­
ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতার কারণগুলি লেখ। - NANDAN DUTTA

ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতার কারণগুলি লেখ।

by - May 06, 2022

ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতার কারণগুলি লেখ। 

ভারতে নগরের দারিদ্রতা সম্পর্কে লেখ। 

ভারতে নগরের দারিদ্রতার কারণগুলি লেখ। 

Write the causes of urban poverty in India.




ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতার কারণ :- 


ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতা ও গ্রামকেন্দ্রিক দারিদ্রতার মধ্যে কিছু উৎসগত ও প্রকৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু গ্রামে কৃষিভিত্তিক ও শহরে শিল্প ও অকৃষিভিত্তিক অর্থনীতি প্রচলিত , তাই উভয় স্থানের দারিদ্রতার মধ্যে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে শহরকেন্দ্রিক দারিদ্রতার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। শহরের জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংখ্যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতার কারণ হিসাবে যেসব বিষয়গুলি উল্লেখ করা যায় - সেগুলি হল - 


১. অতিরিক্ত জনবসতি নগরের দারিদ্রতার একটি অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে উপার্জনের সূত্র ও উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের ভারসাম্য বজায় থাকে না। বিপুল সংখ্যক বেকার জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

২. বিশ্বায়ন ও অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে ভারতে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হয় ১৯৯০ এর দশকে। কিন্তু এর ফলে যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় তা ভারতের বিপুল জনসংখ্যা বিশিষ্ট নগরগুলির দারিদ্রতা মোচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল না। পক্ষান্তরে বিশ্বায়ন শহরের মানুষের ভোগবাদের প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে দরিদ্রতা বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে দেয়। 

৩. শহরাঞ্চলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা গ্রামীণ এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। শুধুমাত্র চাকরি নির্ভর পঠন - পাঠন , বৃত্তিশিক্ষার অভাব , উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব , বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির অভাব - ইত্যাদি কারণে শহরাঞ্চলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

৪. শহরাঞ্চলের বেকার যুবক - যুবতীদের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প , স্বল্প ব্যবসার জন্য ঋণপ্রদান , বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি - ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেগুলি যথেষ্ট নয়। সরকারি ঋণ প্রকল্পের ব্যবস্থা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির কঠোর শর্তের জন্য প্রকৃত ঋণ প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। 

৫. বহুক্ষেত্রে ভ্রান্ত শিল্পনীতির কারণে বহু শিল্প লোকসানে চলছে এবং সেগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারি দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শিল্প ক্ষেত্রে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরী হচ্ছে না। 

৬. কিছু নীতি বহির্ভুত শিল্পোদ্যোগ নাগরিক দারিদ্রতা সৃষ্টির অপর একটি কারণ। যেসকল শিল্পকেন্দ্রগুলি অতিমাত্রায় দূষণ সৃষ্টিকারী - তাদের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার বহুক্ষেত্রে মালিকের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের চেষ্টা ও নীতিবহির্ভুত শিল্পোদ্যোগ শহরাঞ্চলে বেকারত্ব সৃষ্টির অন্যতম কারণ। 


৭. ভারতের শিল্পক্ষেত্রগুলির মধ্যে বেশিরভাগই আধুনিকীকরণ থেকে বহু দূরে আছে। প্রথাগত উৎপাদন পদ্ধতি , আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না করা , চাহিদা অনুযায়ী যোগান অব্যাহত না রাখা , আধুনিক শিল্পনীতি গ্রহণ না করা - ইত্যাদি কারণে শিল্পকেন্দ্রগুলিতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে কর্মসংস্থানের সংকোচন ঘটেছে। 

৮. সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির প্রায় প্রতিটি বর্তমানে লোকসানের মুখ দেখছে। কর্মীদের গাফিলতি , সরকারের যথার্থ নীতি ও উদ্যোগের অভাব - ইত্যাদি কারণে সরকারি শিল্পকেন্দ্রগুলি আজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং বহু শিল্প কেন্দ্র বন্ধ হয়েও গেছে। এর ফলে নাগরিক দারিদ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

৯. বহু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলা শ্রমিক আন্দোলন , ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন , লক - আউট , শ্রমিক ছাঁটাই - ইত্যাদির কারণে একদিকে যেমন বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে , আবার অন্যদিকে উল্লেখযোগ্যভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শ্রমিক শ্রেণী এবং বৃদ্ধি পেয়েছে বেকারত্ব। 

১০. ভারতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যগুলি অনেকসময় আন্তর্জাতিক পণ্যের গুণমানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনা। এর ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় পণ্যের চাহিদা কমছে ; অন্যদিকে তেমন ভারতীয় শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব ও দারিদ্রতা। 

১১. সরকারি ক্ষেত্রেও নিয়োগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে বিগত দুই দশকে সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমন বহু সরকারি সংস্থা রয়েছে - যেখানে নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে এবং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। 

১২. মুদ্রাস্ফীতি নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। শহরাঞ্চলে একদিকে বেড়েছে জীবনধারণের খরচ , অন্যদিকে কমেছে উপার্জন ও সংকুচিত হয়েছে উপার্জনের সূত্রগুলি। মানুষ তাদের ন্যুনতম প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতি কিছু সুফল প্রদান করলেও বাস্তবে তা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি করেছে এবং মানুষকে অসহায় করে তুলেছে। 

ভারতে নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে আরো বহু বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন - রাজনৈতিক অসাধুতা , কার্যকর সরকারি নীতির অভাব , ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অসাধুতা , কোনো কোনো ব্যবসায়িক সংগঠনের সাথে সরকারের অশুভ আঁতাত , শিক্ষিত ব্যক্তিদের চাকুরীর প্রতি অত্যধিক নির্ভরশীলতা , পরিকাঠামোগত সমস্যা , সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি ভারতের নগরকেন্দ্রিক দারিদ্রতাকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।  


You May Also Like

0 comments