The concept of self-sufficient village society and its features .( স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের ধারণা - বৈশিষ্ট )

by - December 05, 2021

The concept of self-sufficient village society and its features .

স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের ধারণা দাও। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের বৈশিষ্টগুলি লেখ।    


সীমিত অর্থে স্বয়ংসম্পূর্ণ ॥ প্রাক ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিক প্রকৃতি প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য বর্তমান। একদল চিন্তাবিদ সমকালীন ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলার পক্ষপাতী। আর একদল সমাজবিজ্ঞানী তথা ইতিহাসবিদ এই ধারণার বিরােধিতা করেন। গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলার অর্থ স্বনির্ভরতা প্রতিপন্ন করা। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সমষ্টিগত মানসিকতার অস্তিত্ব বর্তমান থাকে। এ রকম গ্রামের অধিবাসীরা জীবনযাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রী গ্রামের মধ্যেই পেয়ে যায়। কারণ জীবন ধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় সব কিছুই গ্রামের মধ্যেই উৎপাদিত হয়। তাই জীবনের মৌলিক প্রয়ােজন পূরণের কারণে গ্রামের বাইরের কোন কিছুর উপর সাধারণত নির্ভর করার দরকার হয় না। বস্তুত এ হল গ্রামীণ স্বয়ংসম্পূর্ণতা বা স্বনির্ভরতার সীমাবদ্ধ অর্থ। 


স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রবক্তা :- 
প্ৰাক্‌ ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতিকে প্রকৃতিগত বিচারে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা সঙ্গত কিনা, সে বিষয়ে পরস্পরবিরােধী দুটি মত সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হওয়া আবশ্যক। যে সমস্ত সমাজবিজ্ঞানী সমকালীন গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলার পক্ষপাতী তাঁদের বক্তব্য বিচার-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এই শ্রেণির ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে রজনী পাম দত্ত, ই. এম, এস, নামবুদ্রিপাদ, অধ্যাপক এ. আর, দেশাই, কে এম. আসরফ, রামকৃষ্ণ মুখােপাধ্যায় প্রমুখদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। 

এই শ্রেণীর সমাজবিজ্ঞানীর অভিমত অনুযায়ী প্রাক ব্রিটিশ ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতি ছিল স্থবির ও গতিহীন প্রকৃতির। প্রধানত ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদরা এই মতের প্রবক্তা হিসাবে পরিচিত। 
সমাজবিজ্ঞানী মেইন (H.S.Main)  গ্রামীণ সমাজকে সংগঠিত ও স্বয়ংক্রিয় একটি পরিবারগােষ্ঠী হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। এই গােষ্ঠী নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডের উপর যৌথ মালিকানার অধিকারী হয়ে থাকে। 


প্রাক্ ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতিকে যারা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেই সমস্ত ইতিহাসবিদ ও চিন্তাবিদরা সমকালীন গ্রামীণ সমাজের কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলির সংক্ষিপ্ত উল্লেখ আবশ্যক।

[এক] সমকালীন ভারতের গ্রামগুলি বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত ছিল। অধ্যাপক দেশাই (A. R. Desai)-এর অভিমত অনুযায়ী এই গ্রামগুলি স্বনির্ভর এবং বাইরের জগৎ থেকে পুরােপুরি স্বতন্ত্র। গ্রামগুলির এই বিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র সুদীর্ঘকাল অব্যাহত ছিল; কোনরকম আর্থসামাজিক সংযােগ-সম্পর্ক বাইরের সমাজের সঙ্গে ছিল না। অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক বিচারে প্রতিটি গ্রামই ছিল পৃথক একটি একক। 

[ দুই ] মার্কসীয় থিসিস অনুযায়ী সমকালীন ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে ভূসম্পত্তিতে যৌথ মালিকানা স্বীকৃত ছিল। ভূসম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না।

[তিন ] মার্কসীয় থিসিস অনুযায়ী সমকালীন ভারতের গ্রামীণ সমাজ ছিল স্থবির ও গতিহীন; সামাজিক সচলতা ছিল না। কারণ গ্রামগুলি ছিল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। স্ব স্ব অবস্থানের মধ্যেই প্রতিটি গ্রাম ছিল সীমাবদ্ধ।


[চার] প্রাক ব্রিটিশ গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও কারিগরি উৎপাদনের একীকরণ ঘটেছিল। অর্থাৎ কৃষিকার্য ও হস্তশিল্পের মধ্যে ঐক্যবন্ধন ঘটেছিল। কৃষি ও কারিগরি উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে কোনরকম সামাজিক বা আর্থনীতিক ব্যবধান ছিল না। সংশ্লিষ্ট মার্কসীয় থিসিস অনুসারে কৃষি ও হস্তশিল্পের একীকরণের কারণে সমকালীন ক্ষুদ্র গ্রামীণ সমাজ ছিল সম্পূর্ণ স্বনির্ভর।। 

[পাঁচ] সমকালীন গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও কারিগরি উৎপাদনের মধ্যে কোনরকম আর্থসামাজিক ব্যবধান ছিল না। কৃষি ও শিল্প পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ছিল। স্বভাবতই শ্রম নিয়ােজিত হত যৌথভাবে। অর্থাৎ শ্রমবিভাজনের অভাব ছিল বা শ্রমবিভাজনের বিকাশের অভাব ছিল। 

[ছয়] প্রযুক্তিগত বিচারে কৃষি ও কারিগরি শিল্পের অনগ্রসরতা ছিল। উদ্বৃত্ত সম্পদের সম্ভাবনা ছিল কম। কারণ সম্পদের বহিগমনের ঘটনা ঘটত। তাই পুঁজি সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল।

[সাত ] সমকালীন ভারতে বৃত্তি ছিল বংশগত। জাতভেদ প্রথানুযায়ী গ্রামীণ সমাজে ব্যক্তিবর্গের বৃত্তি নির্ধারিত হত জন্মসূত্রে। এই কারণে তখন জাতভেদ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এক অপরিবর্তনীয় শ্রমবিভাজনের ব্যবস্থা।

[ আট ]  প্রাক ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজের বাজার ছিল অপরিবর্তনশীল। 

[নয় ] সমকালীন গ্রামীণ সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হত স্থানীয় চাহিদার  পরিপ্রেক্ষিতে।


ইংরেজ শাসকদের মতে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সমাজ :- 
প্রাক্‌ ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজ সম্পর্কে ইংরেজ প্রশাসকদের অনেকে অভিজ্ঞতামূলক অভিমত জ্ঞাপন করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবেটসন, এলফিসস্টোন, চার্লস মেটকাফে, ডেনজিল প্রমুখ ব্রিটিশ শাসকের নাম করা যায়। এঁদের অভিমত অনুযায়ী সমকালীন গ্রামীণ সমাজগুলি ছােট ছােট প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিপন্ন হত। ক্ষুদ্রাকৃতির রাষ্ট্রের প্রায় অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য সমকালীন গ্রামীণ সমাজসমূহে বর্তমান ছিল। গ্রামীণ সমাজগুলি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। 

অধ্যাপক দেশাই :- 
স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতির একজন বড় প্রবক্তা হলেন অধ্যাপক দেশাই (A.R.Desai)। অধ্যাপক দেশাইয়ের অভিমত অনুযায়ী প্রাক ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতি ছিল মূলত স্বয়ংসম্পূর্ণ বা স্বনির্ভর। তবে এ প্রসঙ্গে তিনি অল্পবিস্তর ব্যতিক্রমের কথাও স্বীকার করেছেন। ছােটখাট ব্যতিক্রম বাদ দিলে সমকালীন স্বনির্ভর গ্রামীণ সমাজসমূহ সুদীর্ঘকাল ধরে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্তিত্বকে অব্যাহত রেখেছিল। 

অধ্যাপক দুবে :- 
প্রাক-ব্রিটিশ ভারতীয় গ্রামীণ সমাজ সম্পূর্ণ স্বনির্ভর ছিল এবং বাইরের জগতের সঙ্গে কোনরকম সংযােগ-সম্পর্ক ছিল না বা বাইরের জগতের উপর কোনরকম নির্ভরশীলতা ছিল না,—এ ধারণাকে অধ্যাপক দূবে (S.C.Dube) স্বীকার বা সমর্থন করেন নি। তার অভিমত অনুযায়ী সমকালীন ভারতীয় গ্রামীণ সমাজকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রামের বাইরের জগতের উপর নির্ভর করতেই হত। তখন কিছু দ্রব্যসামগ্রীর জন্য গ্রামগুলির মধ্যে লেনদেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বর্তমান ছিল। লবণ, মসলাপাতি, ধাতু নির্মিত দ্রব্যসামগ্রী, কারিগরি শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতির জন্য গ্রামগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল।
বৈবাহিক সূত্রে এবং অন্যবিধ প্রয়ােজনের পরিপ্রেক্ষিতে সমকালীন বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে সংযােগসম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। এই কারণে অধ্যাপক দুবের অভিমত অনুযায়ী প্রাক-ব্রিটিশ ভারতীয় গ্রামগুলিকে এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ছােট ছােট প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিপন্ন করা অসঙ্গত। তার মতানুসারে এই সময় আন্তঃগ্রামপঞ্চায়েত ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। 

You May Also Like

0 comments