বৈদিক ও বৌদ্ধ শিক্ষার পার্থক্য / বৈসাদৃশ্য :-
বৈদিক ও বৌদ্ধ শিক্ষার পার্থক্য / বৈসাদৃশ্য :-
১. বেদ নির্ভরতা :-
বৈদিক শিক্ষায় বেদকে অভ্রান্ত বলা হত। এই শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে বেদনির্ভর ছিল।
কিন্তু বৌদ্ধশিক্ষা ব্যবস্থায় বেদকে পুরোপুরি অস্বীকার না করা হলেও বেদ অভ্রান্ত - একথা স্বীকার করা হয়নি।
২. সর্বজনীনতা :-
বৈদিক শিক্ষা সর্বজনীন ছিল না। ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য - এই তিনটি বর্ণের মধ্যে বৈদিক শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল। শুদ্রদের শিক্ষার অধিকার ছিল না।
কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণকারী সকলেরই শিক্ষার অধিকার ছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্ণভেদ প্রচলিত ছিল না। এই অর্থে বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল অনেক বেশি গণতান্ত্রিক।
৩. শিক্ষাদান :-
বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবলমাত্র ব্রাহ্মণেরা শিক্ষাদানের অধিকারী ছিলেন।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ্যতা অনুসারে যেকেউ আচার্য বা উপাধ্যায় পদে নিযুক্ত হতে পারতেন।
৪. সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক :-
বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের গুরুর থেকে শিক্ষা লাভ করতে হত। গুরু সংসারে থেকে পুত্র-কন্যা বেষ্টিত হয়ে শিক্ষা প্রদান করতেন।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে সংঘে এসে শিক্ষা প্রদান করতেন।
৫. সম্পত্তি :-
বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুকুল ছিল গুরুর নিজস্ব ব্যক্তিগত সম্পত্তি।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় বৌদ্ধ বিহারগুলো ছিল সংঘের সম্পত্তি।
৬. উপাধিপ্রদান :-
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় গুরু উপাধি প্রদান করতেন।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় উপাধি দেওয়ার অধিকার ছিল সংঘের।
৭. শিক্ষার মাধ্যম :-
বৈদিক শিক্ষার মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষার মাধ্যম ছিল প্রাকৃত ভাষা বা পালি।
৮. পাঠক্রম :-
বৈদিক শিক্ষায় অংক শাস্ত্র , জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষ প্রাধান্য পেয়েছিল।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় , সেবা ছিল বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা। তাই বৌদ্ধ শিক্ষায় চিকিৎসাবিজ্ঞান যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করে।
৯. স্ত্রীশিক্ষা :-
বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার যথেষ্ট প্রাধান্য ছিল।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় স্ত্রীশিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়েছিল।
১০. শিক্ষক বিরোধিতা :-
বৈদিক শিক্ষায় গুরুর বিরোধিতার কোন প্রশ্নই ছিল না।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় উপাধ্যায় যদি সংঘের আদর্শ বিরোধী কাজ করতেন তবে তার বিরুদ্ধে সংঘের কাছে নালিশ জানাতে পারত শ্রমণরা।
১১. চতুরাশ্রমের উপস্থিতি :-
বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল চতুরাশ্রম ভিত্তিক। শিক্ষার্থীদের সুযোগের দিক দিয়ে চতুরাশ্রমের বিষয়টি স্পষ্ট রূপে পরিলক্ষিত হয়।
কিন্তু যেহেতু বৌদ্ধধর্মে বর্ণভেদ স্বীকৃত ছিল না ; তাই বৌদ্ধ শিক্ষাক্ষেত্রে চতুরাশ্রম ছিল অনুউপস্থিত।
১২. গণতান্ত্রিকতা :-
বৈদিক শিক্ষা ছিল গুরু কেন্দ্রিক। গুরুর কথাই ছিল শেষ কথা।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুর পাশাপাশি শিষ্যদের কথা শোনা হত। কাজেই বৌদ্ধ শিক্ষা ছিল তুলনামূলকভাবে গণতান্ত্রিক।
১৩. শিক্ষা শেষের অনুষ্ঠান :-
বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষা শেষের অনুষ্ঠান সমাবর্তন ছিল শিক্ষা শেষে ঘরে ফেরার অনুষ্ঠান।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা শেষে অনুষ্ঠিত উপসম্পদা ছিল চিরতরে গৃহত্যাগের অনুষ্ঠান।
১৪. শিক্ষার প্রকৃতি :-
বৈদিক শিক্ষা অধিকার জটিল ছিল।
তুলনামূলকভাবে বৌদ্ধ শিক্ষা অনেক সহজ সরল ছিল।
১৫. শিক্ষার প্রসার :-
বৈদিক শিক্ষা কেবলমাত্র ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষা ভারতের বাইরেও নানা দেশে তার প্রসার লাভ করেছিল।
0 comments