শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক :- Relation between intelligence and education

by - July 06, 2021

শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক :- 




শিক্ষা হল শিক্ষার্থীর জীবনব্যাপী এক প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের ও পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং সমাজের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে তোলে। অন্যদিকে , বুদ্ধি হল একটি সামগ্রিক ক্ষমতা যা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্রিয়া করতে , যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে এবং সার্থকভাবে পরিবেশের সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করে। 


শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধির একটি সম্পর্ক বর্তমান। বস্তুত ব্যক্তির বুদ্ধি না থাকলে শিক্ষা বা নির্দেশনা সার্থক হতে পারেনা। এখন প্রশ্ন হল বুদ্ধি ও বুদ্ধির অভীক্ষা কীভাবে শিক্ষা ও শিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত। সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল। 

১. বিদ্যালয় ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে :- 
বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি নেওয়ার সময় তাদের বুদ্ধির বিষয়ে অর্থাৎ বুদ্ধ্যঙ্ক সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। সাধারণত বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়ার সময় তাদের পূর্বার্জিত  জ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু অর্জিত জ্ঞানের পাশাপাশি বুদ্ধি অভীক্ষা প্রণয়ন করে বুদ্ধির পরিমাপ করাও উচিত। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে , অনেক সময় শিক্ষার্থীদের এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। সেই সময়ে বদলির প্রমাণপত্রে শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার তথ্যাদি থাকলেও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান একই প্রকার হয় না। তাই বুদ্ধির পরিমাপের পর ভর্তির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়তে হয় না। 


২. শিক্ষার্থীদের বিভাগীয়করণের ক্ষেত্রে :- 
বর্তমানে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে একই শ্রেণিতে অসংখ্য শিক্ষার্থী পঠন-পাঠন করে। তারা একই শ্রেণিতে পড়লেও তাদের সকলের মেধা এবং বুদ্ধ্যঙ্ক  একই প্রকারের হয় না। তাছাড়া একসাথে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাও অসুবিধাজনক। তাই শিক্ষার্থীদের একই শ্রেণীর বিভিন্ন বিভাগে যেমন - A,B,C,D,E - ইত্যাদিতে বিভক্ত করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। এই বিভাগীয়করণের ক্ষেত্রে বুদ্ধি অন্যতম শর্ত হওয়া উচিত। একই শ্রেণীতে পাঠরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুদ্ধ্যঙ্ক বা মেধার খুব বেশি মাত্রায় বৈষম্য হলে পঠন পাঠনে বেশ অসুবিধা হয়। 

৩. শিক্ষার সীমারেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে :- 
বুদ্ধির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের একটি নির্দিষ্ট সীমা টানা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে -
(i) যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 50 - 70 এর মধ্যে সেই সব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে 10 - 11 বৎসর পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীতেই থাকে। অধিক সুযোগ সুবিধা পেলে তাদের মধ্যে কয়েকজন 14 - 15 বৎসরে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ হতে পারে .
(ii) যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 70 - 90 এর মধ্যে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত গঠন করতে পারে। 
(iii) যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 90 - 100 এর মধ্যে তারা অনুশীলন , পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে স্নাতক ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। 
(iv) যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 110 এর অধিক তারা পরিবেশগত সুযোগ সুবিধা পেলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। 


৪. পাঠক্রম নির্দেশনার ক্ষেত্রে :- 
শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন কলা , বিজ্ঞান , বাণিজ্য - ইত্যাদি। বুদ্ধ্যঙ্ক অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম গ্রহণ করা উচিত। কোন শিক্ষার্থী কী ধরনের পাঠক্রম গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে সাফল্য পাবে , তা বুদ্ধির পরিমাপের দ্বারা নির্ধারণ করা উচিত। মোটকথা শিক্ষার পাঠক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীর বুদ্ধির নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। 

৫. বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে :- 
প্রতিটি দেশে যেমন কিছু শিক্ষার্থী প্রতিভাবান থাকে , তেমনি কিছু শিক্ষার্থী অল্প বুদ্ধিসম্পন্নও হয়। এইসব শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির অভীক্ষার দ্বারা খুঁজে বের করে , তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করলে , প্রতিভাবানরা দেশের সার্বিক মঙ্গলের কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্যদিকে পিছিয়ে পড়া বা অল্প বুদ্ধিসম্পন্নদের খুঁজে বের করে তাদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে সমাজের উপকার হয়।  মোটকথা বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে বুদ্ধির পরিমাপ বিশেষভাবে প্রয়োজন। 

৬. আশানুরূপ ফললাভে অসমর্থদের ক্ষেত্রে :- 
আমাদের দেশে বহু শিক্ষার্থী উপযুক্ত মেধা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন মানসিক কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারে না। এইসব Under achiever দের বুদ্ধির অভীক্ষা দ্বারা বাছাই করে , তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করলে , তারা বিশেষভাবে উপকৃত হয়। সমাজ এবং দেশও প্রগতির পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পায়। 

৭. শিক্ষকদের মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে :- 
যে কোনো শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে বুদ্ধি অভীক্ষা প্রয়োগ করা হয়। বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উন্নত ধরনের পঠন-পাঠনের সাহায্যে মেধাবীদের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে উপযুক্ত সহায়তা দিয়ে থাকেন।  ওইসকল শিক্ষক-শিক্ষিকা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। 


৮. বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে :- 
বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দানের ব্যবস্থা করে। বৃত্তি দানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার পাশাপাশি তার বুদ্ধির পরিমাপ বা বুদ্ধ্যঙ্ক সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান বৃত্তি প্রদানে , শিক্ষার্থী নির্বাচনে অন্যান্য শর্তাবলির সঙ্গে শিক্ষার্থীর বুদ্ধ্যঙ্ককে একটি শর্ত হিসাবে বিবেচনা করার ওপর জোর দিয়েছে। 

৯. মানসিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে :- 
ব্যক্তির মানসিক ব্যাধির সঙ্গে তার বুদ্ধির একটা সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনোচিকিৎসকগণ রোগীর অন্যান্য আচরণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি বুদ্ধির পরিমাপও করে থাকেন।  পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে - বুদ্ধির স্বল্পতা মানসিক ব্যাধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। 

১০. সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে :- 
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী গ্রহণ করবে , তার প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বুদ্ধির অভীক্ষার প্রচলন ঘটেছে। 

১১. বৃত্তিগত নির্দেশনার ক্ষেত্রে :- 
শিক্ষার্থীদের বৃত্তিগত নির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে বর্তমানে তাদের আগ্রহ , দক্ষতা , প্রবণতা , বিশেষ ক্ষমতা প্রভৃতির পাশাপাশি বুদ্ধ্যঙ্ক সম্পর্কে অবহিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হচ্ছে। কারণ মনোবিদ বার্ট ( Burt ) একটি গবেষণায় বুদ্ধ্যঙ্ক -র পরিপ্রেক্ষিতে বৃত্তির শ্রেণীবিভাগ করেছেন।  






You May Also Like

0 comments