মূল্যায়ন ও পরীক্ষার পার্থক্য। Difference between evaluation and examination.

by - July 21, 2022

মূল্যায়ন ও পরীক্ষার পার্থক্য। 

পরীক্ষা ও মূল্যায়নের পার্থক্য। 

Difference between evaluation and examination. (In Bengali).




মূল্যায়ন ও পরীক্ষার পার্থক্য :- 

পরীক্ষা ও মূল্যায়নকে বর্তমানে একই প্রত্যয়যুক্ত বলে মনে করা হলেও উভয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। মূল্যায়ন ও পরীক্ষার পার্থক্যগুলি হল -   

১. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য :- মূল্যায়নের উদ্দেশ্য ব্যাপক ও বহুমুখী। কিন্তু পরীক্ষার উদ্দেশ্য সংকীর্ণ ও একমুখী। কেননা , মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যক্তির বিভিন্ন অংশের পরিমাপ করা হয় ; কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক। 

২. প্রক্রিয়াগত পার্থক্য :- মূল্যায়ন একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকতার নীতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা হল মূল্যায়নের একটি অংশমাত্র। তাই পরীক্ষা একটি আংশিক প্রক্রিয়া।   

৩. পরিমাপের পরিধি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়নের পরিধি ব্যাপক। মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশ পরিমাপ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার পরিধি তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত। পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির শুধুমাত্র আংশিকভাবে বিষয়জ্ঞান পরিমাপ করা হয়। 

৪. শিক্ষার্থীর প্রাথমিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব প্রদান সংক্রান্ত পার্থক্য :- মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রাথমিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। যেহেতু মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সামগ্রিক , তাই এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক অভিজ্ঞতাগুলিকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা যেহেতু নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক , তাই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রাথমিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না। 


৫. পরিমাণগত ও গুণগত বিচারের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর পরিমাণগত ও গুণগত উভয় দিকেরই বিচার করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর পরিমাণগত জ্ঞানকে বিচার করা হয়। 

৬. ব্যক্তিত্বের পরিমাপের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির পুঁথিগত জ্ঞান ছাড়াও ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন অংশের পরিমাপ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিত্ব পরিমাপের বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পায়না। 

৭. কৌশলগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়ন একটি বা কয়েকটি কৌশলের সমষ্টি নয় , বিবিধ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। অন্যদিকে পরীক্ষা হল মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি কৌশলমাত্র। 

৮. কাঠিন্যের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- যেহেতু মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিবিধ কৌশল অবলম্বন করা হয় এবং ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সামগ্রিক বিচার করা হয় , তাই মূল্যায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া। কিন্তু , পরীক্ষা যেহেতু নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক ও একমুখী , তাই পরীক্ষা একটি সরল প্রক্রিয়া। 

৯. অভীক্ষার প্রয়োগ সংক্রান্ত পার্থক্য :- মূল্যায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এতে বিভিন্ন ধরণের অভীক্ষার প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একক পারদর্শিতার অভীক্ষা ব্যবহার করা হয়। 

১০. তথ্যগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর পৃথক বিচ্ছিন্ন তথ্যের কোনো গুরুত্ব নেই। এখানে ব্যক্তির সামগ্রিক তথ্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষার ক্ষেত্রে পাঠ্যবিষয়কেন্দ্রিক একক তথ্য প্রাধান্যলাভ করে। 

১১. ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এতে শিক্ষার্থীর ধারাবাহিকভাবে পরিমাপ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা একটি তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর তাৎক্ষণিক বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞান পরিমাপ করা হয়। 

১২. সময়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- যেহেতু মূল্যায়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এতে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক পরিমাপ করা হয় - তাই মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। কিন্তু , পরীক্ষা যেহেতু তাৎক্ষণিক , তাই এতে খুব কম সময় লাগে। 

১৩. জ্ঞানের পরিমাপগত পার্থক্য :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটির দ্বারা শিক্ষার্থীর বিভিন্ন জ্ঞান ও সামর্থ্যের পরিমাপ করা সম্ভব। কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র একমুখী , বিষয়কেন্দ্রিক ও তাৎক্ষণিক জ্ঞানের পরিমাপ করা যায়। 

১৪. অন্যান্য বিষয়ে পরিমাপের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা ছাড়াও শিক্ষক , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , পাঠক্রম , শিক্ষন পদ্ধতি - ইত্যাদি সকল কিছুর পরিমাপ করা যায়। কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর মূল্য বিচার করা হয়।  


You May Also Like

0 comments