social causes of the french revolution (1789) ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক কারণগুলি আলােচনা করাে।

by - December 18, 2021

Discuss the social causes of the French Revolution 1789 . 

ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক কারণগুলি আলােচনা করাে।


ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক কারণ


ভূমিকা : - 

ফরাসি বিপ্লবের মূল কারণ নিহিত ছিল সামাজিক বৈষম্যের মধ্যে। ফ্রান্সের মধ্যযুগীয় সামাজিক ব্যবস্থা বিশেষ অধিকারভােগী (Privileged) এবং অধিকারবিহীন (Non-privileged) এই দুইভাগে বিভক্ত ছিল। যাজক, অভিজাত ও অন্যান্য সম্প্রদায় নিয়ে মূল তিনটি এস্টেট বা শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল ফরাসিবাসীরা। এদের মধ্যেকার বৈষম্য-বিবাদ এবং মর্যাদা ও অধিকার ভােগের ক্ষমতার তফাত বিপ্লবের পটভূমি গড়ে দেয়। বিপ্লবের জন্য সমাজের শ্রেণিভেদকে দায়ী করে ঐতিহাসিক ফিশার বলেছেন - রাজতন্ত্র সামন্ত সমাজের সুবিধাভােগী শ্রেণির বিশেষ অধিকারের বিলােপসাধনে ব্যর্থ হলে ফরাসি বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে ("The Revolution came because the! monarchy was unable to solve the question of privilege was not strong enough, in a word, to overthrow the remains of feudalism")


ফরাসিবাসীরা প্রথম সম্প্রদায় (First Estate), দ্বিতীয় সম্প্রদায় (Second Estate), তৃতীয় সম্প্রদায় (Third Estate)—এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিলেন।

|1| প্রথমশ্রেণি : ফরাসি সমাজে প্রথম শ্রেণিভুক্ত ছিলেন যাজক সম্প্রদায়। মােট জনসংখ্যার শতকরা  ১ ভাগেরও কম অর্থাৎ ১ লক্ষ ২০ হাজার জন যাজক ছিলেন প্রথম শ্রেণি (First Estate)-ভুক্ত। ফ্রান্সের মােট জমির এক-দশমাংশ ছিল এঁদের অধীনে। কর দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও এঁদেরকে করের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। এই শ্রেণিভুক্ত যাজকরা বছরে এককালীন স্বেচ্ছাদান’ করতেন। টাইদ নামক ধর্মকর ছাড়াও জন্ম কর, মৃত্যু কর, বিবাহ কর ইত্যাদি থেকে আদায়িকত চার্চের আর্থিক সম্পত্তির ওপর নির্ভরশীল যাজকদের আয় ছিল ভালােই। 

উচ্চশ্রেণীর যাজক ও নিম্নশ্রেণীর যাজক :- যাজকদের আবার দুটি ভাগ ছিল, অভিজাত বা উচ্চযাজক এবং নিম্নতর যাজক। উচ্চযাজকরা জন্মসূত্রে অভিজাত হওয়ায় এরা ছিল ক্ষমতালােভী ও দুর্নীতিপরায়ণ। আর নিম্নযাজকরা জন্মসূত্রে তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় সমাজে ছিল অবহেলিত। | যাজকদের মধ্যেকার এই বৈষম্যের জন্যই নিম্ন যাজকরা ফরাসি বিপ্লব ঘটলে তাতে যােগ দেয়। অধ্যাপক সালভেমিনি বলেছেন—যাজকদের উভয়শ্রেণির মধ্যে এই বিবাদ ফরাসি বিপ্লবের প্রারম্ভিক সাফল্যের অন্যতম কারণ ("This dissension between the higher and lower clergy was one of the potent causes leading to the early victory of the Revolution")


| 2 | দ্বিতীয়শ্রেণি : ফ্রান্সে দ্বিতীয়শ্রেণি বলতে বােঝাত ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালের অভিজাত সম্প্রদায়কে।  এদের সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৫০ হাজার (১৭৮৯ খ্রি.), অর্থাৎ মােট ফরাসি জনসংখ্যার দেড় শতাংশ। ফ্রান্সের মােট কৃষিজমির ৩ ভাগের ১ ভাগ ছিল এদের অধীনে। কর দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও ফরাসি সরকার এদের থেকে কোনাে কর নিত না। উপরন্তু এরাই প্রজাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সামন্ত কর আদায়ের অধিকার পেয়েছিল। প্রশাসন, বিচারবিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, অর্থবিভাগসহ সমস্ত জায়গায় ছিল এদের আধিপত্য। ক্রিয়াজ আইনের প্রয়ােগ ঘটিয়ে এরা গ্রামের যৌথ সম্পত্তির ওপর ১/৩ অংশ ভাগ অধিকার করে। নয়টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত এই অভিজাতরা তৃতীয় শ্রেণীর সম্প্রদায়ের উপর শােষণপীড়ন চালাত। 

অভিজাতের প্রকারভেদ :- ফ্রান্সের পরিবারের প্রাচীনত্ব অনুযায়ী অভিজাতদের সম্মানের হেরফের ঘটত। যদিও ফ্রান্সের রাজারা মােটা টাকার বিনিময়ে যে কাউকে অভিজাত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারতেন। পােশাকি (Noble of the Robe) অভিজাত নামে পরিচিত এঁদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৫০ হাজার। জন্মসূত্রে অভিজাতরা ছিলেন অধিসারী অভিজাত  (Nobels of the Sword) যাদের সঙ্গে এই পােশাকি অভিজাতদের বিরােধ ছিল। এ ছাড়াও জনগােষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল বনেদি, সভাসদ, গ্রাম্য ইত্যাদি। বেইলি স্টোন এই অভিজাতদের দ্বন্দ্বকে ফরাসি বিপ্লবের সহায়ক উপাদান হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন—১৭৮০র দশকেও অভিজাতদের দুটি শ্রেণি সরকারের সঙ্গে বিরোধে এমনকি পারস্পরিক আক্রমণেও লিপ্ত ছিলেন। গুডউইন বিপ্লবের জন্য অভিজাতদের প্রতিক্রিয়াশীল আকাঙ্খাকে দায়ী করে বলেছেন—অভিজাতদের প্রতিক্রিয়াশীল আকাঙ্খার মধ্যেই ফরাসি বিপ্লবের আসল কারণ খুঁজতে হবে। 


| 3 | তৃতীয়শ্রেণি : তৃতীয়শ্রেণি বলতে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফরাসি সমাজে প্রথম ও দ্বিতীয়শ্রেণি বাদে  অন্যান্য উপশ্রেণিকে বােঝাত। যাদের মধ্যে ছিল বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক, বণিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী , শিক্ষক, সাঁকুলেৎ (সর্বহারা)। মােট ফরাসি জনসংখ্যার শতকরা ৯৭ ভাগেরও বেশি ছিল তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। 

[i] বুর্জোয়া : যাজক, অভিজাতদের পরেই ফরাসি সমাজে যাদের স্থান ছিল তারা হল তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্তশ্রেণি। বুর্জোয়া এই শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ছিল মধ্যবিত্তশ্রেণিভুক্ত নাগরিক। বিদ্যা, বুদ্ধি ও অর্থের বিচারে এরা যাজক, অভিজাতদের থেকে অনেক গুণ এগিয়ে থাকলেও সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে এরা ছিল অনেক পিছিয়ে। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, সাহিত্য, গবেষণাসহ বিভিন্ন দিকগুলি যেমন এদের সাহায্যেই উন্নতরূপ পেয়েছিল, তেমনি তাদের দেওয়া রাজস্ব থেকেই যাজক ও অভিজাতদের বিলাসিতার অনেকটাই নির্বাহ হত। সামগ্রিকভাবে সমাজে মান-সম্মান ও মর্যাদা প্রাপ্য থাকলেও তা না পাওয়ায় তারা ফরাসি বিপ্লবে যােগ দেয়। এই মতকে সমর্থন করে ঐতিহাসিক রাইকার বলেছেন—ফরাসি বিপ্লব ছিল সামাজিক সাম্যের দাবিতে বুর্জোয়াদের একটি আন্দোলন (“... a movement for social equality by the bourgeoisic”)।

[ii] কৃষক : তৃতীয়শ্রেণির গরিষ্ঠ অংশ ছিল কৃষক সম্প্রদায়। তৃতীয়শ্রেণির মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত কৃষকরা ছিল প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ। রাজস্বের বেশিরভাগটা কৃষকদেরই বহন করতে হত। বিনিময়ে তাদের ভাগ্যে ছিল অত্যাচার ও অনাচারের দুর্ভোগ। জমিতে চাষ করা ছাড়াও কৃষকদের জমিদারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে বেগার খাটতে হত। জীবনধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় উপকরণের দাম বাড়লেও কৃষকদের সেই অনুপাতে আয় বাড়ত না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের উৎপাদন কম হলেও কৃষকদের দেয় রাজস্বের হার কমত না। স্বাধীন কৃষকরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে চাষ করে কোনাে মতে জীবনধারণ করলেও ভাগচাষি ও ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শােচনীয়। ঐতিহাসিক লাব্রুজের মতে—অষ্টাদশ শতকের ফরাসি কৃষকরা সবচেয়ে বেশি শােষিত হত। 

[iii] অন্যান্য : তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্যান্যদের মধ্যে শ্রমিকরা শহরে থেকে কলকারখানার কাজে নিয়ােজিত ছিল। কিন্তু স্বল্পমজুরি, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা বা বছরের অনেক সময় বেকার হয়ে বসে থাকার কারণে তাদের জীবনসংগ্রাম ছিল অত্যন্ত করুণ। সাঁকুলেৎ বা সর্বহারারা ছিল সমাজের অপাংক্তেয় জীব। এ ছাড়াও কারিগর ও ছােটো ব্যবসায়ী এবং চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী প্রমুখ বিদ্যাবুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনলেও সমাজের প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত ছিল।

উপসংহার : প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এই তিন সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত ফ্রান্সের সামাজিক কাঠামাের মধ্যেই বিপ্লবের বীজ নিহিত ছিল। যাজক, অভিজাত এবং তৃতীয়শ্রেণির বুর্জোয়া ও কৃষকদের মধ্যেকার ক্ষোভ ও দাবিগুলির মধ্যে ফারাক থাকলেও সেগুলি মিলিতভাবে বিপ্লবে ইন্ধন জুগিয়েছিল। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এই তিন সম্প্রদায়ের শ্রেণিগত বৈষম্য ছিল বিপ্লবের মূল কারণ। নেপােলিয়ন উল্লেখ করেছেন—অহমিকাই ছিল বিপ্লবের মূল কারণ, স্বাধীনতা ছিল অজুহাতমাত্র (“Vanity made the Revolution, Liberty was only an excuse')।


You May Also Like

0 comments