importance and needs of evaluation in education মূল্যায়নের উপযােগিতা বা মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা :-

by - December 18, 2021

What are the importance and needs of evaluation in education .

মূল্যায়নের উপযােগিতা বা মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা :- 


শিক্ষা পরিচালনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল মূল্যায়ন। শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। এটি হল শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধারাবাহিক পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার পথে একজন শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে বর্ধিত ও বিকশিত হয়। এই শিক্ষা প্রক্রিয়াকে আদর্শ এবং শিক্ষার্থীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে কার্যকরী করে তােলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। বস্তুতপক্ষে, মূল্যায়ন ছাড়া শিক্ষাপ্রক্রিয়া কখনাে সম্পূর্ণ হতে পারে না। একমাত্র মূল্যায়নের সাহায্যেই শিশুর সামগ্রিক বিকাশের পরিমাপ সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের গুরুত্ব ও উপযোগিতাগুলি হল - 


(১) শিক্ষন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ :- মূল্যায়ন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতির সাফল্য বা অসাফল্য নিরূপণ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, শিক্ষণ পদ্ধতির ত্রুটি সম্পর্কেও তা শিক্ষককে অবহিত করে। তার ফলে তিনি শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে সংস্কার সাধন করতে এবং বাঞ্ছনীয় পন্থাটি গ্রহণ করতে সক্ষম হন। প্রয়ােজনবােধে উক্ত শিক্ষণ পদ্ধতিটি বর্জন করে নতুন কৌশল উদ্ভাবনে এটি শিক্ষককে অনুপ্রাণিত করে। 

(২) লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান :- শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে লক্ষ্য। লক্ষ্য নির্ধারণ যদি স্পষ্ট ও যথাযথ না হয়, তাহলে বিষয়বস্তু নির্বাচন একেবারে অমূলক হয়ে পড়বে। স্পষ্টতার অভাবে অবাঞ্ছিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার উদ্দেশ্যে উপনীত হতে ব্যর্থ হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে যাচাই করতে সাহায্য করে মূল্যায়ন।


(৩) পরিমাপ পদ্ধতির প্রয়োগ ও সংস্কার সাধন :- শিশুর শিক্ষালাভ যথাযথ হয়েছে কিনা, শিক্ষার নির্ধারিত উদ্দেশ্য অনুযায়ী তার মধ্যে বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে কিনা, তার অর্জিত অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য পরীক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীর সাফল্য ও শিক্ষকের আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকে। এক্ষেত্রে এইরূপ অসংলগ্নতা দূর করতে সহায়তা করে মূল্যায়ন। 

(৪) শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা : - শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনার ক্ষেত্রে সঠিক পথনির্দেশ করে মূল্যায়ন। মূল্যায়নের বিভিন্ন কৌশলের ভিত্তিতে শিশুর নিজস্ব ক্ষমতানুযায়ী তাকে নির্দিষ্ট দিশায় পরিচালনা করতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে মূল্যায়ন। কারণ একমাত্র মূল্যায়নের সাহায্যেই শিশুর সামগ্রিক রূপের পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়। এমনকী পিছিয়ে পড়া শিশুর দুর্বলতা নির্ণয় করে তাকে তার ক্ষমতানুযায়ী নতুন পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে মূল্যায়ন। 

(৫) পাঠক্রম সংক্রান্ত নির্দেশনা ও সংস্কার সাধন :- শিক্ষার নির্ধারিত লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল পাঠক্রম। এই পাঠক্রম যদি উদ্দেশ্যের পরিপূরক না হয়, তাহলে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষা ও পাঠক্রমের মধ্যে ফাঁক থাকলে তার কাছ থেকে সমর্থনযােগ্য আচরণগত পরিবর্তন আশা করা যুক্তিযুক্ত হবে না। তাই পাঠক্রম প্রণয়নকালীন গঠনমূলক মূল্যায়ন (Formative Evaluation) এবং পাঠক্রমের কার্যকারিতা যাচাই-এর জন্য সমষ্টিগত মূল্যায়ন। (Summative Evaluation)-এর মাধ্যমে পাঠক্রমের ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এর ফলে পাঠক্রমের পরিবর্তন সহজ হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে মূল্যায়নই আমাদেরকে যথাযথ পথনির্দেশ করতে সাহায্য করে। 

(৬) অগ্রগতির রূপরেখা ও ধারণা প্রদান :- মূল্যায়নের সাহায্যে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক অগ্রগতি সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়। শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার্থী কতটুকু সফল হয়েছে তা যাচাই করতে সাহায্য করে মূল্যায়ন। এমনকী পরিবর্তিত আচরণের বিভিন্ন দিকগুলির তাৎপর্য নির্ণয় করতেও সহায়তা করে মূল্যায়ন। 

(৭) নিরবচ্ছিন্ন পরিমাপের প্রক্রিয়া :- মূল্যায়ন একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হওয়ায় একমাত্র এরই মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক পরিমাপ সম্ভব হয়। বিশেষত শিখন ও শিক্ষণকালীন পরিবেশে শিক্ষার্থীর আচরণ ধারার মধ্যে প্রতিনিয়ত কীরূপ পরিবর্তন হচ্ছে তার হদিশ দিতে সক্ষম হয় মূল্যায়ন।

(৮) শিক্ষার দ্বারা ঘটমান পরিবর্তনকে যথার্থভাবে বিচার করার জন্য প্রয়ােজন শিক্ষার্থীর সার্বিক মূল্যায়ন।

(৯) আজকের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সমন্বয় দ্বারা শিক্ষার্থীর অকারণ পরিবর্তনকে বিচার করে মূল্যায়ন। 

(১০) আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্যাভিমুখী মূল্যায়ন ব্যবস্থাও পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত।


(১১) শিক্ষার্থীর বহুমুখী আচরণধারার প্রকৃত তাৎপর্য বিচারকরণের জন্য প্রয়ােজন মূল্যায়ন। 

(১২) মূল্যায়ন শ্রেণি শিক্ষণের বিভিন্নতা ও বৈচিত্র নিয়ে আসে। 

(১৩) মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত পাঠক্রমেও যথার্থতা নির্ধারণ করে। 

(১৪) শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কর্মসূচির নির্ধারক হল মূল্যায়ন। 

(১৫) শিক্ষণলব্ধ জ্ঞানের প্রয়ােগ ও দক্ষতার যথার্থতা নির্ধারণ করে মূল্যায়ন।

(১৬) মূল্যায়ন ব্যবস্থা শিক্ষা প্রশাসকের দক্ষতা নির্ণয়ে সহায়তা করে। আবার শিক্ষা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনারও উপযুক্ততা নির্ণয় করে মূল্যায়ন। 

(১৭) পশ্চাৎপদ শিক্ষার্থীদের যথার্থ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা করতে সহায়তা করে মূল্যায়ন। 

(১৮) মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর উন্নততর শিখনের সহায়ক। 

(১৯) মূল্যায়ন বহুমুখী শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। 

(২০) শিক্ষক/শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর শিখনের জন্য যে পদ্ধতি ও কৌশলগুলি ব্যবহার করছেন তার যথার্থতা নির্ণয়ের জন্য প্রয়ােজন মূল্যায়ন।

সুতরাং, নানাদিক থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের উপযােগিতা পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষণ সামর্থ্য, পাঠক্রম বিশ্লেষণ, শিক্ষার পরিবেশ বিশ্লেষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষভাবে প্রয়ােজনীয়তা থাকলেও অপ্রত্যক্ষ উপযােগিতাও অকিঞ্চিৎকর নয়। বিশেষভাবে শিক্ষার মান মন্তব্য নির্ণয়, পরীক্ষার ফলাফল ভিত্তিক পদমর্যাদা (Gradation) নির্ণয়, মানসিক পরিমাপ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, বর্তমানে এর প্রয়ােজনীয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।


You May Also Like

0 comments