স্বাধীনতার অধিকার right to freedom
ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কে আলোচনা কর।
ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত স্বাধীনতার অধিকার :-
ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত স্বাধীনতার অধিকার হল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের ব্যক্তি - স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধানের ১৯ থেকে ২২ নং ধারায় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতিলাভ করেছে। ভারতীয় সংবিধানের ১৯ ( ১ ) নং ধারায় নাগরিকদের ৬ প্রকার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। যথা -
১. বাকস্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের অধিকার।
২. শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার।
৩. সংঘ বা সমিতি , সমবায় সমিতি - ইত্যাদি গঠনের অধিকার।
৪. ভারতের সর্বত্র চলাফেরা করার অধিকার।
৫. ভারতের যেকোনো অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার।
৬. যেকোনো বৃত্তি , পেশা বা ব্যবসা - বাণিজ্যের অধিকার।
১. বাকস্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের অধিকার :-
বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য একান্ত অপরিহার্য। ভারতের প্রতিটি নাগরিক নিজ ধ্যান - ধারণা ও বিবেকবুদ্ধি অনুসারে মতামত প্রকাশ করতে পারে। মৌখিক মতামত প্রকাশের পাশাপাশি সভা - সমিতি , আলাপ - আলোচনা , বিতর্ক প্রভৃতির মাধমেও মতামত প্রকাশ করা যায়।
তবে ১৯ ( ২ ) নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্র নাগররিকদের বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে। সেগুলি হল -
(ক ) ভারতের সংহতি ও সারভৌমিকতা রক্ষা ,
(খ ) রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা ,
(গ ) বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধন স্থাপন ,
(ঘ ) দেশে শান্তি - শৃঙ্খলা রক্ষা ,
(ঙ ) শালীনতা বা সদাচার রক্ষা ,
(চ ) আদালত অবমাননা প্রতিরোধ ,
(ছ ) মানহানি প্রতিরোধ ,
(জ ) অপরাধমূলক কার্যে প্ররোচনাদান বন্ধ করা।
২. শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার :-
জনস্বার্থ সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে আলাপ - আলোচনা , জনসমাবেশে সমবেত হওয়া , শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ - ইত্যাদি অধিকার ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত হয়েছে। তবে ১৯ ( ৩ ) নং ধারায় এই অধিকারগুলি ৫ টি শর্তাধীনে ভোগ করা যেতে পারে। শর্তগুলি হল -
(ক ) সভাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে ,
(খ ) জনগণ নিরস্ত্রভাবে সভা - সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে ,
(গ ) জনশৃঙ্খলার প্রয়োজনে রাষ্ট্র এই অধিকার ভোগের ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবে।
(ঘ ) ভারতের স্বাধীনতা রক্ষার্থে রাষ্ট্র বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে ,
(ঙ ) দেশের সংহতি রক্ষার জন্যও রাষ্ট্র বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে।
৩. সংঘ বা সমিতি , সমবায় সমিতি - ইত্যাদি গঠনের অধিকার :-
ভারতীয় নাগরিকেরা শ্রম , ক্রীড়া , বিজ্ঞান , সাহিত্য , সংস্কৃতি , অধিকার রক্ষা - ইত্যাদির জন্য সভা , সমিতি , সমবায় সমিতি , রাজনৈতিক দল - ইত্যাদি গঠন করতে পারে। তবে অধিকারটি অবাধ নয়। ১৯ (৪) নং ধারা অনুসারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী , নীতিবহির্ভুত , রাষ্ট্রীয় সংহতি ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী সভা - সমিতির ওপর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। তবে , রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বাধানিষেধগুলি যুক্তিসঙ্গত কি না - তা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের হাতে অর্পিত হয়েছে।
৪. ও ৫. ভারতের সর্বত্র চলাফেরা ও বসবাসের অধিকার :-
ভারতের সর্বত্র চলাফেরা ও বসবাসের অধিকার ভারতীয় নাগরিকদের রয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ১৯ (৫) নং ধারা অনুসারে (ক ) জনস্বার্থ ও (খ ) তপশিলভুক্ত উপজাতিগুলির স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে উক্ত অধিকারদুটির ওপর বাধানিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
৬. বৃত্তি বা পেশা গ্রহণ ও ব্যবসা বাণিজ্যের অধিকার :-
প্রতিটি ভারতীয় নাগরিক নিজ পছন্দমতো বৃত্তি , পেশা গ্রহণ ও ব্যবসা - বাণিজ্য করার অধিকারী। কিন্তু সংবিধানের ১৯ (৬) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্র বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে। যেমন -
(ক ) জনস্বার্থ বিরোধী যেকোনো ব্যবসা - বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রের আছে।
(খ ) বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশার ক্ষেত্রে কর্মীর যোগ্যতা নির্ধারণের অধিকার রাষ্ট্রের আছে।
শাস্তিদান সংক্রান্ত ব্যবস্থা ( ২০ নং ধারা ) :-
(ক ) সংবিধানের ২০ (১ ) নং ধারায় বলা হয়েছে প্রচলিত আইন ভঙ্গের অপরাধ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।
(খ ) ২০ (২) নং ধারায় বলা হয়েছে , কোনো ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য একাধিকবার শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
(গ ) ২০ (৩) নং ধারায় বলা হয়েছে , অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবেনা।
জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার ( ২১ নং ধারা ) :-
সংবিধানের ২১ নং ধারায় বলা হয়েছে , আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন অথবা ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তবে , দুর্গাদাস বসু অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে , সংবিধানের ২১ নং ধারাটি শাসন বিভাগের স্বেচ্ছাচারী বা বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যক্তিকে রক্ষা করলেও এই ধারা আইন বিভাগের বিরুদ্ধে রক্ষা কবচ বলে বিবেচিত হয়না।
শিক্ষার অধিকার ( ২১- ক নং ধারা ) :-
২০০২ সালে সংবিধানের ৮৬ তম সংশোধনের মাধ্যমে ২১- ক নং ধারাটি সংযোজিত হয়। এই ধারাটিতে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। এই ধারা অনুসারে , রাষ্ট্র ৬ - ১৪ বছর বয়স্ক প্রতিটি শিশুর জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। এই ধারার ভিত্তিতে ২০১০ সালের ১ লা এপ্রিল থেকে সারা ভারতে শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়।
গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কিত ব্যবস্থা ( ২২ নং ধারা ) :-
(ক ) ২২(১) নং ধারায় বলা হয়েছে , কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তাকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে। আটক ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।
(খ ) ২২ ( ২) নং ধারা অনুসারে , গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উপস্থিত করতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া তাকে আটকে রাখা যাবে না।
(গ ) ২২ (৩) নং ধারায় বলা হয়েছে , শত্রুভাবাপন্ন বিদেশি ও নিবর্তনমূলক আটক আইনে ধৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উক্ত অধিকারগুলি কার্যকর হবেনা।
0 comments