পঠন কর্মভার : ধারণা , বৈশিষ্ট , সুবিধা ও অসুবিধা।
পঠন কর্মভার কাকে বলে ? পঠন কর্মভারের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা করো। পঠন কর্মভারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখ।
এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।
পঠন কর্মভার বা Reading Assignment এর ধারণা : -
শিক্ষায় শিক্ষার্থীর কর্মসম্পাদনামূলক দুটি প্রধান উপাদান হল - পঠন ও লিখন। শিক্ষারম্ভের শুরুতেই পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীর জীবনে আসে পঠন ও লিখন। মুখগহ্বর , শ্বাসবায়ু , নাসিকা ও মুখগহ্বরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশগুলির সমন্বয়ে শুরু হয় আমাদের কথা বলা। বর্ণমালার সাথে কথা বলাকে যুক্ত করে শুরু হয় বর্ণমালার পাঠ। তারপর ধীরে ধীরে শব্দ এবং শব্দ থেকে বাক্য গঠনে শিক্ষার্থী অভ্যস্থ হয়ে ওঠে।
সরব পঠন শিক্ষার্থীদের শিখনে মনোযোগী ও আগ্রহী করে তোলে। তাই পঠন কর্মভার হল একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনোযোগী প্রক্রিয়া।
পঠন কর্মভারের বৈশিষ্ট :-
পঠন কর্মভারের বৈশিষ্টগুলি হল -
১. শিক্ষার্থীদের মানসিক দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়।
২. বিশ্লেষণমূলক পঠন শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে।
৩. সকল বিষয়ের সঙ্গে এটি যুক্ত এবং সকল বিষয় থেকে জ্ঞান সরবরাহ করে।
৪. পঠনযোগ্য বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে নির্বাচন করে। কিন্তু এখানে শিক্ষক - শিক্ষিকাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা অবশ্য প্রয়োজন।
৫. পাঠ্যপুস্তক ব্যতিরেকে অন্যান্য পঠনযোগ্য বিষয়বস্তুগুলিকেও এখানে প্রয়োজন হয়।
৬. এটি সম্পূর্ণ এক শিক্ষামূলক কর্মসূচি।
৭. প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা এখানে যুক্ত হতে পারে।
৮. শিক্ষক শিক্ষিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯. ধারণা গঠন ও নীতিসহ জ্ঞান সাধারণীকরণে এই পঠন কর্মভার এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
১০. শিক্ষক ও তার শিক্ষণকে সক্রিয় রাখে।
পঠন কর্মভারের সুবিধা :-
পঠন কর্মভার শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , কেননা তা শিক্ষার্থীর শ্রবনে ও মননে প্রভাবিত করে। পঠন কর্মভারের প্রধান সুবিধাগুলি হল -
১. শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশকে বৃদ্ধি করে।
২. শিক্ষার্থীর বুদ্ধির ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
৩. শিক্ষার্থীর মনের জটিল অংককে সরল করে তোলে।
৪. পঠন বিষয় নির্বাচন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. শিক্ষার্থীর নিজের জ্ঞানের ভান্ডার গঠন করে।
৬. শিক্ষার্থীর নিকট পাঠ্যপুস্তক গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
৭. পাঠ্যগ্রন্থের বিশেষ বিশেষ অংশের প্রতি আকর্ষিত হয়ে শিক্ষার্থী নিজস্ব বোধ বিকশিত করতে অনুপ্রাণিত হয়।
৮. শিক্ষার্থী বিশেষ অংশ থেকে ক্রমে ক্রমে অনুসন্ধানী ও গবেষণাপ্রবণ হয়ে ওঠে।
৯. শিক্ষার্থীর শব্দভান্ডার ও তথ্য ভান্ডার তৈরী হয়।
১০. পঠন কর্মভার শিক্ষার্থীদের স্বাধীন শিখনে অনুপ্রাণিত করে। ফলে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র পরিমাপ করা যায়।
পঠন কর্মভারের অসুবিধা :-
পঠন কর্মভারের অসুবিধাগুলি হল -
১. পঠন কর্মভার শিখনের একমুখী পথ ; তাই এই শিখন সীমাবদ্ধ।
২. পঠন কর্মভার অর্থহীন হয়ে যায় , যখন শিক্ষার্থী হাতে কলমে অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করে।
৩. পঠনে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান কয়েকটি ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ। শিক্ষকের ব্যাখ্যা যুক্ত হলে , তবেই তা সম্পূর্ণ হতে পারে , না হলে অর্ধেক জ্ঞান লাভ হয়।
৪. এখানে কেবল জ্ঞানের বিকাশ হয় , অন্যান্য মাত্রাগত দিকের বিকাশ হয় না।
৫. আদর্শ পঠনযোগ্য বিষয় না হলে আদর্শ শিখন হবে না।
৬. অনেক ক্ষেত্রে পঠন কর্মভার শিক্ষার্থীর মধ্যে এমন এক বোধের সঞ্চার করে যে , এখানে শিক্ষকের শিক্ষন কার্যকরী হয়না। কেননা , তারা অনেক সময় পঠনের সাথে সাথে বোধগম্যতার স্তরে পৌঁছতে পারেনা।
৭. ঋণাত্মক পঠন কর্মভার শিক্ষার্থীর মধ্যে ঋণাত্মক মূল্যবোধ , অভ্যাস , মনোবৃত্তি ও ব্যক্তিসত্তা গড়ে তোলে।
0 comments