নির্দেশনার প্রকারভেদ। বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনা।

by - July 14, 2022

নির্দেশনার প্রকারভেদ। বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনা। 

Different types of Guidance . ( In Bengali ) 




নির্দেশনার প্রকারভেদ। বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনা। 

ব্যক্তিকে জীবন সার্থক করে তুলতে বিভিন্ন প্রকার ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়। এই বিভিন্ন প্রকার ভূমিকার জন্য ব্যক্তিজীবনে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনার। নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি সমস্যামূলক পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করে তার সমাধানের জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তাই ব্যক্তিজীবনে নির্দেশনা বিভিন্ন প্রকারের। বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনাগুলি হল - 

১. শিক্ষামূলক নির্দেশনা : - 
শিক্ষা মানুষকে জীবনে অভিযোজন ঘটাতে সাহায্য করে। ব্যক্তি ও সমাজজীবনে উদ্ভুত বিভিন্ন সমস্যাগুলি শিক্ষার মাধ্যমে যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারে ও তার প্রতিকারের জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। বর্তমান সময়ে শিক্ষার পাঠক্রম ও শিক্ষা প্রযুক্তির উন্নতির ফলে তত্ত্ব ও তথ্যের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা নির্দেশনা বিশেষ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। শিক্ষা নির্দেশনা ব্যক্তিকে পাঠক্রম চয়ন , পাঠক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি স্থাপন , অসফলতার কারণ ও তার প্রতিকার , অমনোযোগিতা , শিক্ষা ও বৃত্তির সম্পর্ক - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করে। 

২. বৃত্তিগত নির্দেশনা :- 
যে ধরণের নির্দেশনা ব্যক্তিকে তার বৃত্তির সঙ্গে অভিযোজন ঘটায় এবং অভিযোজনে অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করে তাকে বৃত্তিগত নির্দেশনা বলে। বৃত্তিগত নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি তার চাহিদা , আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনে সফলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও বৃত্তিগত নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার যোগ্যতা ও সামর্থ্য সম্পর্কে অবগত করা যায় এবং বৃত্তিগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে সম্ভাব্য সমাধানের পথনির্দেশ দেওয়া যায়। 


৩. সামাজিক নির্দেশনা :- 
সামাজিক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় সফলভাবে অংশগ্রহণ করানো সম্ভব। সামাজিক সম্পর্ক ও কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা , প্রতিবেশী ও আত্মীয় - বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা , সামাজিক পরিবর্তন ও বিবর্তনে অংশগ্রহণ করা - ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে সামাজিক নির্দেশনা ব্যক্তিকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। 

৪. নৈতিক নির্দেশনা :- 
মানব জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ স্থাপন , ঠিক - ভুলের জ্ঞান , অবাঞ্চিত আচরণ প্রতিহত করা - ইত্যাদি হল নৈতিক নির্দেশনার লক্ষ্য। নৈতিক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে  - অপরাধমূলক কাজ , সমাজবিরোধী কাজ , নেশাগ্রস্থতা - ইত্যাদি থেকে দূরে রাখা সম্ভব। এছাড়াও নৈতিক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের সুচরিত্র গঠনে সহায়তা লাভ করে। 

৫. ধর্মীয় নির্দেশনা :- 
ধর্ম মানুষের সামাজিক , আধ্যাত্মিক জীবনের একটি প্রধান উপাদান। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠনে ধর্ম অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি ধর্মের বিভিন্ন তত্ত্ব , বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ , ধর্মের বিভিন্ন উপাদান - ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হতে পারে। ধর্মীয় নির্দেশনার প্রধান উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির মধ্যে থাকা কুসংস্কারগুলিকে দূর করে নৈতিক অনুশাসনের মাধ্যমে ব্যক্তিকে সমাজজীবনের জন্য উপযুক্ত করে তোলা। 

৬. পারিবারিক নির্দেশনা :- 
প্রতিটি সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তির কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। সামাজিক দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিকে পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। পারিবারিক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো সম্পর্কে অবগত করে তোলা সম্ভব হয়। পারিবারিক নির্দেশনার মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা , সন্তান প্রতিপালন , যৌন জীবন - ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায় এবং তার কাছ থেকে বাঞ্ছিত আচরণ প্রত্যাশা করা যায়। 


৭. অবকাশ যাপনের নির্দেশনা :- 
প্রতিটি মানুষের জীবনে অবকাশ যাপন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই অবকাশ যাপনকে যদি গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে পরিচালিত করা যায় তাহলে তা ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে কল্যাণকর হয়। অবকাশ যাপনের নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে সৃজনশীল কাজ , সেবামূলক কাজ - ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করে তোলা সম্ভব। 

৮. স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নির্দেশনা :- 
সুস্থ দেহ ছাড়া কোনো ব্যক্তির পক্ষেই যথার্থভাবে ব্যক্তিগত , পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা সম্ভব নয়। সমাজের সঙ্গে সার্থক অভিযোজন ও জীবনের লক্ষ্যগুলি পূরণের জন্য সুস্থ দেহ একান্তভাবে কাম্য। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবগত করা যায় ; বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা যায় , বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি ও টীকাকরণ - ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত করে তাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলা যায়। 

৯. ব্যক্তিগত নির্দেশনা :- 
যে ধরণের নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের ব্যক্তিগত সমস্যা , প্রক্ষোভিক সমস্যা - ইত্যাদি বিষয়ে অবগত করা যায় ও সহায়তা করা যায় - তাকে ব্যক্তিগত নির্দেশনা বলা হয়। প্রায় প্রতিটি মানুষের মধ্যে হতাশা , হীনমন্যতা , দুশ্চিন্তা , ভয় - ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। সমাজ জীবনের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা বেড়েই চলেছে। ব্যক্তিগত নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে থাকা প্রক্ষোভিক সমস্যাগুলিকে দূর করা যায়। ব্যক্তিগত নির্দেশনা ব্যক্তিকে জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। 

১০. বার্ধক্য নির্দেশনা :- 
মানুষ বার্ধক্যে উপনীত হলে তার সামাজিক , পারিবারিক , শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। দৈহিক শক্তি হ্রাস পায় , উপার্জন হ্রাস পায় বা বন্ধ হয়ে যায় এবং বার্ধক্যে উপনীত হওয়া ব্যক্তি পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এই সময় পরিবারের সদস্য , বন্ধু ও আত্মীয়বর্গের সমর্থন ও নৈকট্যলাভের আশায় তাঁরা উদগ্রীব হয়ে পড়েন। বার্ধক্য নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে বার্ধক্যদের সমস্যাগুলি সম্পর্কে অবগত করে বৃদ্ধদের প্রতি তাদের যথার্থ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উৎসাহিত করে তোলা হয়। 

১১. নাগরিকতার নির্দেশনা :- 
একজন নাগরিক হিসাবে প্রতিটি ব্যক্তির নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। নাগরিকতার নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত করে তাকে একজন সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা যায়। 

১২. সাংস্কৃতিক নির্দেশনা :- 
প্রতিটি সমাজের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট বর্তমান। সংস্কৃতি ব্যক্তির সামাজিক ও বৃত্তিগত জীবনে এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান। সাংস্কৃতিক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তিকে সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত করা যায়। ব্যক্তিকে প্রচলিত সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত করে সংস্কৃতির সঞ্চালন ঘটানো সম্ভব হয় এবং সংস্কৃতির সঙ্গে ব্যক্তির অভিযোজন ঘটানো সম্ভব হয়।   


You May Also Like

0 comments