classes in indian society during english rule ( ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক শ্রেণী )

by - December 03, 2021

ব্রিটিশ আমলে নগরাঞ্চলে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক শ্রেণীর স্বরূপ পর্যালােচনা কর।

অথবা , ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক শ্রেণী সম্পর্কে লেখ। 


ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক শ্রেণী :- 


ভূমিকা  :- 
প্রাক্-ব্রিটিশ যুগে সমাজ কাঠামাে ছিল সহজ সরল প্রকৃতির। বিশেষ কোন প্রযুক্তির উদ্ভাবনা ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্রিটিশ ভারতে নতুন সংস্কৃতির সাথে মিশ্রণ ও নতুন শিল্প-সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটে। সমাজে নানা নতুন শ্রেণীর উদ্ভব হতে দেখা যায়। বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলি গড়ে ওঠার ফলে নগর সমাজের বিস্তার ঘটে। ব্রিটিশ আমলে দেখা যায় ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থে সমাজে বিশেষত শহরগুলিতে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এই শ্রেণীগুলি হল—
১. শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গড়ে ওঠা পুঁজিপতি শ্রেণী। 
২. শিল্প কারখানা, খনি এবং পরিবহনের সঙ্গে নিযুক্ত শ্রমিক শ্রেণী। 
৩. আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত ছােট ব্যবসায়ী শ্রেণী।
৪. অন্যান্য বুদ্ধিজীবী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী।


১. শিল্প , বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গড়ে ওঠা পুঁজিপতি শ্রেণী :- 
শিল্প , বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে গড়ে ওঠা পুঁজিপতি শ্রেণীরা ব্রিটিশ আমলে অনেক বেশি মুনাফা লাভের সুযােগ পায়। গ্রাম সমাজের ভাঙ্গনের দ্বারা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন দেখা যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির বাণিজ্যকরণ প্রক্রিয়ার উন্মােচন ঘটে। পাশাপাশি অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার অর্থনীতির সংযােজন, সড়ক-রেল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির ফলশ্রুতিতে তাই পুঁজিপতি শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে। 
ব্রিটিশ আমলে এই পুঁজিপতি শ্রেণীরা প্রতিযােগিতার সম্মুখীন হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও পুঁজিপতিরা বাজার দখলের প্রতিযােগিতায় অগ্রসর হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থান্বেষীতার ফলে শিল্পপতিদের মধ্যে স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। 

২. শিল্প কারখানা, খনি এবং পরিবহনের সঙ্গে নিযুক্ত শ্রমিক শ্রেণী :- 
শিল্প শ্রমিকেরা এক নতুন শ্রেণী হিসেবে শহরাঞ্চলে জীবিকা অর্জনের জন্য ভীড় করতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত স্বার্থান্বেষী ব্যবস্থার ফলে ভারতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। ভূমিব্যবস্থায় অতিরিক্ত কর ধার্য করার ফলে মানুষ বেকারত্বের সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে জীবিকার খোঁজে তারা শহরাঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানাগুলিতে কাজ করতে শুরু করে। এইভাবে শিল্পশ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।।
বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিকগণ সমাজে নির্যাতিত ও শােষিত শ্রেণী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন শ্রমিক শ্রেণীগুলিকে, যারা সমাজে উচ্চস্তরে থাকা মানুষদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত ও শােষিত হয়ে থাকে। অনেক সমাজতাত্ত্বিকেরা মনে করেন সমাজে কুসংস্কারের পাশাপাশি ব্রিটিশ ও ভারতীয় শিল্পপতিদের মুনাফাবাজির ফলে সবচেয়ে বেশি শােষিত হয় শ্রমিক শ্রেণীর মানুষেরা।


৩. আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত ছােট ব্যবসায়ী শ্রেণী :- 
ব্রিটিশ আমলে সমসাময়িক পুঁজিবাদের হাত ধরে দেখা যায় বেশ কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেণী ও মানুষকে যারা সমাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত নগরগুলিতে মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে অনেক ব্যবসা ক্ষেত্র বা দোকান গড়ে ওঠে। এইগুলির সাথে জড়িত শ্রেণীই হল ব্যবসায়ী ও দোকানদার শ্রেণী। এরা উৎপাদিত ও আমদানিকৃত উভয়প্রকার দ্রব্যাদির লেনদেনের মাধ্যম। তবে এই শ্রেণী ব্রিটিশ আমলে পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।  

৪. অন্যান্য বুদ্ধিজীবী এবংমধ্যবিত্ত শ্রেণী :- 
আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায় শিল্প-শিক্ষা-আইন-আদালতের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এরা সমাজে বিশেষ স্থান অধিকার করে। ব্রিটিশ শাসনের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংযােগসাধনের দ্বারা পশ্চিমী চিন্তাধারার বিকাশ দেখা যায়। পাশ্চাত্যে শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে বেশ কিছু
পেশাভিত্তিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে, যথা— প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক প্রভৃতি শ্রেণী। এদেরকে একত্রিত করেই ভারতবর্ষে বুদ্ধিজীবী এবংমধ্যবিত্তশ্রেণীর আবির্ভাব ঘটতে থাকে। এইভাবে দেখা যায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলে সমাজ জীবনে বিভিন্ন পেশাভিত্তিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতি , মুনাফার নীতি - ইত্যাদির ফলে দেখা যায় এই শ্রেণীর মানুষেরাও ব্রিটিশ শাসনের ফলে নিজেদের আধিপত্য হারিয়ে ফেলতে থাকে। প্রকাশ্যে এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষ শাসকের বিরােধিতা না করলেও তারা নানা আন্দোলনের দ্বারা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। ভারতবর্ষে স্বাধীনতা লাভের পশ্চাতে ছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা। তাদের জোরালাে প্রতিবাদের ও ঐক্যের ফলে ভারতবর্ষ স্বাধীনতার মুখ দেখতে পায়।


You May Also Like

0 comments