Types of learning - according to Gagne ( শিখনের প্রকারভেদ :-)

by - December 05, 2021

Types of learning - according to Gagne 

শিখনের প্রকারভেদ :- 

গেইনি / গ্যাগনি -র মত অনুসারে শিখনের প্রকারভেদ :- 


আমেরিকার বিশিষ্ট শিক্ষা - মনোবিদ রবার্ট এম গ্যাগনি 1956 সালে ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের জটিলতার স্তর অনুযায়ী শিখনের প্রকারভেদ সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি শিখনের আটটি প্রধান প্রকার চিহ্নিত করেন এবং সেগুলিকে সজ্জাক্রম অনুযায়ী বিভক্ত করেন। গ্যাগনির মতে, এই শ্রেণিবিন্যাসে উচ্চ পর্যায়ের (higher orders) শিখন নিম্নস্তরের শিখনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এদের উৎকর্ষের জন্য পূর্ববর্তী শিখনের জ্ঞান অপরিহার্য। এই আট ধরনের শিখনের মধ্যে প্রথম চারটি (এক থেকে চার পর্যন্ত) পর্যায় মূলত শিখনের আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গিকে সূচিত করে। অন্যদিকে, অপর চারটি (পাঁচ থেকে আট পর্যন্ত) পর্যায় শিখনের প্রজ্ঞামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে সূচিত করে। নীচে গ্যাগনির আট প্রকার শিখন সম্পর্কে আলােচনা করা হল। 


১. সংকেত শিখন :-  

এটি সবচেয়ে সরল প্রকৃতির শিখন। এটিকে সর্বপ্রথম বর্ণনা করেন আচরণবাদী মনােবিদ প্যাভলভ (Pavlov)। এটি প্রকৃতপক্ষে ধ্রুপদি বা প্রাচীন অনুবর্তন (classical conditioning)- জনিত শিখন। বহু পরীক্ষানিরীক্ষার পর প্যাভলভ দেখান যে, স্বাভাবিক উদ্দীপকের সঙ্গে যদি অন্য কোনাে উদ্দীপক যুক্ত হয় এবং এটি যদি একাধিকবার হয় তাহলে স্বাভাবিক উদ্দীপক যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যুক্ত বা গৌণ উদ্দীপক সেই একই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গৌণ বা কৃত্রিম বা বিকল্প উদ্দীপকের দ্বারা প্রাণীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে ধ্রুপদি বা প্রাচীন অনুবর্তন বলে। বর্ণ, শব্দ, নামতা ইত্যাদি শিখনে প্রাচীন অনুবর্তন' তথা সংকেত শিখনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ব্যক্তির মধ্যে অভ্যাস গঠনে এই শিখনের বিশেষ অবদান লক্ষ্য করা যায়। 

২. উদ্দীপক - প্রতিক্রিয়া শিখন :- 

 এটি প্রকৃতপক্ষে এক প্রকার উন্নত ধরনের শিখন। এটি সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন নামে পরিচিত। সক্রিয়া বা অপারেন্ট অনুবর্তন হল এমন একটি শিখন প্রক্রিয়া যেখানে শক্তিদায়ী উদ্দীপকের সাহায্যে বাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা হয়। অপারেন্ট অনুবর্তনের প্রবর্তক হলেন বিশিষ্ট মনােবিদ বি. এফ স্কিনার (B. F. Skinner)। সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনে আচরণ ঐচ্ছিক অর্থাৎ প্রাণীর ইচ্ছাধীন। পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক আচরণের মধ্য দিয়ে বাঞ্ছিত আচরণের দিকে নিয়ে যাওয়াই সক্রিয় অনুবর্তনের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে প্রাণীর প্রতিক্রিয়া ঘটার পর শক্তিদায়ী উদ্দীপক ব্যবহার করা হয়। এই অনুবর্তনে প্রেষণা ও পুরস্কারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।


৩. শৃঙ্খলিতকরণ শিখন :-

এটি অত্যন্ত উন্নত মানের শিখন। এই ধরনের শিখনে প্রাণী এমন একপ্রকার দক্ষতা অর্জন করে, যার সাহায্যে সে দুই বা তার অধিক পূর্বাৰ্জিত উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া বন্ধনকে একটি সংযােজিত পর্যায়ক্রম (a linked sequence)-এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। এই প্রকার শিখনের দ্বারা অতি জটিল চিন্তন কর্মসমন্বয় দক্ষতা (psycho-motor skill) অর্জিত হয়। যেমন, সাইকেল চালানাে বা পিয়ানাে বাজানাে - ইত্যাদি। 

৪. বাচনিক সংযোগসাধনমূলক শিখন :- 

এটিও এক ধরনের শৃঙ্খলিতকরণ, যাতে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সংযােগ সাধন করা হয়। এখানে সংযােগ সাধনের উপাদানগুলি প্রকৃতিগতভাবে বাচনিক। ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাচনিক সংযােগ সাধনের গুরুত্ব অপরিসীম। 

৫. বিনিশ্চয় শিখন :- 

এই প্রকার শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই সকল সামর্থ্য বা দক্ষতা গড়ে তােলা হয়, যার দ্বারা তারা একই ধরনের এক গুচ্ছ উদ্দীপকের ক্ষেত্রে যথােপযুক্ত অথচ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এই ধরনের শিখন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন। গ্যাগনির মতে, এই জটিলতার মূলে রয়েছে এক ধরনের অহেতুক সংযােজন (Interference) যার ফলে একটি শিখন অপর একটি শিখনকে বাধা দান করে। এই অহেতুক সংযােজনকেই বিস্মৃতির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৬. ধারণা শিখন :- 

ধারণা হল কোনাে একটি বস্তু সম্পর্কে সামগ্রিক জ্ঞান। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়েই ধারণা গঠন করা হয়। ধারণার দ্বারা আমরা বহু বিচ্ছিন্ন জ্ঞানকে একটিমাত্র অভিজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। কোনাে বিষয়ে ধারণা গঠন করতে হলে প্রথমে প্রত্যক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ প্রয়ােজন। তারপর চাই অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ ও সর্বজনীন বা সাধারণ বৈশিষ্ট্য নির্ণয়। ধারণা শিখনে কোনাে বস্তু বা বিষয়ের আলােচনার সময় সেগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্যের দিকে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। 


৭. নিয়ম শিখন :-

 এটি প্রকৃতপক্ষে অতি উচ্চমানের প্রজ্ঞামূলক শিক্ষাপদ্ধতি। এই জাতীয় শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধারণার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক খুঁজে পেতে সমর্থ হয়। তার ফলে তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেগুলিকে প্রয়ােগ করতে পারে। এই ধরনের শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাধারণ নিয়মাবলি, বিভিন্ন প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে অবহিত হয়। 

৮. সমস্যা সমাধানমূলক শিখন :- 

সমস্যাসমাধান হল এক বিশেষ ধরনের শিখন পদ্ধতি যাতে শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া বা সাড়াটিকে আবিষ্কার করতে হয়। কোনাে লক্ষ্যপূরণের পথে যেসব বাধা বা অসুবিধা দেখা যায়, সেগুলিকে অতিক্রম করার প্রক্রিয়াকে সমস্যাসমাধান বলা হয়। কোনাে সমস্যার সম্মুখীন হলে ব্যক্তি বা প্রাণী তার সমাধানের জন্য বারে বারে চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টাগুলির পিছনে কোনাে চিন্তা বা পরিকল্পনা থাকে না। প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে সে সঠিক প্রচেষ্টাগুলি নির্বাচন করে এবং ভুল প্রচেষ্টাগুলি বাতিল করে। এইভাবে এমন এক সময় আসে যখন সে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ামাত্র সঠিক প্রতিক্রিয়া করে সমস্যার সমাধান। করে। একেই সমস্যা সমাধানমূলক শিখন বলে। মনােবিদদের মতে, এই ধরনের শিখন সব থেকে জটিল। গ্যাগনি সমস্যাসমাধান’-কে চিন্তন প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।


You May Also Like

0 comments