সুফিবাদের প্রভাব importance of sufism

by - August 12, 2021

সুফিবাদের প্রভাব 

সুফিবাদের গুরুত্ব 

সুফিবাদের ফলাফল 




ভারতীয় সমাজ ও জনজীবনে সুফিবাদ এক গভীর প্রভাব বিস্তার করে। 

১. সকলের নিকট জনপ্রিয়তা :- 
সুফিদের সরলতা , মানবতাবাদ , ভগবৎ প্রেম , নিরুপম চরিত্র , গভীর নীতিবোধ ও আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রা সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করে। তাই বিশেষ কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায় নয় - জাতি - ধর্ম - বর্ণ , ধনী - দরিদ্র , উচ্চ - নীচ , শিক্ষিত - অশিক্ষিত , হিন্দু - মুসলিম , নারী - পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কাছেই সুফিরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর ফলে হিন্দু - মুসলিম ধর্মীয় উত্তেজনা হ্রাস পায় এবং ধর্মীয় জীবন সরল ও সাবলীল হয়ে ওঠে।


২. সামাজিক সাম্য ও বিশ্বভাতৃত্বের আদর্শ প্রচার :- 
ইসলামের সামাজিক সাম্য ও বিশ্বভাতৃত্বের আদর্শ সুফিরা মেনে চলতেন। এই কারণে তথাকথিত নিম্নবর্ণের হিন্দু ও অস্পৃশ্যদের কাছেও সুফিবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

৩. ভ্রান্ত ও হীনপ্রথাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ :- 
সামাজিক সাম্য ও চারিত্রিক পবিত্রতায় বিশ্বাসী সুফিরা সুরাপান , জুয়াখেলা , ক্রীতদাসপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। সামাজিক এই হীনপ্রথাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোয় সুফিবাদ সাধারণ ভারতীয়দের নিকট জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। 

৪. হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ; নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী  :- হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের অন্তর্গত বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধেও সুফি মতাবলম্বীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন। মুসলিমদের বহুবিবাহ ও তালাক প্রথা , হিন্দুদের সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে তাঁরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাঁরা হিন্দু বিধবার পুনর্বিবাহ ও নারীর সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। 


৫. নৈতিকতাবোধ :- 
সুফি সাধকদের উচ্চমার্গের নৈতিকতাবোধ হিন্দু - মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের যুবসমাজের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে। 

৬. হিন্দি ভাষার বিকাশ :- 
হিন্দি ভাষা ও কাওয়ালি সংগীতের বিকাশে সুফিদের অবদান অবিস্মরণীয়। ইসলাম ধর্মে সংগীত বর্জনীয় হলেও সুফিরা মনে করতেন , সংগীতে পরমাত্মার সঙ্গলাভের আনন্দ পাওয়া যায়। কথোপকথনে তাঁরা হিন্দি ভাষা ব্যবহার করতেন এবং হিন্দি ভাষাতেই কবিতা রচনা করতেন। এর ফলে হিন্দি ভাষার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। 

৭. বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে অবদান :- 
কেবলমাত্র ধর্মচর্চার কেন্দ্র নয় - সুফিদের '' খানকা '' গুলি ছিল বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞান অর্জনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। অধিকাংশ খানকা - গুলিতে নিয়মিত বিদ্যালয় পরিচালনা করা হত। 

৮. ইসলামের ভারতীয়করণ :- 
সুফিদের প্রভাবে ইসলামের ভারতীয়করণ ঘটে। সুফি সন্তরা ভারতকে তাঁদের স্বদেশ ও ভারতবাসীদের তাঁদের স্বজন মনে করে ভারতবাসীদের সাথে অকৃত্রিম সম্পর্ক গড়ে তোলে। ক্রমে মুসলিম শাসকরাও সুফিদের এই ভারতীয়করণের আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হন। 

৯. ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মত :- 
সুফি আন্দোলনের প্রভাব ও তার চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসগণ একমত পোষণ করেন না। ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার মনে করেন , ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর সুফিদের প্রভাব নগন্য এবং ভারতীয় জনসমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ তাঁদের দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিল। তাঁর ভাষায় - The role of both medieval mysticism and sufism in the history of Indian culture is often exaggerated beyond all proportions. 

১০. ঐতিহাসিক এস এ রিজভি - র অভিমত : -
তবে এর বিপরীতে এস এ রিজভি মনে করেন যে , সুফিদের অবদান একেবারে নগন্য বা নেতিবাচক ছিল না। কেননা , প্রথমতঃ সুফিদের প্রভাব ক্ষণস্থায়ী ছিল না ; দীর্ঘদিন ধরে এর প্রভাব অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয়তঃ হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের রক্ষনশীলগোষ্ঠী পরস্পর বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করলেও হিন্দু ভক্তি আন্দোলনের মতোই সুফি ধর্মসংস্কার আন্দোলন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগসূত্র রচনায় সহায়ক হয়েছিল।     


You May Also Like

0 comments