ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের কারণ :- causes of the Civil War in England.

by - December 26, 2021

Discuss the causes of the Civil War in England.

ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা কর। 

ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের কারণ :- 


১৬৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পার্লামেন্টের মধ্যে দুটি স্তরে গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয়। প্রথম স্তরে ইংল্যান্ডের রাজা ও সাংসদদের মধ্যে এবং দ্বিতীয় স্তরে ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাজা ও সংসদের যৌথ বাহিনীর সাথে সেনাবাহিনীর। ঐতিহাসিক ট্রেভেলিয়ান মন্তব্য করেছেন , ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধে তেমন কোনো নৃশংসতা লক্ষ্য করা যায় না। প্রথম গৃহযুদ্ধের সময় রাজার পক্ষে ছিলেন ক্যাভালিয়র দল ও সংসদদের পক্ষে পক্ষে ছিল রাউন্ডহেড দল। এর পর দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। অধ্যাপক হিল ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধকে মহান ফরাসি বিপ্লবের সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর ভাষায় , '' The English Revolution of 1640 - 1660 was a great social movement like the French Revolution .  ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের জন্য বিবিধ কারণ দায়ী ছিল। কারণগুলি হল - 


১. অর্থনৈতিক পরিবর্তন :- তৎকালীন ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। এই সময়কালে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতির ফলে নতুন করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং অভিজাতদের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। অন্যদিকে , সাধারণ শ্রমিক , মজুর , কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত হীন হয়ে পড়ে। চরম দারিদ্রতার জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলি সংগ্রহ করতে তারা ব্যর্থ ছিল। 

২. ধর্মীয় কারণ :- অধ্যাপক হিল মন্তব্য করেছেন যে , সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডে মঠ ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটে। ইতিপূর্বে ক্যাথলিক চার্চগুলি সমস্ত রকমের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার ভোগ করত। কিন্তু মঠ ব্যবস্থার উচ্ছেদের পর থেকে চার্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়। মানুষ চার্চগুলির আধিপত্য থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। 


৩. গ্রামীণ জীবনযাত্রার পরিবর্তন :- সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডের গ্রামীণ জীবনযাত্রায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। ইতিপূর্বে ষোড়শ শতকে জমির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সময় কাউন্টগুলিতে এক নতুন ধরণের কৃষক বা ভূস্বামী শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এরা ইংল্যান্ডের কাউন্টগুলিতে সামন্তশ্রেণীর ভূমিকাতে অবতীর্ণ হন। এই নতুন শ্রেণি জমির ওপর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এবং সর্বোচ্চ মুনাফালাভের জন্য সচেষ্ট থাকে। এইভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর মুনাফা লাভের প্রচেষ্টা এক সমস্যামূলক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। 

৪. শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিবর্তন :- তৎকালীন সময়ে ইংল্যান্ড ছিল পশম বা উল , কয়লা , লোহা , টিন , সাবান - ইত্যাদি শিল্পোৎপাদনের এক বৃহৎ কেন্দ্র। শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে শিল্প উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেলে রাষ্ট্র মুনাফা লাভের আশায় সকল বাণিজ্যিক সংস্থা ও বণিক সংগঠনগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করে। ইতিমধ্যেই বাণিজ্যে ব্যাপক মুনাফা লাভের ফলে অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে। ফলে রাষ্ট্রশক্তি ও বাণিজ্যিক সংগঠনগুলির মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। 

৫. পিউরিটানদের বিরোধ :- তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পিউরিটান সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এই সময় রাজতন্ত্র ও আর্চবিশপ চার্চের সংস্কার সাধনের জন্য যেসকল নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা পিউরিটানদের স্বার্থের অনুকূলে ছিলনা। এই পরিস্থিতিতে ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে রাজা প্রথম জেমস ও প্রথম চার্লস পিউরিটানদের মতবাদ বিকাশের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু যেহেতু পার্লামেন্টে পিউরিটানরা সংখ্যায় অধিক ছিল তাই পার্লামেন্টকে পিউরিটানরা নিজেদের স্বপক্ষে আনতে পেরেছিল। এমতাবস্থায় পিউরিটানরা নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখতে সংগ্র্রামের পথে অবতীর্ণ হয়। 

৬. রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ :- সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডের রাজারা রাজার দৈবস্বত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। এই সময় যেহেতু মধ্যবিত্ত ও অভিজাত ও বণিক সম্প্রদায় প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয় তাই তারা রাজতন্ত্রের দুর্বলতা ও সামরিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পার্লামেন্টে নিজেদের বিশেষ স্বার্থগুলিকে চরিতার্থ করতে উদ্যোগী হয়। মধ্যবিত্ত , অভিজাত ও বণিক সম্প্রদায় প্রভাবিত পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজতন্ত্রের বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। 


৭. দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি :- টিউডর রাজাদের রাজত্বকালের শেষের দিকে ইংল্যান্ড সহ সারা ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকট চরমে ওঠে। জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়। কিন্তু অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও অভিজাত সম্প্রদায়ের সম্পদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতেই থাকে। এই পরিস্থিতির সমাধানকল্পে রাজতন্ত্র কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি উপরন্তু তারা বলপূর্বক কর আদায়ের কাজেই অধিক ব্যাস্ত ছিলেন। ফলে পার্লামেন্টের সাথে রাজশক্তির বিরোধের পথ খুলে যায়। 

৮. কর আরোপ সংক্রান্ত বিরোধ :- টিউডরদের পর Stuart রাজারা ক্ষমতায় এলে তারা পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের চেষ্টা করে। রাজতন্ত্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্লামেন্ট সরাসরি সংঘর্ষে অবতীর্ণ হয়। পার্লামেন্ট ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে '' Petition of Right '' জারি করেন। এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া কোনো কর আরোপ করা যাবে না। এর ফলে পার্লামেন্ট ও রাজতন্ত্রের মধ্যে সংঘাত তীব্র হয় এবং ১৬২৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা প্রথম চার্লস পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। 

৯. পুনরায় পার্লামেন্ট আহ্বান :- পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর রাজা প্রথম চার্লসকে প্রবলভাবে অভ্যন্তরীণ বিরোধের সম্মুখীন হতে হয়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। ফলে তিনি ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় পার্লামেন্ট আহ্বান করতে বাধ্য হন। পুনরায় পার্লামেন্ট আহ্বান বিরোধী শক্তিগুলির নিকট জয়সূচক ঘটনা ছিল। 

১০. পার্লামেন্ট প্রণীত আইনবিধি ( ১৬৪০ - ১৬৪২ ) :- পুনরায় পার্লামেন্ট আহুত হলে পার্লামেন্ট একগুচ্ছ রাজতন্ত্র বিরোধী আইন প্রণয়ন করে। যেমন - (i) সামরিক বাহিনীকে রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়। (ii) রাজতন্ত্র কর্তৃক প্রণীত সকল প্রকার অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। (iii) পার্লামেন্ট চার্চের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। (iv) রাজতন্ত্রের প্রতীক ষ্টার চেম্বার ও হাই কমিশনগুলিকে বাতিল করা হয়। (v) রাজার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিল আনার প্রস্তাব করা হয়। 

১১. Nineteen Propositions নামক চরমপত্র :- উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজা হ্যাম্পডেন পাঁচ বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করেন। এর প্রতিবাদ হিসাবে পার্লামেন্ট রাজাকে ১৬৪২ এর জুনমাসে '' Nineteen Propositions '' নামক এক চরমপত্র প্রেরণ করে। রাজা পার্লামেন্টের এই সকল দাবী মেনে নিতে অস্বীকার করলে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। রাজা পার্লামেন্টে সৈন্য সমাবেশের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। ফলে এর চরম পরিণতি হিসেবে ১৬৪২ এর আগস্ট মাসে ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।  


You May Also Like

0 comments