পরিবারের সংজ্ঞা দাও। পরিবারের কার্যগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন আলোচনা করো।Define family . Discuss the changes in family structure .

by - August 03, 2021

Define family . Discuss the changes in family structure .

পরিবারের সংজ্ঞা দাও। পরিবারের কার্যগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন আলোচনা করো। 




পরিবারের সংজ্ঞা দাও। পরিবারের কার্যগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন আলোচনা করো। 
পরিবার কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Family ; এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ Famulas থেকে যার অর্থ Servant বা ভৃত্য। রোমান আইনে Famulas শব্দটি ব্যবহার করা হত ভৃত্যদের সমষ্টি বোঝাতে।  এই ভৃত্যের সমষ্টি হল যারা একই সংসারের অন্তর্ভুক্ত। কালক্রমে ভৃত্যদের সমষ্টি না বুঝিয়ে সংসারের সমস্ত ব্যক্তিদের সমষ্টিকেই বোঝানো হয়। 


এলিয়ট ও মেরিলের মতে , পরিবার হল স্বামী স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে গঠিত একটি জৈব সামাজিক একক। 

অগবার্ন ও নিমকফ - এর মতে , যখন আমরা পরিবারের কথা ভাবি তখন কম - বেশি স্থায়ী , সন্তানসহ বা সন্তানহীন স্বামী-স্ত্রী অথবা সন্তানসহ স্বামী বা স্ত্রী একাকী , এরূপ একটি সংগঠনের ছবি পাই। যৌন সম্পর্ক ও পিতা-মাতার দায়দায়িত্ব সম্পাদন হল পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। 

বার্জেস ও লকের মতে , পরিবার হল বিবাহ , রক্তের সম্পর্ক বা দত্তক সূত্রে আবদ্ধ গোষ্ঠী যারা অভিন্ন বাসগৃহে বসবাস করে ; যারা স্বামী-স্ত্রী , পিতা-মাতা , পুত্র-কন্যা , ভাই-বোনের যথাযোগ্য সামাজিক ভূমিকা অনুযায়ী পরস্পরের সাথে আন্তঃক্রিয়া ও সংযোগ সম্পর্কে সামিল হয়ে এক অভিন্ন সংস্কৃতি গড়ে তোলে। 

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করে কিছু বিষয়ের অবতারণা করা যায় , যার দ্বারা পরিবারের ধারণাটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। 
(ক ) পরিবার হল স্বামী - স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানবর্গের একটি গোষ্ঠী। 
(খ ) পরিবার বিবাহ , রক্তের সম্পর্কে বা দত্তকসূত্রে গড়ে ওঠে। 
(গ ) পরিবারের সদস্যরা একত্রে একটি নির্দিষ্ট আবাসে বসবাস করে। 
(ঘ ) পরিবারের মধ্যে দিয়েই বংশানুক্রম রক্ষিত হয়। 
(ঙ ) পরিবারের প্রত্যেক সদস্যরই নির্দিষ্ট সামাজিক ভূমিকা থাকে ও অন্যান্য দায়িত্ব কর্তব্য থাকে। 
(চ ) পরিবারের কোনো না কোনো আর্থিক সংস্থান থাকে যার দ্বারা সদস্যদের ভরণপোষণ সম্ভব হয়। 
(ছ ) পরিবার মোটামুটি স্থায়ী হয়। 
(জ ) পরিবারের একটি নাম থাকে। 
(ঝ)  পরিবার তার সদস্যদের দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান করে। 
(ঞ ) পরিবার তার সদস্যদের মধ্যে এক অভিন্ন সংস্কৃতি গড়ে তোলে। 


বর্তমানে পরিবারের গঠনগত ও কার্যগত পরিবর্তন :- 


বিগত বেশ কয়েক দশকে পরিবার ব্যবস্থায় বেশ কিছু গঠনগত ও কার্যগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।  পূর্বতন সমাজব্যবস্থায় পরিবারগুলি মূলত যৌথ পরিবার ছিল। এর সদস্যসংখ্যা ছিল বেশি , স্বভাবতই  আয়তনেও বৃহৎ ছিল। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে গিয়ে একক পরিবার তৈরি হচ্ছে। এর কারণ শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রাধান্য - তা নয় ; মানুষের রুজি - রোজগার শিল্প কেন্দ্রিক হওয়াটাও অন্যতম কারন। 

১. যৌন আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রণ :- 
পরিবারের এই ভূমিকাটির এখনও পর্যন্ত খুব একটা পরিবর্তন সাধিত হয়নি। বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজস্বীকৃত পরিবার সৃষ্টি ও তার দ্বারা যৌন আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রণ এখনও ঘটে চলেছে। যদিও বিবাহ ব্যবস্থায় যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। তবে একথা সত্যি যে , পাশ্চাত্য দেশগুলিতে বিবাহের পূর্বে একাধিক মানুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারটির বৃদ্ধি ঘটেছে। ওই সকল দেশগুলিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বৈধ উপায়ে পরিবার সৃষ্টির পাশাপাশি , চুক্তিভিত্তিক একত্রে বসবাস বা Live together এর প্রবণতা বেড়ে চলেছে। এই সকল পরিবর্তিত ব্যবস্থার ঢেউ লেগেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাতেও। 

২. সন্তান প্রজনন সংক্রান্ত ভূমিকার পরিবর্তন :- 
পরিবারের সন্তান প্রজননের বিষয়টির ক্ষেত্রে , পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বর্তমানে পিতা-মাতাগণ অধিক সংখ্যায় সন্তান গ্রহণে আগ্রহী নন। পাশ্চাত্য পরিবারের কোথাও কোথাও সন্তান না থাকায় বিষয়টি পরিবারের অন্যতম উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য বা  '' gloring feature '' হিসেবে বিবেচিত হয়। 
সাবেকি হিন্দু পরিবারগুলিতে ইতিপূর্বে মাতা পিতা অধিক সংখ্যায় সন্তানের জন্ম দিতেন , কিন্তু বর্তমানে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীগণ একটি বা দুটি সন্তানই যথেষ্ট মনে করে থাকেন। সন্তান প্রজননের বিষয়টি তাই এখন Not by chance , but by choice হয়ে থাকে। 


৩. সন্তান প্রতিপালন ও শিক্ষামূলক ভূমিকার ক্ষেত্রে পরিবর্তন :- 
বর্তমানে একক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীগণ পারিবারিক ও অর্থনৈতিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় এবং অন্য সদস্যদের উপস্থিতি না থাকায় , স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রতিপালন ও তার শিক্ষাদীক্ষা প্রভৃতির দায়িত্ব এসে বর্তেছে ক্রেস , নার্সারি স্কুল , ছাত্রাবাস , শিশুসদন প্রভৃতি অপারিবারিক সংস্থাগুলির ওপর। আগে এগুলি পরিবারের মধ্যেই , পরিবারের সদস্যদের দ্বারা সম্পাদিত হয়ে যেত।  

৪. নিরাপত্তামূলক ভূমিকার পরিবর্তন :- 
ইতিপূর্বে পরিবারের সকল সদস্যদেরই সকল রকম নিরাপত্তা পরিবার দিয়ে থাকতো। বর্তমানে একক  পরিবারে অল্প কয়েকজন সদস্য নিজেরাই বিভিন্ন সময়ে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগ করেন। এই জাতীয় পরিবারে দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী , অসুস্থ , বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সদস্যদের ক্ষেত্রে তাদের দেখাশোনা ও নিরাপত্তা রক্ষার ভার সাধারণত দেওয়া হয়না। এগুলি বর্তমানে করে থাকে - হাসপাতাল , প্রতিবন্ধী আবাস , বৃদ্ধাশ্রম প্রভৃতি সংস্থাগুলো। 

৫. অর্থনৈতিক ভূমিকার ক্ষেত্রে পরিবর্তন :- 
পূর্বতন পরিবারগুলিকে বলা হত Production Unit বা উৎপাদনশীল একক। অর্থাৎ পরিবার নগদ অর্থ রোজগারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভোগ্যদ্রব্যাদি অধিকাংশই উৎপাদন করত। বর্তমানের পরিবারগুলি হল Consumption Unit বা ভোগকারী একক। অর্থাৎ এজাতীয় পরিবারে নগদ অর্থটুকুই রোজগার হয়ে থাকে। ভোগ্যপণ্য - ইত্যাদির জন্য একমাত্র বাজারের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। 

৬. সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকার পরিবর্তন :- 
পূর্বতন সমাজে সামাজিকীকরণ পরিবারের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হত। বর্তমান সমাজে সামাজিকীকরণে পরিবারের থেকেও বেশি ভূমিকা পালন করে অপারিবারিক সংস্থাগুলি। এ প্রসঙ্গে বলা যায় , ইতিপূর্বের প্রজন্মে সামাজিকীকরণের দ্বারা শিশুর All round development বা সামগ্রিক উন্নয়নের দিকটি নিয়ে অভিভাবকগণ তত বেশি সচেতন ছিলেন না। কিন্তু আধুনিক প্রজন্মের অভিভাবকগণ এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। শিশুর দৈহিক - মানসিক বিকাশ , বিদ্যালয়ে তার প্রগতি ,  কেরিয়ার - ইত্যাদি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেন বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকগণ। স্বভাবতই শিশুর  সামগ্রিক বিকাশের জন্য যত রকমের সংস্থা আছে - সেগুলির ওপর তাঁরা নির্ভর করে থাকেন। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা ক্রমহ্রাসমান। 


৭. মর্যাদা আরোপ সংক্রান্ত কার্যাবলীর ক্ষেত্রে পরিবর্তন :- 
ইতিপূর্বে ব্যক্তির মর্যাদা স্থির হত তার পারিবারিক মর্যাদার ভিত্তিতে। এ ছিল তাদের আরোপিত মর্যাদা।  কিন্তু বর্তমানে ব্যক্তির মর্যাদা তার যোগ্যতা , পেশা , রোজগার ও সামাজিক গুণাবলীর ভিত্তিতে স্থির হয়।  অর্থাৎ , এক্ষেত্রে পরিবারের গুরুত্ব যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। 

৮. প্রমোদমূলক ভুমিকার ক্ষেত্রে পরিবর্তন :- 
ইতিপূর্বে পরিবারের সদস্যদের মনোরঞ্জনের চাহিদা পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই মিটে যেত। একত্রে খাওয়া-দাওয়া , খেলাধুলা , হাসি-ঠাট্টা - এগুলি ছিল মনোরঞ্জনের মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে পরিবারের সদস্যগণ তাদের সেই মনরঞ্জনমূলক চাহিদা পূরণ করে থাকেন রেডিও-টিভি , সিনেমা , ক্লাব , বার , রেস্তোরাঁ , নাচের ক্লাব , মোবাইল ফোন , ইন্টারনেট - প্রভৃতি বাণিজ্যক মাধ্যম ও সংস্থাগুলির মাধ্যমে। এ ব্যাপারে বর্তমানে পরিবারের ভূমিকা নেই বললেই চলে। 

৯. মহিলাদের ভূমিকার পরিবর্তন :- 
পিতৃতান্ত্রিক যৌথ পরিবারগুলিতে '' পুরুষের কর্তৃত্ব মহিলাদের আনুগত্য '' বা Men for field , women for hearth - এগুলো ছিল মূল ধারণা। কিন্তু বর্তমানে মহিলাদের ভূমিকা শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজকর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। সামাজিক , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কর্তৃত্ত্ব স্থাপন করেছেন। ঠিক এমন করেই পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে থেকে শুরু করে পরিবারে কর্তৃত্বের ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে নারীদের ভূমিকা। বিশেষ করে ৭০ এর দশকের বিশ্বব্যাপী নারী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা আজ আর কোনোভাবেই অবদমিত নন। তাই পরিবার এবং পরিবারের বাইরেও তাঁদের ভূমিকার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। 

এছাড়া পরিবারের মধ্যে সদস্যদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের জাগরণ ধর্মীয় সংস্কার ,  রীতিনীতির পরিবর্তন , প্রাচীন বিশ্বাস - ইত্যাদির প্রতি অনীহা , ঐতিহ্যকে বহন না করে চলার মানসিকতা - ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবর্তন অবিরত ঘটে চলেছে এবং পরিবারের কার্যগত ও গঠনগত বা কাঠামোগত বৈশিষ্টগুলির আমূল রূপান্তর ঘটছে।

You May Also Like

0 comments