সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহকে আলোচনা করো। marriage as a social institution .

by - August 05, 2021

Discuss marriage as a social institution .

সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহকে আলোচনা করো। 




বিবাহ হল একটি প্রতিষ্ঠান। নর - নারীকে স্বামী - স্ত্রী তে পরিণত করে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান। বিবাহের মাধ্যমেই নর - নারীর সম্পর্ক সামাজিক বৈধতা ও স্বীকৃতি লাভ করে ও অনুমোদন লাভ করে পরিবারে পরিণত হয়। অন্যভাবে বলা যায় , স্বামী - স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্কের বৈধতা প্রকাশ করে তাদের মধ্যে সংঘঠিত বিবাহ। 

মলিনোস্কি বলেছেন , বিবাহকে শুধুমাত্র যৌন সম্ভোগের ছাড়পত্র হিসেবে সঙ্গায়িত করা যায় না , এটি প্রকৃতপক্ষে পিতৃত্বের স্বীকৃতি। 

দার্শনিক উইল ডুরান্টের মতে , বিবাহ শুধুমাত্র যৌন সম্পর্কের ছাড়পত্র নয় , এটি পিতা - মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক যার সামাজিক তাৎপর্য হল জাতিকে রক্ষা ও শক্তিশালী করা।

অ্যান্ডারসন ও পার্কারের মতে , বিবাহ হল এক বা একাধিক পুরুষ এবং এক বা একাধিক নারীর সমাজ স্বীকৃত স্থায়ী বন্ধন যা পিতৃত্বের উদ্দেশ্যেই যৌন সম্পর্ককে অনুমোদন করে থাকে। 

কিংসলে ডেভিস সন্তানের এই বৈধতা বা স্বীকৃতিকে Principles of legitimacy বলেছেন। 

ওয়েস্টার মার্ক বলেছেন , বিবাহ হল একটি নিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ অপেক্ষা অধিক কিছু। 

সুতরাং , বিবাহ হল একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান - যা সর্বজনীন , যা নরনারীর যৌন আচরণ অপেক্ষা পরিবার গঠন ও প্রতিপালন এবং সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের প্রতিপালন - ইত্যাদির উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করে। 


সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহ  :- 


বিবাহকে পরিবার গঠনের মূল একক হিসেবে ধরা হয়। সুতরাং বিবাহ হল , একটি মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের বহুবিধ ভূমিকা সমাজে বর্তমান। যেমন - 

১. বিবাহ ব্যবস্থা ব্যক্তিবর্গের যৌন চাহিদাকে সুস্থ ও সুনির্দিষ্ট উপায় পরিতৃপ্তি সাধনের পথ দেখায়। যৌন চাহিদার পরিতৃপ্তি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে স্বাভাবিক রাখে। 

২. বিবাহ ব্যবস্থা সমাজজীবনে যৌন ব্যাভিচার ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাকে দূর করে। 

৩. বিবাহের মাধ্যমেই বৈধ , স্বীকৃত পরিবারের সৃষ্টি হয় ; এই পরিবার হল সমাজের একক স্বরূপ। 

৪. বিবাহের মুখ্য উদ্দেশ্য পরিবার সৃষ্টির মাধ্যমে সন্তান প্রজনন করা। এর দ্বারা জাতক তার সামাজিক বৈধতা লাভ করে। এর দ্বারাই বংশগতির ধারা অব্যাহত থাকে। 

৫. শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়াই নয় , তার উপযুক্ত লালন-পালন , শিক্ষাদীক্ষা , সামাজিকীকরণ - প্রভৃতির জন্য দরকার শিশুর ও মা-বাবার স্থায়ী সংগঠন - যা বিবাহ দ্বারা স্থিরীকৃত হয়। 

৬. বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মানসিক বন্ধন বিশেষ। এই বন্ধন থেকেই জন্ম নেয় স্বামী স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রেম - প্রীতি - ভালোবাসা - স্নেহ - সহানুভূতি - সহযোগিতা প্রভৃতি আবেগ-অনুভূতি। 


৭. বিবাহ ব্যক্তিকে দৈহিক ও মানসিক পরিতৃপ্তি প্রদানের পাশাপাশি উভয়েরই সামাজিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান করে। 

৮. বৃহত্তর সমাজজীবনে নর-নারীর সম্পর্ককে একটি নির্দিষ্ট রূপ প্রদান করে বিবাহ ব্যবস্থা। 

৯. বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হয়। এছাড়া বিবাহ লিঙ্গভেদের উপর ভিত্তি করেই পারিবারিক শ্রম বিভাজনের পথ সুগম করে। 

১০. পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কোনো মহিলার পরিচয় নির্ধারিত হয় তার পিতা বা স্বামীর পরিচয়ে। বিবাহিত জীবনে মহিলার সামাজিক পরিচয় ও সামাজিক মর্যাদা বহুলাংশে নির্ভরশীল হয় সে কাকে বিয়ে করেছে তার উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ বিবাহের নির্দিষ্ট বয়সে মহিলাদের সামাজিক পরিচয় নির্ধারণে বিবাহের ভূমিকা অন্যতম। 
 
১১. বিবাহ শুধুমাত্র নর-নারীর মিলনই নয় , এটি ন্যূনতম দুটি পরিবারের মিলন। এর উপর ভিত্তি করেই  গড়ে ওঠে নানাবিধ আত্মীয়তার সম্পর্ক। এভাবে সামাজিক সংহতির ভিত্তি দৃঢ়তা লাভ করে। 

১২. হিন্দু ধর্মে বিবাহের অন্যতম গুরুত্ব হল - এটি একটি ধর্মীয় পবিত্র অনুষ্ঠান বিশেষ। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রীর একত্রে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও বিবাহের সামাজিক গুরুত্ব বর্তমান। গান্ধীজীর মতে - Marriage is the fence that protects religion .

প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার নিজের মত জীব সৃষ্টির জৈবিক তাড়না থাকে। এর সাথে যুক্ত হয় বংশরক্ষার বিষয়টি। সুতরাং , নর নারীর মধ্যে বিবাহ তাদের সেই সামাজিক প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন , সন্তান প্রজনন ও প্রতিপালন , সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যপালন ইত্যাদির মাধ্যমে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি সমাজের মৌলিক কাঠামো বজায় রেখে সমাজের স্থায়িত্ব ও প্রগতি রক্ষা করে চলেছে। এই সকল কারণেই সমাজতত্ববিদগণ বিবাহকে মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।    

You May Also Like

0 comments