শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান গুলি আলোচনা করো। Discuss the different components of education.

by - December 21, 2021

শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান গুলি আলোচনা করো। 

Discuss the different components of education.

শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান :- 


আধুনিককালে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণা ও প্রয়োগের পর শিক্ষাবিদ ও গবেষকেরা শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদানের কথা বলে থাকেন। এই চারটি উপাদান পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয় - তারা পরস্পর সম্পর্কিত। এই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয় এক পূর্ণাঙ্গ নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এই চারটি উপাদান হল যথাক্রমে শিক্ষার্থী , শিক্ষক , পাঠক্রম ও বিদ্যালয়। এই চারটি উপাদানের প্রত্যেকটি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  একটির অনুপস্থিতি আরেকটি কে প্রভাবিত করে। একজন শিক্ষার্থীর জীবনের বিভিন্ন ধরনের বিকাশ চরিতার্থ করতে এবং শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে পূর্ণ করতে এই চারটি উপাদানের পারস্পরিক সহাবস্থান একান্ত অপরিহার্য। 


১. শিক্ষার্থী :-
শিক্ষার প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান হল শিক্ষার্থী। প্রাচীনকালে শিক্ষা ছিল বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। কিন্তু আধুনিককালে শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক বা শিশুকেন্দ্রিক। প্রতিটি শিশু স্বভাবতঃ জ্ঞানপিপাসু এবং তার মধ্যে এক সদা জাগ্রত সত্ত্বা বর্তমান যা অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেদের আচরণের পরিবর্তন ঘটাতে চায়। প্রতিটি শিশুর মধ্যে কিছু সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। শিশুর মধ্যে প্রবৃত্তি বা সুপ্ত প্রতিভা কে খুঁজে বের করে আনা এবং তার বাস্তব রুপ প্রদান করাই হল শিক্ষার প্রধান কাজ। সুতরাং শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে। তাই শিক্ষার্থী হল শিক্ষার অন্যতম প্রধান উপাদান। 

২. শিক্ষক :- 
আদিম সমাজে নিয়মতান্ত্রিক ও জটিল ধারার শিক্ষা প্রচলিত ছিল না। ফলে সেখানে শিক্ষকের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি ততটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আদিম মানুষ যখন থেকে ধীরে ধীরে সভ্যতার পথে এগোতে শুরু করে তখন থেকে তারা নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে থাকে।  নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক বা গুরুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে একজন গুরু বা শিক্ষকের কাজ শিক্ষার্থীকে সঠিক পথের নির্দেশ প্রদান করা , বিষয় সম্পর্কে কৌতুহলী করে তোলা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের কাজ শুধুমাত্র পঠন-পাঠন বা শিক্ষাদান নয়। তার সাথে সাথে একটি প্রকৃত নৈতিক জীবনাদর্শের পথে তাকে পরিচালিত করাই হল শিক্ষকের প্রধান কাজ। যুগে যুগে সমাজ বিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিককালের একজন শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীর প্রকৃত বন্ধু , সহযোগী এবং পথ প্রদর্শক ও পরামর্শদাতা। তার চরিত্র , ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ শিক্ষার্থীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে থাকে। তাই শিক্ষক হলেন শিক্ষার আরেকটি অন্যতম প্রধান উপাদান। 


৩. পাঠক্রম :- 
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সামনে বহু বিষয়গুলিকে উপস্থিত করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর কৌতুহল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা লাভের সহায়ক হয়ে ওঠে। নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষায়  পাঠক্রম ব্যতিরেকে শিক্ষাধারা সঠিক পথে প্রবাহিত হবে না। শিক্ষা ধারাকে সঠিক ও সুশৃঙ্খল পথে পরিচালিত করতে একটি বিজ্ঞানসম্মত শিশুকেন্দ্রিক ও আদর্শ পাঠক্রমের অবশ্যই প্রয়োজন আছে।  পাঠক্রমের মধ্যে দিয়ে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী সমাজের ভিন্ন ভিন্ন দিক গুলি সম্পর্কে জানতে পারে বা বলা যায় সমাজের বৈচিত্র ও বিভিন্নতা পাঠক্রমের মধ্যে দিয়েই শিক্ষার্থীর সামনে উন্মোচিত হয়। তাই পাঠক্রম শিক্ষার একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়। 

৪. বিদ্যালয় :- 
শিক্ষার অপর একটি অন্যতম প্রধান উপাদান হল বিদ্যালয়। বিদ্যালয় বর্তমানকালে সামাজিক সংগঠন।  শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিচিত সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকি। সমাজ দুই প্রকার বস্তুগত ও অবস্তুগত সমাজ। এই দুই ধরনের সমাজের জ্ঞানই আমরা শিক্ষার মাধ্যমে লাভ করে থাকি।  বিদ্যালয় নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। শিক্ষার্থী , শিক্ষক ও পাঠক্রম - এই তিন উপাদানের মেলবন্ধনের প্রধান কাজ করে বিদ্যালয়। বিভিন্ন ধরনের বিদ্যালয় সমাজে বর্তমান ; যেমন - প্রাথমিক বিদ্যালয় , মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় , মহাবিদ্যালয় ,  বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আরো বহু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায় যেমন পরিবার -  ইত্যাদি। বিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাধারা তার উদ্দেশ্যগুলিকে পরিপূর্ণতা প্রদান করতে পারে। তাই বিদ্যালয় হল শিক্ষার অপর একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপাদান। 

শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান গুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক :- 
পূর্বেই বলা হয়েছে এই চারটি উপাদান পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয় , তারা পরস্পর সম্পর্কিত। এই চারটি উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই শিক্ষা তার মূল লক্ষ্য অর্জন করে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ। তাই আধুনিককালে শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক। শিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে মূলত এই চারটি উপাদানের পারস্পরিক সহাবস্থানের ভিত্তিতে। যেমন একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সহজেই তার বিষয়ের প্রতি অনুপ্রাণিত ও কৌতুহলী করে তুলতে পারেন। একটি আদর্শ পাঠক্রম শিক্ষার্থীকে তার যথার্থ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান লাভে সাহায্য করার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে পূরণ করতে পারে। একজন আদর্শ শিক্ষার্থী তার শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তার চাহিদা ও বিকাশের পূর্ণতা প্রদান করতে পারে। বিদ্যালয় শিক্ষক ,শিক্ষার্থী ও পাঠক্রমের মেলবন্ধন ও সমন্বয় সাধন ঘটনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিক্ষার্থী , শিক্ষক ,পাঠক্রম ও বিদ্যালয় - শিক্ষার এই  চারটি উপাদান পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যগুলিকে চরিতার্থ করতে সচেষ্ট হয়। ফলে শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং শিশুর সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হয়। 


You May Also Like

1 comments

  1. শিক্ষামূলক প্রদীপন ও উপকরণ - পেলে উপকৃত হতাম

    ReplyDelete