গ্রামীণ দারিদ্রতার কারণগুলি আলোচনা কর। গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরীকরণের উপায় সম্পর্কে আলোচনা কর।

by - May 03, 2022

গ্রামীণ দারিদ্রতার কারণগুলি আলোচনা কর। গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরীকরণের উপায় সম্পর্কে আলোচনা কর। 

গ্রামীণ দারিদ্রতা সম্পর্কে আলোচনা কর।

Discuss the causes of rural poverty. Discuss ways to alleviate rural poverty. ( In Bengali ) .  




গ্রামীণ দারিদ্রতা :- 


ভারতীয় জনজীবনে গ্রাম একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ হিসাবে অবস্থান করে। আজও ভারতে মোট ভৌগোলিক আয়তনের ৭৪ - ৮০ শতাংশ গ্রাম। ভারতের জাতীয় আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে। ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আছেন। অথচ গ্রামীণ জনজীবনের প্রায় ৫০% মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। এর প্রধান কারণ হল প্রায় ৭০% কৃষিজমি মাত্র ১২% কৃষকের মালিকানাধীন রয়েছে। ফলে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যাই বেশি - যা গ্রামীণ দারিদ্রতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এমনকী , কৃষি সমৃদ্ধ পাঞ্জাব - হরিয়ানা অঞ্চলেও প্রায় ৩০% মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। 


গ্রামীণ দারিদ্রতার কারণ :- 


১. বিশেষভাবে গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরীকরণের জন্য সরকার কর্তৃক বহু ব্যবস্থা গৃহীত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। ফলে সরকারের সদিচ্ছা থাকা স্বত্তেও গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরীকরণ কর্মসূচীগুলি গ্রামীণ দারিদ্রতার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। 

২. গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ ভূমিহীন। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় মোট কৃষিজমির প্রায় ৭০ শতাংশ জমি মাত্র ১২ শতাংশ কৃষকের মালিকানাধীন রয়েছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে ভারত স্বয়ম্ভর হলেও বেশিরভাগ কৃষক কৃষিক্ষেত্র থেকে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে পারেন না। 

৩. জলবায়ুগত প্রতিকূলতা ভারতীয় গ্রামীণ দারিদ্রতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম কারণ। এমন বহু রাজ্য আছে যেখানে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়না বা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হয়। যথেষ্ট বৃষ্টিপাতের অভাব কৃষিক্ষেত্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে। 

৪. ভারতের বহু গ্রামে আজও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হয়নি। আবার এমন বহু গ্রাম আছে যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হলেও তা সঠিকভাবে পরিচালিত করা হয়না বা তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে কৃষিজ উৎপাদনের সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগ অপরিহার্য। ফলে বহু গ্রামে বিদ্যুতের অভাবে কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং গ্রামীণ দারিদ্রতা বৃদ্ধি পায়। 

৫. কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক ও উন্নত যন্ত্রপাতির অভাব কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করে। আজও ভারতের বেশিরভাগ জমিতে প্রযুক্তির ব্যবহার হয়না। কৃষকদের অর্থিক দুরবস্থার কারণে তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে ব্যর্থ হন। 


৬. বিকল্প কৃষির অভাব ভারতের গ্রামীণ দারিদ্রতার অপর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। ভারতীয় কৃষি সম্পূর্ণভাবে জমির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিকল্প হিসাবে হাঁস - মুরগি প্রতিপালন , মৎস্য চাষ , ফ্লোরিকালচার - ইত্যাদি বিষয়গুলি ব্যাপকভাবে শুরু করা যায়নি। 

৭. গ্রামীণ শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রে অর্থলগ্নিকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তির ব্যাপারে সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও চড়া হারে সুদ - ইত্যাদির জন্য কৃষকেরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

৮. গ্রামীণ জনসমাজ সর্বদাই সাক্ষরতার দিক দিয়ে পিছিয়ে। বিশেষ করে নারীশিক্ষার হার গ্রামীণ জনসমাজে অত্যন্ত কম। শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম হওয়ার ফলে কৃষি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়না। এটিও গ্রামীণ দারিদ্রতার একটি কারণ। 

৯. ভারতীয় গ্রামগুলিতে আজও আধা - সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা বর্তমান। এই ধরণের ব্যবস্থায় দরিদ্র কৃষকেরা সর্বদাই শোষিত হন। সুদখোর মহাজন , পণ্যের দালাল - ইত্যাদি সম্প্রদায়ের কারণে গ্রামীণ কৃষকদের অবস্থা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। 

১০. এছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ - খরা , বন্যা , অতিবৃষ্টি ; মৌসুমী বায়ুর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা ; অপ্রতুল স্বাস্থ্য পরিষেবা , ধর্মান্ধতা , কুসংস্কার , সংকীর্ণতাবোধ , চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গি , জাত - পাতের রাজনীতি , জোতদারদের অত্যাচার ও শোষণ - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ভারতীয় গ্রামগুলিকে পিছিয়ে রেখেছে এবং দারিদ্রতা বিকাশের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। 


গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরীকরণের উপায় :- 


(ক ) গ্রামীণ হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের প্রসার এবং এজন্য সরকার কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ। 
(খ ) শিল্প ও কৃষির বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে কার্যকরী বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন। 
(গ ) বিকল্প কৃষিজ উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ। 
(ঘ ) সার্বিক সাক্ষরতার বিস্তার ; বিশেষ করে নারী শিক্ষার উপর জোর দেওয়া। 
(ঙ ) গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরীকরণের কর্মসূচিগুলিকে আরও সুসংবদ্ধ রূপ প্রদান করে তাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। 
(চ ) দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী অসহায় পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের দারিদ্রতা মোচনের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা। 
(ছ ) পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা , পানীয় জল , শিক্ষা - স্বাস্থ্য ইত্যাদির উন্নতি করতে হবে। 
(জ ) দারিদ্রতা দূরীকরণ কর্মসূচিগুলিকে জনমুখী করে তুলতে গ্রামীণ জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। 
(ঝ ) স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করে মা ও শিশুর সার্বিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। 
( ঞ ) কৃষি ছাড়া অন্যান্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। 
(ট ) দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চয়েত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।       

       

You May Also Like

0 comments