স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য যোগশিক্ষা বা যোগচর্চার গুরুত্ব আলোচনা করো। ( Importance of Yoga Education )

by - June 21, 2021

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য যোগশিক্ষা বা যোগচর্চার গুরুত্ব আলোচনা করো। ( Importance of Yoga Education )  



স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য যোগচর্চা :- 


স্বাস্থ্যকে সংস্কৃত শব্দে '' স্বাস্থ্য '' বলা হয় এবং যার একটি গভীর অর্থ রয়েছে। এটি দুটি সংস্কৃত শব্দ নিয়ে গঠিত হয় , যথা '' স্ব '' বা স্বয়ং এবং ' স্থ '  কেন্দ্রিক। সুতরাং স্বাস্থ্যকে মোটামুটি ভাবে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় - স্বাস্থ্য হল ''এক নিজস্ব স্বয়ংকেন্দ্রিক'' ।  ভারতীয় সিস্টেমে স্বয়ং বলতে সত্তা - চেতনা - স্বর্গসুখ   হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিই প্রতিটি মানুষের প্রকৃত সত্য। এই মঙ্গলময় অবস্থার কোনো বিচ্যুতি  হলেই তখন আমরা সেই অবস্থাকে রোগ হিসাবে বিবেচনা করতে পারি। 


সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই দৈহিক শক্তি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন শরীরচর্চার সূত্রপাত হয়। প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতার শরীরচর্চা ছিল শিক্ষার একটি প্রধান অঙ্গ। পরবর্তী প্রতিটি সভ্যতায় আমরা এর ছাপ দেখতে পাই। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান আমাদের দৈহিক শ্রমের সুযোগ অনেক কমিয়ে দেওয়ায় শরীরচর্চা ব্যায়াম এর প্রয়োজন আরো বেড়ে গেছে। তাছাড়া যারা দৈহিক শ্রম করেন  তাঁদেরও দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ , যেমন - হার্ট , লিভার , কিডনি , অগ্নাশয় ও অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলির অর্থাৎ দেহের হরমোন প্রবাহ গতিশীল ও সুষম রাখার জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যায়াম। কারণ দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ ও গতিশীল রাখতে না পারলে পেশিশক্তি একসময় বিপর্যস্ত হয়ে যায়। 

দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা গতিশীল করে শরীরকে সুস্থ রেখে নিজেকে যে কোনো সাধনা বা কর্মোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যেই আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে দ্রাবিড় সাধকরা  যোগব্যায়ামের উদ্ভাবন করেন। বিশ শতকে পাশ্চাত্যে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনেক উন্নত , সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু যোগব্যায়ামের থেকে উন্নত কোন ব্যায়াম তারা আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই পাশ্চাত্যে তথা সারাবিশ্বে সুস্থ থাকার জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই যোগব্যায়ামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই যোগব্যায়ামের প্রতি আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি হাঁপানি , হৃদরোগ , ডায়াবেটিস সহ  বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসন কে প্রয়োগ করা হয়েছে। 


যোগব্যায়াম হলো ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের একটি প্রক্রিয়া।  যথা - 

১. আসনের মাধ্যমে পেশির শিথিলকরণ সম্ভব হয়। 

২. শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমিয়ে এবং শ্বাসবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয় প্রাণায়াম ও শ্বাসচর্চার মাধ্যমে। 

৩. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং মানসিক ক্ষমতা অর্জনে ধ্যানের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। 

৪. জ্ঞানযোগ - এর মাধ্যমে বুদ্ধির হার এবং ধারণাগত সংশোধন দ্বারা বুদ্ধিজীবী পর্যায়ে মনকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। 

৫. জীবন সুখময় করতে এবং মানসিক দিক দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভক্তিযোগের বিভিন্ন পদ্ধতি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

৬. কর্মযোগের নিয়ম অনুসরণ করে সংগঠিত জীবনের সবদিক মানুষের সহজাত দেবত্ব উদ্দীপককে প্রভাবিত করে। 

৭. যোগব্যায়াম অনিদ্রা , উচ্চ রক্তচাপ , দুশ্চিন্তা , মেদাধিক্য , মানসিক চাপ , ডায়াবেটিস ইত্যাদি জীবনশৈলী ব্যাধির উপশম করতে সাহায্য করে। 

৮. যোগব্যায়াম বিষন্নতা উপশম করতে এবং মানসিক ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে। 

৯. যোগব্যায়াম বাত , পিঠে ব্যথা এবং সাধারন পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ব্যাথা ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে থাকে। 

১০. যোগব্যায়াম রক্তসংবহনতন্ত্র বা লসিকা সংক্রান্ত তন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে ; যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

১১. অনেক আসন এবং বিশেষ করে ষষ্ঠক্রিয়া ( নেতি , নৌলি , বস্তি - ইত্যাদি ) শরীর থেকে বিষক্রিয়াগত উপাদান অপসারণ করতে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। সেগুলি সাইনাসের প্রদাহ , কোষ্ঠকাঠিন্য , অম্লতা , অম্বল , মাইগ্রেন দূর করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতে রোগপ্রতিরোধ কে সুস্পষ্ট করতে পারে। 

 সুতরাং যদিও যোগ একটি আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান হিসেবে উন্নত ছিল , কিন্তু তা আজ একটি স্ব - নিরাময় পদ্ধতিতে একটি সুস্থ শরীর ও মন বজায় রাখার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়। 

You May Also Like

0 comments