শিখন ও শিক্ষনের সম্পর্ক / শিক্ষা ও শিক্ষনের সম্পর্ক।

by - January 08, 2022

শিখন ও শিক্ষনের সম্পর্ক। 

শিক্ষা ও শিক্ষনের সম্পর্ক। 

Discuss the relationship between teaching and learning. ( In Bengali ) 




শিখন ও শিক্ষনের সম্পর্ক :- 


শিখন হল একটি কৃত্রিম মানসিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতালাভ করে আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। অন্যদিকে শিক্ষন হল শিক্ষক - শিক্ষিকাগন কর্তৃক সম্পন্ন একটি কার্য - যার দ্বারা শিক্ষার্থী শিখনে সহায়তালাভ করে। শিক্ষন প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে শেখার আনন্দ ও সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শিক্ষনের সংজ্ঞায় বার্টন বলেছেন - '' Teaching is the stimulation , guidance , direction and encouragement of learning .''  


১. শিখন এবং শিক্ষন উভয়ই প্রথাগত ও অপ্রথাগত দুইই হতে পারে। আধুনিক যুগে শিক্ষা ও শিক্ষাদান নিয়মতান্ত্রিক গন্ডির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে বিস্তারিত হয়েছে। বর্তমানে প্রথাগত শিক্ষার বাইরেও বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। তাই শিখন ও শিক্ষন প্রক্রিয়া উভয়ই প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি অপ্রথাগত রূপেও পরিচালিত হচ্ছে। 

২. শিখন ও শিক্ষন উভয় প্রক্রিয়াই নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক। শিক্ষার্থীর বিকাশের লক্ষ্যে শিখনের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। আবার শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল্যযুক্ত শিখন সঞ্চালনে শিক্ষনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। উভয় প্রক্রিয়ার লক্ষ্যই হল শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ঘটানো। 


৩. যথার্থ শিখনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হল শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা। শিক্ষার্থী সক্রিয়রূপে শিখনে অংশগ্রহণ করলে উপযুক্ত শিখন সম্ভব। এক্ষেত্রে শিক্ষন শিক্ষার্থীর শিখনের প্রতি সক্রিয়তার বিষয়টিকে নিশ্চিত করেন। শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত প্রশ্ন করে ,সমস্যামূলক পরিস্থিতি তৈরী করে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার হার বৃদ্ধি করে শিক্ষন - যার ফলে যথার্থ শিখন সম্ভব হয়। 

৪. শিক্ষন কালে একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর শিখনের প্রতি অগ্রসরতার বিষয়টিকে সচেতনতার সাথে খেয়াল রাখতে হয়। ফিডব্যাক আদান - প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার স্তরকে বুঝতে চেষ্টা করেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উপযুক্ত নীতি , কৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। কাজেই শিক্ষার্থীর উন্নত শিখনের সাথে শিক্ষন সম্পর্কিত। 

৫. বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থীর বোধগম্যতা উন্নত করতে শিক্ষক ভাষার সরলীকরণ , শিক্ষা - উপকরণের ব্যবহার , শিক্ষা প্রযুক্তির ব্যবহার , উপযুক্ত পরিবেশ রচনা - ইত্যাদির মাধ্যমে শিখন ও শিক্ষনের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ রচনা করে শিক্ষার্থীর শিখনে সহায়ক হয়ে ওঠেন। 

৬. উপযুক্ত শিক্ষন দ্বারা শিক্ষার্থীকে বাস্তব জীবনের উপযোগী করে তোলা শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর শিখন দক্ষতা যদি অর্থবহ না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ জীবনে শিক্ষার্থী নিজ অভিজ্ঞতার সাথে বাস্তব জীবনের সামঞ্জস্যবিধান করতে পারবে না। ফলে শিখন ব্যাহত হবে। তাই শিক্ষার্থীকে বাস্তব জীবনের উপযোগী করে তুলতে শিক্ষন ও শিখনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান। 

৭. শিক্ষায় অংশগ্রহণ করা প্রতিটি শিক্ষার্থী আগ্রহ ,সামর্থ্য , দক্ষতা , বোধগম্যতা , চাহিদার দিক দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হয়। একজন শিক্ষক শিক্ষণকালে এই ভিন্নরূপতা প্রত্যক্ষণ করেন। তাই শিক্ষার্থীদের এই ভিন্নরূপতাকে স্বীকার করে একজন শিক্ষক ব্যক্তিগত স্তরে যতটা সম্ভব শিক্ষন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত স্বাধীনতা প্রদান , স্বয়ং শিখনের উপর গুরুত্ব প্রদান করে একজন শিক্ষক শিক্ষনকালে শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে থাকেন। 

৮. প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বিষয়ে একটি ন্যুনতম জ্ঞান অর্জন করতে হয়। একজন সুশিক্ষক উপযুক্ত শিক্ষনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত ও ন্যুনতম জ্ঞান অর্জন করতে সহায়তা করেন। কোনো একটি বিষয়ে ন্যুনতম জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে শিক্ষার্থীর শিখন সম্পূর্ণ হয়না। শিক্ষনকালে শিক্ষককে সেই বিষয়ের প্রতি নজর রাখতে হয়। ফিডব্যাক , পরীক্ষা ও মূল্যয়ন , প্রশ্ন উপস্থাপন , সমস্যামূলক পরিস্থিতি তৈরী করা - ইত্যাদির মাধ্যমে একজন শিক্ষক ন্যুনতম জ্ঞানের পরিমাপ করেন। 

পরিশেষে বলা যায় , শিখন এবং শিক্ষন উভয়ই শিক্ষা প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিখনকে যথার্থভাবে কার্যকর করতে গেলে প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষনের। 



You May Also Like

0 comments