মধ্যযুগে / মুসলিম যুগে ভারতের নারীশিক্ষা :-

by - July 19, 2021

মধ্যযুগে / মুসলিম যুগে ভারতের নারীশিক্ষা :- 




মধ্যযুগের ভারতের নারীশিক্ষা সঠিকভাবে প্রসার লাভ করতে পারেনি। সে যুগের গোঁড়া মুসলমানরা মনে করত , নারীরা শিক্ষিত হলে তা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। তবে মধ্যযুগের মুসলমান শাসকেরা এবং মনীষীরা নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এমনকি ইসলাম ধর্মের প্রবাদপুরুষ প্রবর্তক হযরত মহম্মদও নারী শিক্ষা প্রসারের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু মধ্য যুগে নারীদের পর্দার আড়ালে রাখার রীতি প্রচলিত হয়। ফলে নারীশিক্ষার বিকাশ অনেকাংশে ব্যাহত হয়। এখানে মধ্যযুগের নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।


১. গৃহ বা অন্দরমহলে শিক্ষার ব্যবস্থা :- 
ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থাতে বালিকা সাত বছর বয়সে পৌঁছলে তাকে আর মক্তবে পাঠানো যেত না। তাছাড়া বালিকাদের পঠন-পাঠনের জন্য কোনো পৃথক বা বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। সাধারণ বিদ্যালয়েও নারীদের ভর্তি নেওয়া হত না। ফলে বালিকাদের বাড়িতে বসেই শিক্ষা লাভ করতে হত। সে যুগের মুসলিম কন্যারা নিজেদের গৃহেই '' কোরানের সুরা ''  পাঠ করতেন। হিন্দু জমিদার ও বিত্তবানরা নিজেদের গৃহে কন্যা সন্তানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতেন। 

২. শিক্ষক :- 
মধ্যযুগে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধনী পরিবারের গৃহে পাঠদানের জন্য '' উলেমা '' নিযুক্ত করা হত। চারুকলা বিষয়ে তালিম দেওয়ার জন্য '' ওস্তাদ '' নিয়োগ করা হত। বিভিন্ন রাজপরিবারের কন্যা সন্তানদের পঠন-পাঠনের জন্য '' শিক্ষিকা '' নিয়োগ করা হত। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায় ,  সুলতান গিয়াসউদ্দিন হারেমে মহিলাদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য '' শিক্ষিকা '' নিয়োগের বন্দোবস্ত করেছিলেন। 


৩. পৃথক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন :- 
মধ্যযুগে নারীশিক্ষার বিকাশের জন্য কয়েকজন সম্রাট '' জেনানা বিদ্যালয় '' অর্থাৎ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ওই বিদ্যালয়ে একমাত্র মেয়েরাই পঠনপাঠন করতে পারত। মহামতি আকবর নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য ফতেপুর সিক্রিতে অন্তঃপুরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বহু মহিলা ওই মাদ্রাসাতে সাহিত্য , কাব্য ও শিল্প বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। 

৪. খ্যাতনামা বিদুষী মহিলা :- 
মধ্যযুগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা বিদূষী মহিলার বিষয়ে জানা যায় , যাঁরা সাহিত্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন - সুলতানা রাজিয়া , বাবরকন্যা গুলবদন বেগম , শাহজাহান কন্যা জাহানারা বেগম , এছাড়া সোফিয়া , হামিদা , ফতেমা প্রমুখ। এছাড়া মধ্যযুগের কয়েকজন বিদূষী হিন্দু মহিলার সম্পর্ক জানা যায়। এঁরা  হলেন মীরাবাঈ , রানী দুর্গাবতী প্রমুখ। 

৫. নারীশিক্ষার সুযোগ হ্রাস :- মোগল যুগের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যযুগের নারীশিক্ষাও বাধাপ্রাপ্ত হয়। ইসলাম ধর্মের গোঁড়ামি ও সামাজিক রীতিনীতির অনুশাসনে হিন্দুধর্ম ও হিন্দু সমাজও অনেকখানি রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। ফলে হিন্দু মহিলারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। কতিপয় ধনী ও   অভিজাত পরিবারের মহিলারা শিক্ষার আঙিনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এবং বাকিরা অশিক্ষার অন্ধকারে তলিয়ে যায়। 

You May Also Like

0 comments