জাতীয় স্বার্থরক্ষার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করো।
জাতীয় স্বার্থরক্ষার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করো।
জাতীয় স্বার্থরক্ষার পদ্ধতিসমূহ :-
১. পররাষ্ট্রনীতি :-
ফ্র্যাঙ্কেলের মতে , জাতীয় স্বার্থের ধারণা পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক নির্ধারক হল জাতীয় স্বার্থ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্র নিঃস্বার্থভাবে অপর কোনো রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে না। মূলতঃ জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
২. প্রচার :-
প্রচারের সাহায্যে একটি দেশ তার জাতীয় স্বার্থসমন্বিত পররাষ্ট্রনীতির অনুকূলে অন্যান্য দেশের মতামত গড়ে তোলে। পররাষ্ট্রনীতি রূপায়ণের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হল রাজনৈতিক প্রচার। প্রচারের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র তার গৃহীত নীতিকে বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চায়।
৩. জোট গঠন :-
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থরক্ষার অন্যতম একটি উপায় বা পদ্ধতি হল জোট গঠন। মূলতঃ জাতীয় স্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে জোট গঠন করে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ , দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির জোট NATO এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে গঠিত Warsaw জোটের কথা উল্লেখ করা যায়।
৪. অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ঋণ :-
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলি তাদের জাতীয় স্বার্থপূরণের লক্ষ্যে কাজ করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থরক্ষার কৌশল হিসেবে উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অর্থনৈতিক সাহায্য ও ঋণ প্রদান করে থাকে। এভাবে উন্নত দেশগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে ঋণগ্রহীতা উন্নয়নশীল দেশগুলির সমর্থন অতি সহজেই অর্জন করতে সক্ষম হয়।
৫. বলপ্রয়োগ :-
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিধর ও অতিবৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি অনেক সময় নিজেদের জাতীয় স্বার্থপূরণে অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ , অতীতে নিকারাগুয়া , অ্যাঙ্গোলা , গ্রেনাডার ওপর এবং সম্প্রতি ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের ওপর মার্কিনি আগ্রাসনের কথা বলা যায়।
৬. কূটনীতি :-
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেমন পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ , তেমনি পররাষ্ট্রনীতি রূপায়ণে কূটনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ , জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হল কূটনীতি। প্রকৃতপক্ষে একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবায়ন কূটনীতিবিদদের ওপর নির্ভর করে। কূটনীতিবিদদের দক্ষতার ওপর বৈদেশিক নীতির স্বার্থকতা নির্ভর করে। কোনো দেশ কূটনৈতিক স্তরে ব্যর্থ হলে তার জাতীয় স্বার্থও সুরক্ষিত থাকবে না।
পরিশেষে বলা যায় , জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে যেহেতু প্রত্যেক দেশের জাতি ও রাষ্ট্র যৌথভাবে যুক্ত , তাই সকল দেশই তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য উপরোক্ত উপায়গুলির প্রয়োগ করে থাকে। তবে , সারা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের অবস্থান , পরিবেশ , পরিস্থিতি ও স্বার্থ ভিন্ন ভিন্ন হলেও উপরোক্ত নির্দিষ্ট পন্থায় সকলে তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সদা তৎপর থাকে।
0 comments