­
প্রথাগত শিক্ষা ও প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার পার্থক্য। - NANDAN DUTTA

প্রথাগত শিক্ষা ও প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার পার্থক্য।

by - March 08, 2025

প্রথাগত শিক্ষা ও প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার পার্থক্য। 

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ও প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার পার্থক্য। 




প্রথাগত শিক্ষা বা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ও প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার পার্থক্য :- 


১. নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত। পাঠক্রম , পঠন - পাঠন , মূল্যায়ন - ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই কঠোর নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষা নিয়ন্ত্রিত হলেও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়। প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় পাঠক্রম নির্বাচন , পঠন - পাঠনে অংশগ্রহণ , মূল্যায়ন - ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী যথেষ্ট স্বাধীনতা লাভ করে। 

২. শিক্ষকের ভূমিকা ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষা বহুলাংশেই যোগ্য শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হয়। শ্রেণীকক্ষে পঠন - পাঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সম্পূর্ণরূপে শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষক পাঠক্রম ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা নগন্য। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে নিজেকেই শিখতে হয়। 

৩. পাঠক্রমের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষায় পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সেরূপ স্বাধীনতা থাকেনা। শিক্ষার্থীকে পূর্বপরিকল্পিত পাঠক্রম যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে। প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় বৈচিত্রময় বিভিন্ন পাঠক্রমের মধ্যে থেকে শিক্ষার্থী নিজের পছন্দমত পাঠক্রম নির্বাচন করতে পারে। 

৪. মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষায় মূল্যায়ন শৃঙ্খলাবদ্ধ ও কঠোরভাবে পরিচালিত হয়। পূর্বনির্ধারিত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে বাধ্য থাকে। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় শিক্ষার্থী নিজের সুবিধামত পাঠক্রমকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। 


৫. বয়সসীমা ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষার বয়সসীমা পূর্ব হতে নির্দিষ্ট থাকে। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় বয়সসীমার ক্ষেত্রে কোনো বাধানিষেধ থাকেনা। শিক্ষার্থী যেকোনো বয়সে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। 

৬. প্রতিষ্ঠানগত পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষার প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিদ্যালয় ভবন থাকে। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র কোনো বিদ্যালয় ভবন থাকেনা ; সাধারণতঃ প্রথাগত শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতেই প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষা পরিচালিত হয়। 

৭. আর্থিক বিষয়ের পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। শিক্ষক , বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন , পাঠ্যপুস্তক - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রথাগত শিক্ষায় যথেষ্ট অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষা তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়েই শিক্ষা প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় , বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় হয় না। ফলে প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় খরচ যথেষ্টই কম। 

৮. ছাত্রসংখ্যার পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষায় ছাত্রসংখ্যা সীমিত। প্রতিটি প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় যেকোনো সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারে। 


৯. গঠনগত পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে সংগঠিত। এক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষাস্তর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার মত ততটা সংগঠিত নয় এবং এক্ষেত্রে শিক্ষাস্তরগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকেনা বললেই চলে। 

১০. শিক্ষণ পদ্ধতিতে পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষণ পরিচালিত হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভিত্তিতে। শিক্ষার্থী সরাসরি শিক্ষকের নিকট বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক পেতে পারেন। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক সম্ভব নয়। 

১১. সংস্থাগত পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষার প্রধান সংস্থা হল বিদ্যালয়। অন্যদিকে প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার দুটি সংস্থা হল - দূরশিক্ষা ও মুক্তশিক্ষা। 

১২. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য :- 
প্রথাগত শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। এই উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে প্রথাগত শিক্ষা পরিচালিত হয়। কিন্তু প্রথাবহিৰ্ভূত শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয়ছুট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ প্রধান , উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি - ইত্যাদি। 

You May Also Like

0 comments