পরিণমন কাকে বলে ? পরিণমনের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা করো।
পরিণমন কাকে বলে ? পরিণমনের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা করো।
পরিণমনের সংজ্ঞা :-
পরিণমনের ধারণা জীববিজ্ঞান থেকে এসেছে। এর অর্থ শিশুর শারীরিক বিকাশ। মনোবিদ কোলেসনিক পরিণমনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন , সহজাত সম্ভাবনাগুলির স্বাভাবিক বিকাশের ফলে ব্যক্তির গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তনকেই পরিণমন বলে। এককথায় , সহজাত সম্ভাবনাগুলির বাস্তবায়নই হল পরিণমন।
মনোবিদ ম্যাকগিয়ক বলেছেন , বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনুশীলন ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে প্রধানতঃ জৈবিক কারণে আচরণের পরিবর্তনকেই পরিণমন বলে।
স্কিনারের মতে , পরিণমন হল এক ধরণের বিকাশ যা পরিবেশ ও অবস্থার ব্যাপক তারতম্য ঘটলেও মোটামুটিভাবে নিয়মিত সংঘঠিত হয়।
মনোবিদ গেসেলের মতে , স্বকীয় ও অন্তর্জাত বৃদ্ধিই হল পরিণমন।
পরিণমনের বৈশিষ্ট :-
পরিণমন হল এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জন্মগত প্রবণতার স্বাভাবিক বিকাশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচরণের গুণগত ও পরিমাণগত , উভয় প্রকারের পরিবর্তন ঘটে। পরিণমনের বৈশিষ্টগুলি হল -
১. বিকাশের প্রক্রিয়া :- পরিণমন হল বিকাশের একটি প্রক্রিয়া। যেমন , পরিণমনের ফলে হৃদপিন্ড , পাকস্থলী প্রভৃতির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং এগুলির কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে , হাত - পায়ের পেশি সবল হয় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় - ইত্যাদি।
২. সহজাত প্রক্রিয়া :- পরিণমন একটি সহজাত এবং সর্বজনীন প্রক্রিয়া। এর উৎস হল জণ্মগতসূত্রে প্রাপ্ত সম্ভাবনা। সমজাতীয় সমস্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একইভাবে সম্পন্ন হয়। যেমন - হাঁটার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সব শিশুই প্রথমে হামাগুড়ি দেয় , পরে দাঁড়ায় এবং সবশেষে দুপায়ে হাঁটে।
৩. স্বাভাবিক প্রক্রিয়া :- পরিণমন একপ্রকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রাণীর সুস্থতাই এর একমাত্র শর্ত। এছাড়া , অন্য কোনো শর্ত নেই। অসুস্থতা পরিণমনে বাধার সৃষ্টি করে। যেমন , পোলিও রোগাক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক পরিণমনের অভাবে ঠিকমতো হাঁটতে পারেনা।
৪. অনুশীলন নিরপেক্ষ :- পরিণমনের জন্য কোনো অনুশীলনের প্রয়োজন হয়না। শিখন ও পরিণমনের মূল পার্থক্য এখানেই। তাই বলা যায় , শিখন অনুশীলনসাপেক্ষ , কিন্তু পরিণমন অনুশীলন নিরপেক্ষ।
৫. চাহিদা নিরপেক্ষ : - শিশু বা সমাজের চাহিদা পরিণমনকে নিয়ন্ত্রণ করেনা। তবে , পরিণমন শিশুর চাহিদার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন - পরিণমনের ফলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শরীরের অধিক খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
৬. শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়ক :- পরিণমন ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে বিশেষভাবে সাহায্য করে। পরিণমনের ফলে ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৭. আত্মসক্রিয়তা নিরপেক্ষ :- পরিণমন প্রক্রিয়ার জন্য ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তা অপরিহার্য নয়। প্রকৃতির নিয়মে ব্যক্তির অজান্তেই পরিণমন ঘটে। তবে ব্যক্তির সক্রিয়তা অনেক ক্ষেত্রে পরিণমনকে ত্বরান্বিত করে।
৮. জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া নয় :- শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময় থেকেই পরিণমন শুরু হলেও জীবনের এক পর্যায়ের পরে পরিণমনের প্রকাশ আর ঘটে না। তাই পরিণমনকে জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া বলা যাবে না।
৯. জৈবিক বিকাশের প্রক্রিয়া :- পরিণমন ব্যক্তির দেহের জৈবিক কেন্দ্রগুলির স্বাভাবিক বিকাশের ওপর নির্ভর করে।
১০. প্রশিক্ষণ নির্ভর নয় :- পরিণমন ঘটার জন্য কোনো প্রকার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়না। এই প্রক্রিয়া ব্যক্তি বা সমাজের চাহিদা , ইচ্ছা , অবস্থা , পরিস্থিতি - কোনো কিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়।
0 comments