শিক্ষণের সাধারণ ও মনস্তাত্ত্বিক নীতি :-

by - January 07, 2022

শিক্ষণের সাধারণ ও মনস্তাত্ত্বিক নীতি :-    

What are the general and psychological principles of teaching ?  ( In Bengali ) 


জ্ঞানমূলক এবং শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানের প্রচুর গবেষণা আবিষ্কার করেছে কীভাবে শ্রেণীকক্ষে চিন্তাভাবনা এবং শেখার উন্নতি করা যায়। শ্রেণী শিক্ষনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শিক্ষনের বিভিন্ন সাধারণ ও মনস্তাত্ত্বিক নীতিগুলি আলোচনা করা হল যেগুলি শিক্ষক অনুশীলনের মাধ্যমে শ্রেণিশিক্ষনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং তা শিক্ষার্থীদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।


১. লক্ষ্য নির্ধারণের নীতি :- প্রতিটি শিক্ষন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া উচিত। লক্ষ্য নির্দিষ্ট না হলে একজন শিক্ষক সঠিক পথে শিক্ষাকে পরিচালনা করতে পারেন না। লক্ষ্য ভিত্তিক শিক্ষন শিক্ষার্থীদের উন্নত জ্ঞানের বিকাশ ও অভিজ্ঞতালাভে সহায়তা করে। 

২. সক্রিয়তার নীতি :- শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে পঠন - পাঠনে অংশগ্রহণ না করলে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যগুলি চরিতার্থ হয়না। তাই শিক্ষনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই সক্রিয় থাকা বাঞ্চনীয়। 

৩. আচরণের নীতি :- শিখন - শিক্ষনের মূল উদ্দেশ্য হল অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর আচরণের পরিবর্তন। তাই শিক্ষনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আচরণের অভিষ্ঠ পরিবর্তন ঘটনার জ্ঞান একজন শিক্ষকের থাকা উচিত। 

৪. শিক্ষনের বাস্তবমুখী জীবন নীতি :- শিখন ও জীবন একে অপরের সাথে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষা জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে , একজন শিক্ষক শিক্ষন কালে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের উপযোগী করে তুলবেন। 

৫. ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতার নীতি :- প্রতিটি শিক্ষার্থী বৈশিষ্টের দিক দিয়ে একে অপরের থেকে আলাদা। প্রত্যেকের জীবন দর্শন , প্রক্ষোভ , আগ্রহ , ক্ষমতা - সবকিছুই ভিন্ন ভিন্ন। তাই একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্রতার দিকটি শিক্ষনের মধ্যে দিয়ে উন্মোচিত করবেন। 

৬. শিশু কেন্দ্রিকতার নীতি :- আধুনিক যুগে শিক্ষা সর্বতোভাবে শিশুকেন্দ্রিক। তাই শিক্ষনের সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর চাহিদা , ব্যক্তিগত সামর্থ্য ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষনের নীতি প্রবর্তিত হওয়া উচিত।  


৭. পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহারের নীতি :- শিক্ষনের সময় একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন জ্ঞানের সঞ্চালনা করবেন। এতে শিখনের সহজ সঞ্চালন ঘটে এবং শিক্ষার্থীর নিকট পঠন - পাঠন সহজ হয়ে ওঠে। 

৮. পরামর্শদানের নীতি :- আধুনিক শিক্ষা চিন্তায় একজন শিক্ষকের ভূমিকা হবে শিক্ষার্থীর প্রতি পরামর্শদাতার। একজন শিক্ষক কখোনোই শিক্ষন কালে কর্তৃত্ব স্থাপন করার চেষ্টা করবেন না। শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর বন্ধু , সহায়ক ও পরামর্শদাতা। 

৯. শিক্ষা বিষয়গুলির পারস্পরিক সম্পর্কের নীতি :- শিক্ষণকালে একজন শিক্ষক পাঠের বিভিন্ন অংশগুলির পরস্পরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবেন। শুধু তাই নয় , একটি বিষয়ের সাথে অপর একটি বিষয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করবেন। 

১০. গণতান্ত্রিকতার নীতি :- একটি সফল শিক্ষনের পরিবেশ রচিত হতে পারে শিক্ষার পরিবেশ গণতান্ত্রিক হলে। তাই শিক্ষক শিক্ষন প্রক্রিয়া চলাকালীন গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখবেন। মনে রাখতে হবে যে গণতান্ত্রিকতার শিক্ষা হল শিক্ষার একটি প্রধান মূল নীতি। 

১১. শিক্ষনের মনস্তাত্ত্বিক নীতি :- প্রতিটি শিক্ষকের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য। বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক কৌশলগুলি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে শিক্ষক সফলভাবে শিক্ষন প্রক্রিয়াকে সফলভাবে পরিচালনা করতে পারবেন না। 

১২. অনুপ্রেরণা সঞ্চারের নীতি :- শিক্ষনকালে একজন শিক্ষক শিখনের ক্ষেত্রে পঠন - পাঠনে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবেন। শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলেই সফলভাবে শিক্ষন পরিচালনা করা সম্ভব। তাই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। 


১৩. সহানুভুতি ও সহমর্মিতার নীতি :- শিক্ষকের মধ্যে সর্বদা শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার চারিত্রিক গুণ থাকা উচিত। শিক্ষক সর্বদা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও প্রয়োজন সম্পর্কে সহানুভুতিশীল থাকবেন। 

১৪. সৃজনশীলতার নীতি :- শিক্ষার শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক লক্ষ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ। তাই শিক্ষন পরিবেশের মধ্যে শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের কাজে আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। 

১৫. শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের নীতি :- অনেক সময় শিক্ষার্থীরা শিখনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক থাকে না। এই পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আগ্রহ , মনোযোগ , দক্ষতা ইত্যাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীদের পঠন - পাঠনে অংশগ্রহন করানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। 

১৬. ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়ার নীতি :- শিক্ষণকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থাকে ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া গ্রহণ এবং তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা একজন শিক্ষকের কর্তব্য। শিক্ষন প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর হয়েছে তা জানতে ফিডব্যাক গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

১৭. স্বয়ং শিখনের নীতি :- শিক্ষন পরিবেশে শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত স্বাধীনতা লাভ করবে ; যার ফলে সে নিজের আগ্রহ , ব্যক্তিত্ব ও সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেই শিখনে অংশগ্রহন করবে ও অভিজ্ঞতালাভের মাধ্যমে আচরণের পরিবর্তন ঘটাবে। 

১৮. বৈচিত্র ও পরিবর্তনশীলতার নীতি :- শিক্ষনের পরিবেশ একঘেঁয়ে হয়ে গেলে তা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের কাছেই বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। তাই একজন শিক্ষক শিক্ষার পরিবেশকে সর্বদা বৈচিত্রময় রাখার প্রয়াস করবেন। পাঠক্রম , সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর পরিবর্তনশীলতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষক শিক্ষন পরিবেশকে আকর্ষণীয় ও বৈচিত্রময় করে তুলবেন।   

     

You May Also Like

0 comments