সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমের ভূমিকা আলোচনা কর।

by - January 09, 2022

সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমের ভূমিকা আলোচনা কর। 

সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমের ভূমিকা :- 

Discuss the role of media in social change. ( In Bengali )   




আধুনিক পৃথিবীতে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও তার প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে টেলিভিশন , রেডিও , সংবাদপত্র - ইত্যাদির সাথে সাথে ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমগুলি প্রবলভাবে সমাজকে প্রভাবিত করছে। তাই সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তবে সমাজের উপর গণমাধ্যমের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রকার প্রভাবই দেখা যায়। গণমাধ্যমগুলি কীভাবে সামাজিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে - তা আলোচনা করা হল। 


১.  পরিবর্তনশীল সমাজের চিত্র তুলে ধরা :- সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। কিন্তু সকল সমাজ একসাথে একইভাবে পরিবর্তিত হয়না। পরবর্তনশীল সমাজগুলির পরিবর্তনের চিত্র ও ধারা তুলে ধরে গণমাধ্যমগুলি। এইভাবে সমাজের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে অন্যান্য অংশের সমাজের পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়। 

২. শিক্ষার প্রসার :- শিক্ষার অন্যতম গতিশীল একটি মাধ্যম হল গণমাধ্যম। গণমাধ্যম শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে মানুষকে পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে অভিযোজন ঘটাতে সাহায্য করে। শিক্ষার বিস্তার ও সামাজিক পরিবর্তন সর্বদা পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তনের সূচনা করে। এই কাজে সাহায্য করে গণমাধ্যম। 


৩. তথ্যের সরবরাহ :- ড্যানিয়েল লার্নার গণমাধ্যমকে সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেন। গণমাধ্যম সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তথ্যের সরবরাহের বৃদ্ধি ঘটায়। তথ্যের মাধ্যমে মানুষের মানসিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সমাজের পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকে। 

৪. রুচি ও মূল্যবোধের বিকাশ :- গণমাধ্যম সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রুচি ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়। বিভিন্ন সমাজের ভিন্ন ভিন্ন ও নতুন নতুন সমাজ - সংস্কৃতির পরিচয় প্রদান করে গণমাধ্যম। এই সকল নতুন নতুন সংস্কৃতি মানুষের মনন ও মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটায়। এর অবধারিত ফল হল সামাজিক পরিবর্তন। 

৫. সরকারি নীতি ও পরিকল্পনা প্রসার :- সরকারি নীতি ও পরিকল্পনাগুলি সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক একটি উপাদান। সরকারি নীতি ও পরিকল্পনা শিক্ষার বিস্তার , উন্নয়ন , জীবন - যাত্রার মানের বিকাশ ঘটায়। গণমাধ্যমের মাধ্যমেই মানুষ সরকারি নীতিগুলির সাথে পরিচিত হতে পারে। গণমাধ্যমগুলি সরকারি নীতি ও পরিকল্পনা জনসমক্ষে তুলে ধরে সামাজিক পরিবর্তন ঘটায়।   

৬. সামাজিকীকরণের দ্বারা সমাজ পরিবর্তন :- গণমাধ্যমগুলি সামাজিকীকরণের একটি অন্যতম মাধ্যম। গণমাধ্যমের দ্বারা তথ্য সমৃদ্ধ হয়ে মানুষ প্রচলিত সামাজিক বিষয় , নিয়ম - রীতি , সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। এই সকল বিষয়ে অবহিত হয়ে মানুষ সামাজিকীকরণে অংশগ্রহণ করতে পারে। এইভাবে সামাজিকীকরণের প্রসারের মধ্যে দিয়ে গণমাধ্যম সামাজিক পরিবর্তন ঘটায়। 


৭. সামাজিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা ও সমাধানসূত্র নির্মাণে সহায়তা :- গণমাধ্যমগুলি সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে। এই সকল সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হয়ে জনসমাজে সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী হয়। এইভাবে প্রত্যেকটি সমস্যা তার সমাধানের পথ খুঁজে পায়। প্রতিটি সমস্যার সমাধান সমাজে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটায়। 

৮. ভোগবাদের বিকাশ ও সামাজিক পরিবর্তন :- আধুনিক ভোগবাদী পণ্য সংস্থাগুলি তাদের পণ্যের প্রচার করে গণমাধ্যমের মাধ্যমে। এর ফলে মানুষ নিত্য নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে ও গণমাধ্যমে প্রচারিত আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন মানুষকে সেই সকল নতুন নতুন পণ্য ক্রয় করতে উৎসাহিত করে। এইসকল নতুন নতুন পণ্যের ব্যবহার মানুষের জীবনে ও সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ডেকে নিয়ে আসে। 

৯. সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পরিবেশ তৈরী :- আধুনিক গণমাধ্যমগুলি বেশ কিছু ক্ষেত্রে অতি আধুনিক সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশ করছে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উত্তর আধুনিক সংস্কৃতির প্রসার জোরালো হচ্ছে। পূর্বতন সংস্কৃতি ও আধুনিক সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যে '' জেনারেশন গ্যাপ '' তৈরী হচ্ছে। আধুনিক সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের মধ্যে সনাতন সংস্কৃতির প্রতি একপ্রকার অবহেলা তৈরী হচ্ছে। এই ধরণের পশ্চাদমুখী পরিবর্তনের জন্য দায়ী গণমাধ্যমগুলি। 

১০. সর্বক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণের প্রসারে সমাজে নেতিবাচক পরিবর্তন :- বর্তমানযুগে গণমাধ্যমগুলি বহুজাতিক সংস্থাগুলির কাছে বাণিজ্যিক কারণে চুক্তিবদ্ধ। ফলে গণমাধ্যমগুলি সংবাদের মোড়কে পণ্যের প্রচার করে। এইরূপ পণ্য প্রভাবিত সংবাদ জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটায়। সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পণ্য ক্রয়ের একপ্রকার উন্মাদ চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকলেই যেন একে অপরের সাথে আধুনিক পণ্য ক্রয়ের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন। এইভাবে গণমাধ্যম সমাজে এক অস্থির পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। 

পরিশেষে বলা যায় , গণমাধ্যম সমাজে শিক্ষার বিস্তার , তথ্যের পরিবেশন , সংবাদ পরিবেশন , সামাজিকীকরণ - ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন ঘটায়। তবে বর্তমানে গণমাধ্যমগুলি বেশ কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। বিকৃত , পণ্য প্রভাবিত , ষড়যন্ত্রমূলক , অতিরঞ্জিত - সংবাদ সমাজে নেতিবাচক পরিবর্তন সাধিত করে। এই সকল সংবাদের কুপ্রভাব থেকে নেতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। তবে কিছু নেতিবাচক দিক বাদ দিলে সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমগুলি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।   


 

You May Also Like

0 comments