বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা।

by - September 25, 2021

বিদেশনীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা। 

অথবা , 

পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা। 




কোনো দেশের বিদেশনীতি নির্ধারণে ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সেই দেশের জাতীয় স্বার্থ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জাতীয় স্বার্থকেই প্রতিটি রাষ্ট্র বিদেশনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভিত্তিগত উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে , জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষাপটেই সমস্ত রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয় এবং সেইমত নিজেদের বিদেশনীতি পরিচালনা করে থাকে। আজকের আন্তর্জাতিক পরিবেশে পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রই গৃহীত ও অনুসৃত বিদেশনীতির মধ্যে দিয়ে সর্বাধিক পরিমানে নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার চেষ্টা করে থাকে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকেরা মনে করেন যে , কোনো রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির মূল ভিত্তি হল জাতীয় স্বার্থ। যেমন , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথক পৃথক ভাবে যেদুটি রাষ্ট্রজোট গঠন করেছিল সেই দুটিরই মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সুরক্ষিত ও প্রসারিত করা। পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থই অন্যতম প্রধান উপাদান - এ বিষয়ে কতগুলি যুক্তির অবতারণা করা যেতে পারে। যেমন - 


প্রথমতঃ - প্রত্যেক দেশের রাষ্ট্রনীতি , কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের দ্বারাই শাসকবর্গ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হন এবং এই স্বার্থকে বাস্তবায়িত করার অন্যতম মাধ্যম বিদেশনীতি। 

দ্বিতীয়তঃ - ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক যেমন লাভক্ষতির ওপর বা ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর অনেকটা নির্ভর করে তেমন একটা রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য একটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক পারস্পরিক লাভক্ষতি , স্বার্থ - প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালিত হয়। 

তৃতীয়তঃ - রাষ্ট্রীয় নেতারা যেহেতু জনগণের প্রতিনিধি তাই জনগণের বা সামাজিক চেতনাকে অস্বীকার করতে পারেন না। আবার সামাজিক চেতনা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের উৎস জাতীয় স্বার্থ। 

চতুর্থতঃ - বাস্তববাদী তাত্ত্বিক মরগেনথাউয়ের মতে , কূটনৈতিক কৌশল বা বিদেশনীতি জাতীয় স্বার্থের দ্বারাই পরিচালিত হওয়া উচিত। তিনি এক্ষেত্রে নীতি , আদর্শ , আইন - প্রভৃতিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। 

পঞ্চমতঃ - বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায় যে , জাতীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল বিষয়বস্তু হল জাতীয় স্বার্থ। সুতরাং , জাতীয় স্বার্থ দ্বারাই বিদেশনীতি রূপায়িত হবে - এমনটাই স্বাভাবিক। 

ষষ্ঠতঃ - ধর্মও জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বহু দেশে ধর্মের ভিত্তিতে বিদেশনীতি নির্ধারণ করা হয়। যেমন - ইরান , পাকিস্তান , সৌদি আরব - প্রভৃতি। 

সপ্তমতঃ - জাতীয় স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির জন্যই বিদেশনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে বিন্দুমাত্র উপেক্ষা করা যায়না। জাতীয় স্বার্থের উপাদান বলতে , আত্মরক্ষা , দেশের অখন্ডতা , জনগণের আনুগত্য প্রভৃতিকে বোঝায়। অর্থাৎ সহজ কথায় বলা যায় যে , জাতীয় নিরাপত্তাকে কোনো দেশের পক্ষেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। 

পরিশেষে বলা যায় যে , জাতীয় স্বার্থই হল কোনো রাষ্ট্রের বিদেশনীতির মূলমন্ত্র। তবে বৈদেশিক নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজের জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কোনো ক্ষেত্রেই অন্ধ জাতীয় স্বার্থকে প্রশ্রয় না দেওয়াও জরুরি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বার্থ ও বিশ্বমানবতার স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্চনীয়। এর ফলেই বিদেশনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের ধারণা অর্থবহ ও কার্যকর হয়ে উঠবে।   


You May Also Like

0 comments