শিখন ও পরিণমনের পার্থক্য / বৈসাদৃশ্য।
শিখন ও পরিণমনের পার্থক্য / বৈসাদৃশ্য।
১. প্রকৃতিগত দিক :-
শিখন একটি মানসিক প্রক্রিয়া।
কিন্তু , পরিণমন একটি জৈবিক প্রক্রিয়া।
২. অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা :-
শিখনের জন্য অনুশীলন অপরিহার্য। শিখনের একটি অন্যতম শর্তই হল অনুশীলন। অনুশীলন ব্যাতীত অর্জিত জ্ঞানকে সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব নয়।
কিন্তু , পরিণমন একটি সহজাত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন হয় না।
৩. সক্রিয়তা :-
শিখন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিকে সক্রিয় থাকতে হয়। ব্যক্তির সক্রিয়তা ছাড়া জ্ঞান অর্জন এবং সংরক্ষণ সম্ভব নয়।
কিন্তু , পরিণমন যেহেতু একটি সহজাত প্রক্রিয়া সেহেতু পরিণমনের সময় ব্যক্তির থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
৪. মানসিক প্রস্তুতি :-
শিখনের জন্য শিক্ষার্থীর মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া মনোযোগ , আগ্রহ ইত্যাদি বিষয়গুলিকে শিখন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায় না। ফলে কার্যকরী শিখন ঘটার সম্ভাবনা থাকে না।
কিন্তু , পরিণমন ব্যক্তির কোনোরকম মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই ঘটে।
৫. পরিমাণ ও হার :-
অনুশীলনের প্রভাবে শিখনের পরিমাণে পার্থক্য ঘটে।
কিন্তু পরিণমনের ক্ষেত্রে , বিকাশের বিভিন্ন স্তরে পরিণমনের হারের হ্রাস - বৃদ্ধি দেখা যায়। যেমন , শৈশব ও বয়ঃসন্ধিকালে পরিণমনের প্রকাশ খুব দ্রুত ঘটে।
৬. নিয়ন্ত্রণ :-
শিখন শিক্ষার্থী ও সমাজ - উভয়ের চাহিদা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
কিন্তু পরিণমন যেহেতু স্বাভাবিক ও সহজাত প্রক্রিয়া , সেহেতু পরিণমন ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদানির্ভর নয়।
৭. কৃত্রিমতা ও স্বাভাবিকতা :-
শিখন একটি কৃত্রিম প্রক্রিয়া। বিভিন্ন শর্ত ও উপাদানের উপস্থিতিতে , নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে শিখন ঘটে।
কিন্তু পরিণমন একটি সহজাত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং তা কোনোপ্রকারের শর্ত , পরিস্থিতি বা ব্যক্তির ও সমাজের চাহিদার অধীন নয়।
৮. লিঙ্গভেদ :-
লিঙ্গভেদে শিখনের কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।
কিন্তু , একই বয়সের বালক ও বালিকাদের মধ্যে পরিণমনগত পার্থক্য দেখা যায়।
৯. স্থায়িত্ব :-
শিখন স্থায়ী নয়। অনুশীলনের অভাবে ভুলে যাওয়া শিখনের ধর্ম। যেহেতু শিখন শর্তনির্ভর প্রক্রিয়া , তাই শর্তগুলির অনুপস্থিতিতে শিখনের অবলুপ্তি ঘটে।
কিন্তু , পরিণমনগত প্রকাশ স্থায়ী এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ব্যাপক তারতম্য ঘটলেও পরিণমনের প্রকাশের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
১০. ব্যাপ্তি :-
শিখন সংগঠিত হওয়ার সময়কাল হল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। জীবের প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ব্যক্তির শিখন নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘটতেই থাকে।
কিন্তু , পরিণমন ব্যক্তিজীবনের একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ঘটে।
১১. সর্বজনীনতা :-
শিখন যেহেতু অনুশীলনসাপেক্ষ ও শর্তাধীন - তাই শিখন সর্বজনীন নয়।
কিন্তু পরিণমন স্বাভাবিক ও সহজাত - তাই সর্বজনীন।
১২. স্বেচ্ছাধীনতা :-
শিখন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। ব্যক্তি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে , নির্দিষ্ট চাহিদার ভিত্তিতে শিখন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
কিন্তু পরিণমন যেহেতু স্বাভাবিক ও চাহিদানির্ভর নয় - তাই পরিণমন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির কোনো ভূমিকা থাকার প্রশ্ন ওঠে না।
0 comments