ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ; right to freedom of religion

by - August 24, 2021

ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারগুলি আলোচনা করো। 




ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার : ২৫ - ২৮ নং ধারা :- 


মূল সংবিধানের প্রস্তাবনায় '' ধর্মনিরপেক্ষ '' শব্দটি যুক্ত ছিল না। এরপর ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে '' ধর্মনিরপেক্ষ '' শব্দটি প্রস্তাবনা অংশে যুক্ত করা হয়। অনন্তসায়ম আয়েঙ্গার ও সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের মতে , ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল এমন একটি রাষ্ট্র , যা ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে না , যা ধর্মীয় মতামত নির্বিশেষে সব ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে গণ্য করে এবং যা সাংবিধানিকভাবে বিশেষ কোনো ধর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে না কিংবা বিশেষ কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা বা বিরোধিতা করে না। এককথায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল , এমন এক রাষ্ট্র যা ধর্মীয় বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকে। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুসারে , রাষ্ট্রের কোনো নিজস্ব ধর্ম নেই। 


ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ : ২৫ নং ধারা :- 
ভারতীয় সংবিধানের ২৫ ( ১ ) নং ধারায় প্রত্যেক ব্যক্তির বিবেকের স্বাধীনতা , ধর্মস্বীকার , ধর্মপালন ও ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার্থে রাষ্ট্র ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বা যুক্তিযুক্ত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে। যেমন - 
(i) জনশৃঙ্খলা , সমাজ স্বীকৃত নীতিবোধ , জনস্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্র প্রয়োজনে ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। 
(ii) ধর্মের নামে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা , জনস্বার্থ বিঘ্নিত হলে বা , অমানবিক কার্যাবলি সংগঠিত হলে , নীতি বহির্ভুত আচার - অনুষ্ঠান প্রবর্তিত হলে - রাষ্ট্র ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। 
(iii) ধর্মাচরণের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সামাজিক কার্যাবলিগুলিকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 
(iv) সামাজিক কল্যাণসাধন ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে। 
(v) হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল মানুষের কাছে উন্মুক্ত রাখার জন্য রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে , হিন্দু শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। শিখ , জৈন , বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও এক্ষেত্রে হিন্দু। 


ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ : ২৬ নং ধারা :- 
সংবিধানের ২৬ নং ধারাতে ধর্মীয় সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগুলিকে বিশেষ কিছু অধিকার প্রদান করা হয়েছে। যেমন - 
(i) ধর্ম ও  দানের উদ্দেশ্যে সংস্থা স্থাপন ও রক্ষনাবেক্ষনের অধিকার।   
(ii)  নিজ নিজ ধর্ম বিষয়ক কার্যকলাপ নিজেরাই পরিচালনার অধিকার। 
(iii) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও ভোগদখলের অধিকার। 
(iv) আইন অনুসারে সম্পত্তি পরিচালনার অধিকার। 
তবে , জনশৃঙ্খলা , নৈতিকতা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য উক্ত অধিকারগুলির ওপর রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে। 


ধর্মীয় উদ্দেশ্যে কর আদায় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : ২৭ নং ধারা :- 
সংবিধানের ২৭ নং ধারায় বলা হয়েছে কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্ম - সম্প্রদায়ের প্রসার বা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কর প্রদান করতে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু ধর্মের প্রচার ও প্রসার , ধর্ম পরিচালনা , ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদির জন্য কর ধার্য করার পরিবর্তে অনুদান বা চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধকরণ : ২৮ নং ধারা :- 
ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ধর্মীয় শিক্ষাদানের ওপর কিছু কিছু বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ২৮ নং ধারায় বলা হয়েছে , 
(i) সম্পূর্ণভাবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা যাবে না। 
(ii) যেসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কিংবা সরকারি অর্থে আংশিকভাবে পরিচালিত , সেগুলিতেও শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না 
(iii) কোনো দাতা বা অছির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে , যদি দাতার উইলে কোনো বিশেষ ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ থাকে। 

পরিশেষে বলা যেতে পারে যে , নাগরিক ও বিদেশি নির্বিশেষে সকল ব্যক্তিকেই ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ভারতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে , ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র চরম সংকটের মুখে পড়েছে। অযোধ্যার রাম জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে হিন্দু - মুসলিম সাম্প্রদায়িক ও সংগঠনগুলি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা - হাঙ্গামায় মেতে ওঠে। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা , সবরমতি আশ্রমে শান্তি সমাবেশের ওপর হাঙ্গামা , ২০০৯ সালে ওড়িশার কন্ধমালে ৪৩ জন খ্রিস্টানের প্রাণনাশ - প্রভৃতি হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের ফ্যাসিবাদী কার্জকলাপের নিদর্শন - ইত্যাদি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করেছে।     


You May Also Like

0 comments