ভারতে নগরোন্নয়নের পরিকল্পনাগুলি কতখানি সফল হয়েছে তা আলোচনা কর।

by - August 23, 2021

ভারতে নগরোন্নয়নের পরিকল্পনাগুলি কতখানি সফল হয়েছে তা আলোচনা কর। 




ভারতে নগরায়ন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির থেকে শ্লথ গতিতে হয়েছে। ২০০১-সালের জনসংখ্যা-গণনায় দেখা যাচ্ছে মাত্র ভারতে নগরায়নের হার ২৮-শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে দেখা দিয়েছে এই গতির আরও ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা। অর্থনৈতিক সংস্কার উন্মুক্ত করে দিয়েছে লগ্নী ও উন্নয়নের দরজা।  


ভারত এর আগে নগরায়ন-বিষয়ে খুব একটা নজর দেয়নি। তবে , ভারতে ২০২৫-সাল নাগাদ যুক্ত হতে যাচ্ছে ১৩-টি নগর যার প্রতিটিতে থাকবে ১০-মিলিয়নের বেশি জনমানুষ। নগরায়নের গতি ও মাত্রা এতটাই যে সাধারণ প্রথা মত টাকা ঢাললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। আরও রাস্তা বানালে মানুষের ঘন সন্নিবেশ থেকে হয়তো সাময়িকভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, কিন্তু বর্ধিত পরিবেশ দূষণ থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে না। আরও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করলেই চরিত্রগত অদক্ষতার জন্য বণ্টন-ক্ষয়, ক্ষরণ, ও ক্রমবর্ধমান অপহরণ ইত্যাদি কমবে না। 

ভারতে আছে সব থেকে বেশি গ্রামীণ জনমানুষ- ৮৫৭ মিলিয়ন, তার পরেই চীনে- ৬৩৫ মিলিয়ন।
অবশ্য, বর্তমান ভারত সরকার ১০০-টি SMART-শহরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যা' রূপায়িত হবে আগামী কয়েক বছরে।

এখন নগরায়িত ভারতের চেহারা হল 'ছড়ানো'- নানা রূপের বড় ও ছোট নগরের সমারোহ। হয়তো ভারত এই ছড়ানো মডেলের পথেই চলবে যেহেতু এটি তার 'ফেডারেল'- সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। 

নগরের জনসংখ্যা এবং তার সঙ্গে আয় যত বৃদ্ধি পাবে, প্রতিটি মুখ্য পরিষেবার জন্য যেমন, জল, পরিবহন, নিরাময়-ব্যবস্থা, স্বল্প-আয়ের মানুষের জন্য বাসস্থান ইত্যাদির চাহিদা তত বাড়বে- এক হিসাবে পাঁচ- থেকে সাত- গুণ। বর্তমান ছন্দে চললে ভারত পিছিয়ে পড়বে পরিরক্ষিত ও উন্নত শহর নির্মাণের আদর্শ থেকে।
এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে নাগরিক 'ইনা্‌ফ্রাস্ট্রাকা্‌চারে' ভারতের বর্তমান ব্যয় ১৭- মার্কিন ডলার জন-প্রতি, যখন আদর্শ মান হচ্ছে ১০০- মার্কিন ডলার। এক হিসাব মত আগামী ২০-বছরে লগ্নীর প্রয়োজন হবে আনুমানিক ১-মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০৩০-সালে ভারতের নগরগুলিতে জনসংখ্যা বেড়ে হবে ১৪০০-মিলিয়নের কাছাকাছি। প্রদেশগুলির মধ্যে দেখা যাচ্ছে তামিলনাড়ু নগরায়িত হয়েছে সব থেকে বেশি।


নগরবাসীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ থাকে বস্তিতে। কিন্তু সাধারণ ধারণার বিপরীতে বড় বড় শহরে সাধারণ জনসংখ্যা-বৃদ্ধির তুলনায় বস্তিবাসীদের সংখ্যা-বৃদ্ধি হয়েছে অনেক ধীর গতিতে। কারণগুলি হল :

(ক ) 'রিয়েল এস্টেটে'-মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে হয়েছে বর্ধিত বাসোচ্ছেদ। 

(খ ) উৎপাদনে কর্মসংস্থানের অভাব। 

(গ ) জনপরিবহন- ও গৃহ-ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। 

(ঘ ) গ্রামত্যাগ করে শহরে যাওয়ার আকর্ষণ সাধারণত: সীমাবদ্ধ কুশলী ও শিক্ষিত মানুষের মধ্যে।

পাশাপাশি চীনের চিত্রটি তুলনায় আনা যেতে পারে কারণ, চীনে নগরায়ন হচ্ছে অনেক দ্রুতগতিতে :
মহানগরগুলিতে ( মোট জনসংখ্যা ১০-মিলিয়নের বেশি ) চীনেদের থেকে ভারতীয়দের বসবাস অনেক বেশি- প্রায় দ্বিগুণ। কারণ, 

(ক ) গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরগুলি অনেক বেশি শিল্পোন্নত ;

(খ )  গ্রামত্যাগ করে শহরে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা। 

উদাহরণস্বরূপ, চীনের Zhejiang প্রদেশের কথা ধরা যাক- যার একটি শহর Datang-এ তৈরি হয় পৃথিবীর প্রয়োজনের এক-তৃতীয়াংশ মোজা ; Shengzhou-তে নেকটাই তৈরি হয় (যদিও স্থানীয় অধিবাসীরা নেকটাই পরেন না) পৃথিবীর প্রয়োজনের তিন-চতুর্থাংশ ; এবং আরেকটি শহর Yiwu হল বোতাম উৎপাদক- বিশ্বের সবথেকে বড়।

ভারতের ছোট ছোট জায়গা ( একটি হল তামিলনাড়ুর কয়ম্বটর জেলার তিরপুর, যেখানে তৈরি হয় জামাকাপড়); তবে এরকম চিত্র বেশি নেই।

নাগরিক পরিষেবা:

ভারতীয় সংবিধানের ৭৪-সংশোধনীতে নাগরিক শাসন ব্যবস্থার কিছু কিছু বিষয় আলোচিত হয়েছে এবং JNNURM-প্রোগ্রামে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে; তবে কোনও কোনও প্রদেশ দ্বারা অনেক সময়েই তা' পালনে দ্বিধা দেখা যায়।

বেশিরভাগ সময়েই ( ব্যতিক্রম হল মুম্বাই-এর BEST ও হালে নাগপুরের জল-পরিষেবা কোম্পানী ) মিউনিসিপ্যালিটি-/করপোরেশন-গুলি তাদের নিজেদের ডিপার্টমেণ্টের মধ্য দিয়ে কাজ করায়; অথচ তারা আর্থিকভাবে দেউলে, ট্যাক্স বা ঋণ করার ক্ষমতা এদের দেওয়া হয়নি এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে এরা প্রাদেশিক সরকারের উপর নির্ভরশীল। নিজেদের আয় এতই সামান্য যে বাজার থেকে ঋণ নিতে পারেনা।

(ক ) মহানগরগুলিতে মিউনিসিপ্যাল-পরিষেবার জন্য যে অর্থ চার্জ করা হয় তা' সাধারণত: খরচের এক-চতুর্থাংশের কম ;

(খ ) রাজনৈতিক চাপে পরিষেবা-চার্জ রাখা হয় অত্যন্ত কম এবং তা'ও ঠিক মত আদায় হয়না ;

(গ ) ভারতের GDP-র দুই-তৃতীয়াংশ এবং মোট করের ৮০-শতাংশ উৎপন্ন হয় নগরগুলিতে অথচ, নগরের স্থানীয় সংস্থাগুলির রাজস্ব GDP-র ১-শতাংশের কম ;

(ঘ ) বেশীরভাগ নগর ও মহানগরে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ হয় সেকেলে ও উৎকোচ-বশীভূত প্রথার দ্বারা, ফলে নগরগুলি বঞ্চিত হয় 'রিয়েল এস্টেট'-এর দরবৃদ্ধির সুবিধা থেকে।


ভারতে বহু জাতীয় ও প্রাদেশিক-স্তরের প্রতিষ্ঠানের আছে অব্যবহৃত জমি। রাজনৈতিক ক্ষমতার বাইরে অথচ ব্যবস্থাপক সভার কাছে দায়বদ্ধ স্বাধীন পেশাদার সংস্থাগুলির দ্বারা বন্ধকী-জমির ও সুদের ভর্তুকি ব্যবহার করে সাধারণের জন্য গৃহের ব্যবস্থা সহজে ও তাড়াতাড়ি করা যেতে পারে।

SMART শহর এবং ICT-enabled পরিষেবা যথা, e-স্বাস্থ্য, e-শিক্ষা, e-যোগাযোগ ইত্যাদির সংযুক্তিতে সঙ্গতির তৎপর ব্যবহার পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।

ভারতের মোট জনসংখ্যা (২০১৪-সাল) হল ১.২৭-বিলিয়ন ; ৩০-সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে দেশের মোট টেলিফোনের (landline) সংখ্যা হল ৯৫৭.৬ মিলিয়ন এবং মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা হল ৯৭১ মিলিয়ন। দেখা যাচ্ছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে মোবাইলের প্রসার সহজেই এনে দেবে নাগরিকদের হাতে তথ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)-র ব্যবহার। পরিষেবা সহজ হবে মোবাইল-ফোন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে যা' ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ব্যবহার করে। তা'ছাড়া ২০০০-সাল থেকেই দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে কম্পুটারের ব্যবহার শেখার ব্যবস্থা করেছে ভারত সরকার ; তখনকার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এখন ভোটের অধিকার পাওয়া জনমানুষ। পাশাপাশি কম্পুটার নেটওয়ার্কে 'broadband'-এর প্রসার বাড়ছে। অতএব, ICT-ব্যবহারে কম্পুটার ব্যবহারও চলবে।
তা'ছাড়া, ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ আছে, সেখানে বিগত অন্তত: কুড়ি বছর ধরে গবেষণা হচ্ছে জনমানুষের সেবায় মোবাইল-ব্যবহার বিষয়ে। রাজ্য সরকার- এবং মিউনিসিপ্যালিটি-গুলি এইসব গবেষণার সুফল অল্প খরচে ব্যবহার করতে পারে।    

You May Also Like

0 comments