মহম্মদের হাতে এবং সামানা অঞ্চলের দায়িত্ব থাকে দ্বিতীয় পুত্র বঘরা খাঁ - এর হাতে।  
৫. ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলরা পুনরায় মুলতান আক্রমণ করে। সুলতান মহম্মদ মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হলেও মোঙ্গলদের প্রবল আক্রমণে অবশেষে সুলতান মহম্মদ নিহত হন। পুত্রের এই অকালমৃত্যু সহ্য করতে না পেরে বলবন ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। 


মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে আলাউদ্দিন খলজির ভূমিকা :- 

আলাউদ্দিনের রাজত্বকালে ১২৯৭ থেকে ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোঙ্গলরা প্রায় সাতবার ভারত আক্রমণ করেন। আলাউদ্দিন খলজি মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে একদিকে প্রতিরোধ নীতি ও অন্যদিকে আক্রমনাত্মক নীতি গ্রহণ করেন। 
১. রাজধানী সিরি - তে স্থানান্তর করে সসৈন্যে সেখানে অবস্থান করেন। 
২. উত্তর - পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য দীপালপুর ও সামানা অঞ্চলে দুর্গ নির্মাণ করে সেই অঞ্চলে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেন। 
৩. উত্তর - পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পিত হয় গাজি মালিক - এর উপর। ইনি পরবর্তীকালে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নামে পরিচিত হন। 
৪. উত্তর - পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের সমস্ত পুরোনো দুর্গগুলিকে সংস্কার করা হয় ও কিছু নতুন দুর্গ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি দুর্গে প্রচুর সংখ্যক সেনা মোতায়েন রাখা হয়। 
৫. দিল্লিতে একটি বিশেষ সৈন্য বাহিনী সর্বদা মোতায়েন রাখা হয়। 
৬. সমগ্র দিল্লিকে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত করা হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় সেনা শিবির স্থাপন করা হয়। 

মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের ভূমিকা :- 

১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজত্বকালে মোঙ্গলরা পুনরায় ভারত আক্রমণ করে। কিন্তু গিয়াসউদ্দিনের সেনাবাহিনীর প্রবল আক্রমণে মোঙ্গলবাহিনী পরাজিত হয় ও বিতাড়িত হয়। গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজত্বকালে মোঙ্গলরা আর ভারত আক্রমণ করেনি। 

মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে মহম্মদ বিন তুঘলকের ভূমিকা :- 

ইতিপূর্বে মহম্মদ বিন তুঘলক মোঙ্গল আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পেতে রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু , এরপরেই সুলতানের দিল্লিতে অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে মোঙ্গলরা তার্মাসিরিণের নেতৃত্বে ভারত আক্রমণ করে পাঞ্জাব , লাহোর ও মুলতান দখল করেন। এরপর তারা দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করেন। মহম্মদ বিন তুঘলক মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করার পরিবর্তে প্রচুর অর্থ প্রদানের মাধ্যমে মোঙ্গলদের হাত থেকে দিল্লি রক্ষা করেন।   


You May Also Like

0 comments