আত্মীয়তার সংজ্ঞা দাও। আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব আলোচনা কর।

by - May 03, 2022

আত্মীয়তার সংজ্ঞা দাও। আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব আলোচনা কর। 

আত্মীয়তা বন্ধন কাকে বলে ? আত্মীয়তা বন্ধনের গুরুত্ব আলোচনা কর। 

আত্মীয়তার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব। 

Define kinship. Discuss the importance of kinship . ( In Bengali ) . 




আত্মীয়তার সংজ্ঞা / ধারণা :- 


আত্মীয়তা একটি বিশ্বজনীন বিষয়। সারা পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে আত্মীয়তার সম্পর্কের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে মূলতঃ তিনভাবে - রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে , বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ও সামাজিকভাবে। এর মধ্যে রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি প্রজন্মের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতেও দুটি পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা রচিত হয়।  

আত্মীয়তা হল সম্পর্কের এক জাল বিশেষ। আত্মীয়তা বন্ধনের সংজ্ঞা উল্লেখ করতে গিয়ে রবিন ফক্স উল্লেখ করেছেন , আত্মীয়তার বন্ধন হল বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক যা রক্তের সম্পর্ক , বৈবাহিক সম্পর্ক এবং সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।     


আত্মীয়তা সম্পর্কের গুরুত্ব :- 


আত্মীয়তা সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠিত নীতিগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রতিটি সমাজে পাওয়া প্রাচীনতম এবং প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। এই প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। সমস্ত সমাজের ব্যক্তিরা একে অপরের সাথে বিভিন্ন ধরণের বন্ধনে আবদ্ধ। আত্মীয়তা সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল। 

১. আত্মীয়তা ব্যবস্থা সম্পর্কের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বজায় রাখে।

২. আত্মীয়তা মানুষের মধ্যে যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়ার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে।

৩. বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আত্মীয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আত্মীয়তার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। আত্মীয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় কার সাথে বিয়ে করা যাবে এবং কার সাথে বিয়ে করা যাবেনা। 

৪. আত্মীয়তা বিভিন্ন আত্মীয়ের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও আত্মীয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
 
৫. আত্মীয়তা সামাজিক জীবনের একটি প্রহরী হিসাবে কাজ করে। গ্রামীণ অঞ্চলে বা উপজাতীয় সমাজে আত্মীয়তা পরিবারের অধিকার ও বাধ্যবাধকতাকে সংজ্ঞায়িত করে। 

৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক মানুষকে একে অপরের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। এটি সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং বিকাশ করে এবং সমাজে একে অপরের সাথে আরও ভালভাবে সম্পর্কযুক্ত করতে সহায়তা করে।


৭. আত্মীয়তা ব্যক্তিদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া জন্য নির্দেশিকা নির্ধারণ করে. এটি পিতা-কন্যা, ভাই-বোন ইত্যাদির মধ্যে সঠিক, গ্রহণযোগ্য ভূমিকার সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে।

৮.  আত্মীয়তা পারিবারিক সম্পর্ক , গোত্র এবং কুল নির্ধারণ করে।

৯. আত্মীয়তা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতিতে সদস্যদের অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

১০. আত্মীয়তা ব্যবস্থা সম্পর্কের সংহতি বজায় রাখে। প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে কীরূপ আচরণ করা উচিত - সে বিষয়ে নির্দেশিকা প্রস্তুত করে আত্মীয়তা।  

১১.  গ্রামীণ ও উপজাতীয় সমাজে আত্মীয়তা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিবার এবং বিবাহ, উৎপাদন ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে।

১২. আত্মীয়তা তার বিভিন্ন ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন আত্মীয়ের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ আত্মীয়তা ব্যক্তির আচরণের নিয়ন্ত্রক। 

১৩. আত্মীয়তা এবং এর ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মীয়দের মধ্যে বিশেষ দল বা গোষ্ঠী তৈরি করে। যেমন কাকাতুতো , মামাতো , পিসতুতো ভাই - বোনেদের মধ্যে এক বিশেষ ধরণের আমরা বোধ বা গোষ্ঠী বোধ লক্ষ্য করা যায়। 

১৪. আত্মীয়তার নিয়ম আত্মীয়দের মধ্যে ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে। আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেয়। 

১৫. আত্মীয়তা জমির মালিকানা, সম্পদের ধারণা এবং উৎপাদন ব্যবস্থা এবং এর ব্যবহারকে প্রভাবিত করে। আত্মীয়তার ভিত্তিতেই সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , আত্মীয়তা হল সামাজিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি অন্যতম প্রক্রিয়া যা সম্পর্কের বন্ধন নির্ধারণ করে এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বর্তমানে আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিবিধ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্কের পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনকেও সূচিত করে।  


You May Also Like

0 comments