charter act 1813

by - July 20, 2021

চার্টার অ্যাক্ট 1813 - এর পরিচয় , গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা। 




ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে এসেছিল বাণিজ্য করতে। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা এদেশে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। তারা প্রশাসনিক দিকটি ভালভাবে লক্ষ্য রাখলেও এদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সেভাবে নজর দেয়নি। শিক্ষা বিস্তারের নৈতিক দায়িত্বকে অস্বীকার করে অর্থনৈতিক শোষণেই ব্যস্ত থাকেন। এমতাবস্থায় 1813 খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট পাস হয়। 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে ; এরই প্রভাবে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একটি সুনির্দিষ্ট রূপ পেতে শুরু করে। 


চার্টার অ্যাক্ট 1813 এর  মিশনারি ধারা ও শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনা :- 
1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে মিশনারিদের শিক্ষাবিস্তারকে উৎসাহিত করার এবং ভারতের নিজস্ব প্রাচীন সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকা বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়। 

মিশনারি ধারা :- 
1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট পাস হওয়ার আগে কোম্পানি নানাভাবে মিশনারিদের শিক্ষাবিস্তারের প্রচেষ্টাকে বাধা দিয়েছে। কিন্তু এই আইনের 13 নং ধারায় প্রত্যক্ষভাবে মিশনারিদের কথা উল্লেখ না করা হলেও মিশনারিদের ওপর কোম্পানির যে বিধিনিষেধ ছিল - তা উঠে যায়। এই কারণে চার্টার অ্যাক্টের 13 নং ধারাটিকে মিশনারি ধারা বলা হয়। 

শিক্ষা বিষয়ক ধারা :- 
চার্টার অ্যাক্টের 43 নং ধারাটি শিক্ষাবিষয়ক ধারা নামে পরিচিত। এই ধারার মূল কথা হল -  ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতবর্ষে সামরিক , অসামরিক ও শিল্প বাণিজ্যের খরচ এবং সরকারি ঋণ ও তার সুদের জন্য খরচ বহন করার পরে রাজস্ব কর ও লাভের আয় থেকে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত হবে , তার থেকে অন্তত কমপক্ষে প্রতিবছর এক লক্ষ টাকা শিক্ষিত ভারতবাসীদের অধিকতর শিক্ষালাভে উৎসাহ দানের জন্য , সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নের জন্য এবং ভারতবর্ষে ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রবর্তন ও উন্নয়নের জন্য ব্যয় করাই হবে সপরিষদ গভর্নর জেনারেলের আইনসম্মত কাজ।  


চার্টার অ্যাক্ট 1813 - এর গুরুত্ব :- 

এ দেশের শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে 1813 খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্টের প্রস্তাবগুলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। 

১. সরকারি অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা :- 
চার্টার অ্যাক্টের 43 নং ধারায় ভারতীয় শিক্ষার জন্য বছরে কমপক্ষে 1 লক্ষ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , এর আগে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালিত সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ করেনি। সুতরাং এই সনদ আইনকে সরকারিভাবে শিক্ষা বিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। 

২. ধর্ম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে মিশনারিদের স্বাধীনতা দান :- 
এই অ্যাক্টের 13 নং ধারায় পরোক্ষভাবে মিশনারিদের জয় ঘোষিত হয়। তারা বিনা বাধায় ভারতে প্রবেশের এবং বসবাসের অধিকার লাভ করে। ধর্মপ্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের বিষয়েও তারা অনেকটা স্বাধীনতা লাভ করে। 

৩. ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার বীজ বপন :- 
মিশনারিদের দাবি অনুযায়ী খ্রিস্টান ধর্মের ভিত্তিতে শিক্ষাদানের বিষয়টি এই সনদ আইনে স্বীকৃত হয়নি।  ফলে শিক্ষাকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। আজও ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। 

৪. ভারতবাসীর শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা :- 
আংশিকভাবে হলেও এই সনদ আইনে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে , ভারতবাসীর শিক্ষার দায়িত্ব তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালিত সরকারের তথা রাষ্ট্রেরই। 


৫. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ব্যবস্থা :- 
সনদ আইনের 43 নং ধারায় ভারতবাসীর শিক্ষার জন্য যে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয় - তা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে , সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তাই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পাশ্চাত্যবাদীরা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের পথকে অনেকখানি সুগম করতে পারে। এর ফলে ইংরেজি ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। 

৬. শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি - উভয় উদ্যোগের স্বীকৃতি :- 
1813 খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্টে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে বেসরকারি উদ্যোগকেও  স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আজও স্বাধীন ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এই দুই উদ্যোগই বর্তমান। 

1813 এর সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্টের সীমাবদ্ধতা :- 


১. এই সনদ আইনে সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়ন বলতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য - ঠিক কোন সাহিত্যকে বোঝানো হয়েছে -  তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি। 

২. বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তন ও প্রসারের ক্ষেত্রে ভারতীয় বিজ্ঞান না পাশ্চাত্য বিজ্ঞান চর্চা করা হবে - তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। 

৩. শিক্ষিত শব্দটির ব্যাখ্যা ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে শিক্ষিত বলতে এদেশের না পাশ্চাত্যের পন্ডিতদের বোঝানো হয়েছে - তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। 

৪. সনদ আইন অনুসারে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ এক লক্ষ টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য - কোন খাতে ব্যয় করা হবে - সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ফলে , এই আইন প্রকৃতপক্ষে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়।  

You May Also Like

0 comments