বিস্মৃতির কারণ discuss the causes of forgetting
বিস্মরণ বা বিস্মৃতি কাকে বলে ? বিস্মৃতির কারণগুলি উল্লেখ করো।
বিস্মরণ বা বিস্মৃতি :-
স্মৃতির অভাবকেই বিস্মৃতি বা বিস্মরণ বলে। বিস্মৃতি বা ভুলে যাওয়া হল মনে রাখার বিপরীত অবস্থা। স্মৃতি হল শিখন , সংরক্ষণ মনে করা এবং চেনা - এই কয়েকটি মানসিক প্রক্রিয়ার সম্মিলিত রূপ। এই জটিল ক্রিয়া কোনো কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে বিস্মৃতি দেখা যায়।
মান ( Munn ) বলেছেন , পূর্বার্জিত কোনো বিষয়কে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে স্মরণ করার অক্ষমতাকেই বিস্মৃতি বলা হয়।
ড্রেভার বলেছেন , কোনো সময়ে কোনো অভিজ্ঞতা বা পূর্বার্জিত কোনো কাজ পুনরায় সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি বিস্মৃতি বলে।
ভাটিয়া বলেছেন - মূল উদ্দীপকের সাহায্য ব্যতীত কোনো ভাবনা বা ভাবনাগুলিকে চেতন মনে নিয়ে আসার ব্যর্থতা হল বিস্মৃতি।
বিস্মৃতি বা বিস্মরণের কারণ :-
১. চর্চার অভাব :- অনভ্যাসে বিদ্যাহ্রাস - কথাটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যে বিষয়গুলি শেখার পর আমরা মাঝে মাঝে চর্চা করে থাকি , সেগুলি আমরা মনে রাখতে পারি। কিন্তু কোনো কিছু শেখার পর দীর্ঘদিন যদি তার চর্চা না করা হয় তাহলে তার বিস্মরণ ঘটে।
২. বিষয়বস্তুর প্রকৃতি :- বিষয়বস্তুর প্রকৃতির ওপর মনে রাখা বা ভুলে যাওয়া অনেকখানি নির্ভর করে। এবিংহাউজের পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে , অর্থহীন শব্দতালিকা , অর্থযুক্ত শব্দতালিকা , সম্পূর্ণ বাক্য ইত্যাদি বিষয়বস্তুর মধ্যে অর্থহীন শব্দতালিকার ক্ষেত্রে বিস্মরণের হার সবচেয়ে বেশি।
৩. শিখনের মাত্রা :- প্রত্যেক বিষয়ে শেখার একটা মাত্রা আছে যেখানে পৌঁছালে শিখন সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে শেখার পরেও যদি চর্চা করা হয় তাহলে তাকে অতিশিখন বলে।অতিশিখনের
ক্ষেত্রে বিস্মরণ কম ঘটে। কিন্তু বিষয়টির শিখন যদি সম্পূর্ণ না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বিস্মরণ বেশি পরিমাণে ঘটে থাকে।
৪. অবদমন :- ফ্রয়েড বলেন , অবদমন হল বিস্মরণের মূল কারণ। যা আমরা চাইনা , যা অসামাজিক বা আমাদের কাছে অপ্রিয় - তাকে আমরা অবদমন করতে চাই অর্থাৎ ভুলে যেতে চাই। শিক্ষাবিদ নান বলেছেন , আমরা সুখকর ঘটনাগুলিকেই মনে রাখি ; অপ্রিয় ঘটনা ভুলে যেতে চাই।
৫. পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ :- কোন বিষয় ভালোভাবে শেখার আগেই যদি অন্য কোন সদৃশ বিষয়বস্তু শিখতে যাই তবে দ্বিতীয় বিষয়টি প্রথমে শেখা বিষয়টির কিছু অংশ ভুলিয়ে দেয়। এই মানসিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ। পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ বিস্মরণের অন্যতম কারণ।
৬. নেশাকারক বস্তু :- দীর্ঘদিন ধরে নেশার বস্তু ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। স্মরণক্রিয়া হল মস্তিষ্কজনিত প্রক্রিয়া। তাই নেশাকারক বস্তু গ্রহণে মস্তিষ্কের স্মরণচিহ্ন অস্পষ্ট হয়ে যায় এবং বিস্মৃতি ঘটে।
৭. আবেগজনিত প্রতিরোধ :- তীব্র আবেগমূলক পরিস্থিতিতে খুব ভালো করে শেখা বিষয়গুলিও মনে করতে কষ্ট হয়। ভয় , রাগ , দুঃখ , লজ্জা - ইত্যাদি প্রক্ষোভ তীব্রমাত্রায় দেখা দিলে বিস্মরণের মাত্রা বেড়ে যায়।
৮. পরিবর্তিত পরিবেশ :- যে পরিবেশে আমরা শিখে থাকি সেই পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলি স্মরণের সহায়ক। পরিবর্তিত পরিবেশে ওইসব উপাদানের অভাবে শেখা জিনিস আমরা মনে করতে পারি না। সেই কারণে বাড়িতে ভালো করে তৈরি প্রশ্নোত্তর পরীক্ষার হলে অনেক সময় আমরা ভুলে যাই।
৯. আঘাতজনিত কারণ :- আমরা জানি সংরক্ষণ নির্ভর করে মস্তিষ্কের ওপর। মস্তিষ্কে কোনো কারণে গুরুতর আঘাত লাগলে সাময়িকভাবে স্মৃতি নষ্ট হয়।
১০. তীব্র শোক :- তীব্র শোকের ফলে ব্যক্তির স্মৃতি সম্পূর্ণ লোপ পায়। একে বলা হয় অ্যামনেশিয়া।
১১. উপযুক্ত অনুষঙ্গের অভাব :- উপযুক্ত অনুষঙ্গ ও অভিভাবন শক্তির অভাবে বিস্মৃতি অবশ্যই সংগঠিত হয়। শান্তিপুর বললে তাঁতের কাপড়ের কথা , দার্জিলিং বললে পাহাড় ও চায়ের কথা - ইত্যাদি অনুষঙ্গবদ্ধ প্রক্রিয়ায় মনে পড়ে। তাই যথাযথ অনুষঙ্গতার অভাব অভিজ্ঞতা , ঘটনা , স্থান , পাত্র - প্রভৃতিকে বিস্মৃত হতে সহায়তা করে।
১২. প্রেষণার অভাব , আগ্রহ ও মনোযোগের অভাব - ইত্যাদি অবশ্যই বিষয়বস্তু বিস্মৃত হতে সহায়তা করে। মনোবিজ্ঞানী ওয়াটসনের মতে , বাচনিক অনুষঙ্গ ও মানসিক ক্ষমতার বিভিন্ন উপাদান , যেমন , বুদ্ধি , আগ্রহ , মনোযোগ , প্রেষণা - ইত্যাদির অভাব হল বিস্মরণের মূল কারণ।
যেসব অবস্থা ধারণ বা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে , সেগুলির বিপরীত অবস্থা বিস্মৃতি আনে। তাই সংরক্ষণ , শিখন এবং অভ্যাস বাড়ালে বিস্মৃতি কমে।
0 comments