বক্তৃতা পদ্ধতি : ধারণা , সুবিধা , অসুবিধা ও গুরুত্ব।
বক্তৃতা পদ্ধতি : ধারণা , সুবিধা , অসুবিধা ও গুরুত্ব।
বক্তৃতা পদ্ধতি ( Lecture Method ) - র ধারণা :-
সাধারণভাবে শিক্ষক - শিক্ষিকা যখন কেবল ভাষার মাধ্যমে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন তখন তাকে বলা হয় বক্তৃতা পদ্ধতি। মঞ্চে দন্ডায়মান কোনো ব্যক্তি যখন কোনো বিষয়কে শ্রোতাদের জন্য পরিবেশন করেন তখন তাঁর পরিবেশনকে বলা হয় বক্তৃতা। এক্ষেত্রে শ্রোতাগণ বিষয়বস্তুকে গ্রহণ করতেও পারেন বা না'ও পারেন। আবার এসময় শ্রোতা অন্য কাজে লিপ্ত থাকতে পারেন বা স্থান ত্যাগও করতে পারেন।
কিন্তু শ্রেণিকক্ষে যখন শিখন - শিক্ষনের জন্য এই পদ্ধতিটি শিক্ষক - শিক্ষিকাগন ব্যবহার করেন , তার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা পূর্বের তুলনায় সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায়। কারণ , এখানে শিক্ষক - শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের যথার্থ শিখনের জন্য এবং নিজের আদর্শ শিক্ষন পদ্ধতি পরিচালনাতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
বক্তৃতা পদ্ধতির সুবিধা ( Merits of Lecture Method ) :-
১. শ্রেণিকক্ষে সহজেই পাঠদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করা যায়।
২. নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাঠদান বা বিষয়সূচি শেষ করা যায়।
৩. শিক্ষক - শিক্ষিকা নিজের মত করে পাঠ - পরিকল্পনা করতে পারেন।
৪. বিষয়জ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান ও অনুশীলনমূলক জ্ঞানকে একত্রে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করা যায়।
৫. দিনের পাঠ সম্পর্কে ধারণা থাকলেই শ্রেণিকক্ষে পাঠ পরিবেশন করা যায়।
৬. একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে এই পদ্ধতিতে পাঠ প্রদান করা যায়।
৭. এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞানের সহজ পরিমাপ করা সম্ভব হয়।
৮. পাঠ উপস্থাপন ও ব্যাখ্যাকরণে এই পদ্ধতি খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।
৯. প্রয়োজনে কিছু চার্ট , ছবি প্রভৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠ দানকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
বক্তৃতা পদ্ধতির অসুবিধা ( Demerits of Lecture Method ) :-
১. এই পদ্ধতিটি কেবল শিক্ষক - শিক্ষিকা কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের কোনোরূপ অংশগ্রহণ এখানে থাকে না। অর্থাৎ এটি একটি একমুখী প্রক্রিয়া।
২. শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার স্তর শিক্ষক - শিক্ষিকা কর্তৃক এখানে মূল্যায়িত হয়না। ফলে আদর্শ শিখনের ক্ষেত্র এখানে প্রস্তুত হয়না।
৩. যেকোনো বিষয়বস্তু এখানে শিক্ষার্থী শ্রবণ করে। কিন্তু সেটি নিয়ে সে বিশেষ ভাবতে পারেনা।
৪. নির্দিষ্ট ধার্য সময়ে দিনের পাঠ শেষ করার তাগিদে শিক্ষক - শিক্ষিকা এখানে অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ফলে শিক্ষার্থী এখানে নিজে স্বাধীনভাবে চিন্তার সুযোগ পায়না।
৫. এখানে কেবল জ্ঞানচর্চা হয়। শিখনের অন্যান্য বৌদ্ধিক , অনুভূতিমূলক ও মনসঞ্চালকমূলক দিকের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়না।
৬. শ্রেণীকক্ষে একঘেয়েমি পরিবেশ তৈরী হয়ে যায় ; ফলে শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
৭. অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
৮. এই পদ্ধতিতে বিষয় উপযোগী যথার্থ জ্ঞান -বোধ - প্রয়োগ - দক্ষতার বিকাশ সম্ভব হয়না।
৯. শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
১০. শিক্ষক - শিক্ষার্থী সম্পর্ক প্রায় ক্ষেত্রেই নিম্নগামী হয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষক - শিক্ষিকাদের নানারকম শারীরিক , বাচনিক ও প্রায়োগিক বৈশিষ্ট অনুসরণ করে তাঁদের প্রতি ভিন্নভাবে আকৃষ্ট হয় , যা প্রায়শই শিখন - শিক্ষনের উদ্দেশ্যের বিপরীত হয়।
১১. বিষয়বস্তুর সম্পূর্ণ অংশের পাঠ এই পদ্ধতিতে দেওয়া যায় না।
১২. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে এই পদ্ধতি যথার্থভাবে কার্যকর নয়।
বক্তৃতা পদ্ধতির গুরুত্ব ( Significance / Importance of Lecture Method ) :-
উপরোক্ত সুবিধা - অসুবিধা আলোচনা করে বলা যায় যে , কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শ্রেণিশিক্ষনে বক্তৃতা পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো শিক্ষন পদ্ধতি শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করা হোক না কেন , বক্তৃতা পদ্ধতি ছাড়া কোনো পদ্ধতিকেই শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করা যাবে না। তাই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সকল পদ্ধতির ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতির যথাযথ ব্যবহার উপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন -
১. পাঠ অবতারণাতে এবং ব্যাখ্যাকরণে এই পদ্ধতির যথার্থ ব্যবহার অবশ্যই প্রত্যেক শিক্ষক - শিক্ষিকাগণ আয়ত্ত করে শ্রেণিকক্ষে যথার্থভাবে তার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন।
২. শুধুমাত্র বক্তৃতা বা ভাষণ ও সামান্য শিক্ষা উপকরণের ( যেমন ব্ল্যাকবোর্ড ) মাধ্যমেই শ্রেণিকক্ষে এই পদ্ধতি উপস্থাপন করা যায়।
৩. Feedback এর পর বিষয়কে পুনরায় উপস্থাপনের জন্য এই পদ্ধতি অবশ্য প্রয়োজন।
৪. আলোচ্য বিষয়কে বাস্তব জীবন উপযোগী করে তুলতে এই পদ্ধতির দ্বারা ব্যাখ্যা করতে হয় ও উপস্থাপন করতে হয়।
৫. একসঙ্গে একাধিক শিক্ষার্থীকে দ্রুত শিক্ষাদান কাজে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
৬. শিক্ষক - শিক্ষার্থীর কোনো নিজস্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে এই পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী।
0 comments