মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো। hunter commission 1882

by - August 02, 2021

মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো। 



1882 খ্রিস্টাব্দের 3 ই ফেব্রুয়ারী তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড রিপন তাঁর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার - কে সভাপতি নিযুক্ত করে ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। হান্টার কমিশনকে প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে সেই সম্পর্কেই সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল ; কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষার উপর নির্ভরশীল , তাই কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কেও কতকগুলি সুপারিশ করেন। 


১. মাধ্যমিক শিক্ষা ও বেসরকারি প্রচেষ্টা :- 
(i) মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব ধীরে ধীরে বেসরকারি কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার ওপর ন্যাস্ত করতে হবে। 
(ii) মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির উন্নতির জন্য অধিক পরিমাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে হবে। 
(iii) সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির মতই বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকেও সমান মর্যাদা প্রদান করতে হবে। 
(iv) প্রতিটি জেলায় একটি করে আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 
(v) অনগ্রসর অঞ্চলের জন্য সরকারি উদ্যোগে মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। 
(vi) বেসরকারি প্রচেষ্টায় যাতে আরও বেশি সংখ্যক মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় , তার জন্য স্থানীয় পরিচালন সমিতিগুলিকে নিজেদের বিদ্যালয়গুলিতে বেতন নির্ধারণের স্বাধীনতা দিতে হবে। 


২. পাঠক্রমে A কোর্স ও B কোর্স - প্রবর্তন :- 
কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে A কোর্স এবং B কোর্স - এই দুভাগে ভাগ করার সুপারিশ করেন। A কোর্সের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রস্তুতির জন্য তত্ত্বমূলক শিক্ষা গ্রহণ করবে। আর B কোর্সের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করবে। অবশ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একই শিক্ষা লাভ করবে। তারপর তারা A কোর্স বা B কোর্স গ্রহণ করার সুযোগ পাবে। 
যেসকল শিক্ষার্থী A কোর্স নেবে , তাদের কলেজীয় শিক্ষা পাবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষা হবে। কমিশন আশা করেছিল , বেশিরভাগ শিক্ষার্থী B কোর্স তথা ব্যবহারিক শিক্ষা বেছে নেবে। বাস্তবে কিন্তু তা ঘটেনি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী  A কোর্সের প্রতিই আকৃষ্ট হয়েছিল। 

৩. নিম্নমাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষাকে স্বীকৃতিদান :- 
কমিশন নিম্নমাধ্যমিক স্তরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী ইংরেজি অথবা মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করেছিল। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম কী হবে সে বিষয়ে কমিশনের কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ না থাকায় সেখানে ইংরেজিকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ফলে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা কোনো বিদ্যালয়ের পক্ষেই সম্ভবপর হয়নি। 


৪. শিক্ষক - শিক্ষণ :- 
কমিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সরকারের কাছে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয় - শিক্ষণ বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা না থাকলে কোনো ব্যক্তিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। শিক্ষক নিয়োগ করার আগে , শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষণতত্ত্ব সম্পর্কে পরীক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

হান্টার কমিশনের মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে সুপারিশের মূল্যায়ণ :- 


প্রথমতঃ - কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করায় পরবর্তী বিশ বছরে দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। 

দ্বিতীয়তঃ - কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার জেলায় জেলায় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। ওই বিদ্যালগুলি আজও মডেল স্কুলের ভূমিকা পালন করে চলেছে। 

তৃতীয়তঃ - মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে A কোর্স ও B কোর্স প্রবর্তনের সুপারিশ করে কমিশন গতানুগতিক পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনের উপযোগী কর্মভিত্তিক শিক্ষার যে সুযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন , তার মধ্যে বর্তমান যুগের বহুমুখী মাধ্যমিক শিক্ষার বীজ নিহিত ছিল। সুতরাং বলা যায় যে , কমিশনের ওই সুপারিশের মধ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় ছিল। 

চতুর্থতঃ - মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্র থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার যে নীতি কমিশন সুপারিশ করেছিল , পরবর্তীকালে তার প্রভাবে দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উৎসাহের সৃষ্টি করেছিল।    


You May Also Like

0 comments