উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা কর। Write a short note on the recommendations of Radhakrishnan Commission - 1948 for higher education .

by - July 22, 2021

Write a short note on the recommendations of Radhakrishnan Commission - 1948 for higher education . 

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা কর। 




1948 খ্রিস্টাব্দের 5 ই নভেম্বর স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। এর সভাপতি ছিলেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন। এই কমিশনের মোট সদস্য ছিলেন 10 জন এবং এই 10 জনের মধ্যে 3 জন ছিলেন বিদেশি। কমিশের সদস্য সম্পাদক ছিলেন ডক্টর নির্মল কুমার সিদ্ধান্ত। কমিশনের সদস্যগণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপদ্ধতি পরিদর্শন এবং দেশের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাবলির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে 747 পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। 


উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ :- 

A. উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য :- 
১. বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সমাজের নানান ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের উপযুক্ত ব্যক্তিদের গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। দেশকে অগ্রগতির পথে পরিচালিত করতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের। 
২. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষার্থী জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির যোগ্য ধারক ও বাহক করে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। 
৩. শিক্ষার্থীদের সামনে সমগ্র জগৎ এবং মানবজীবন সম্পর্কে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। 
৪. গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য ন্যায়বিচার , স্বাধীনতা , সাম্য এবং ভাতৃত্ব - অনুসারের প্রতিটি শিক্ষার্থী শিক্ষার সুযোগ লাভ করবে। 
৫. উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন করা। 
৬. উচ্চশিক্ষার অপর একটি লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবসভ্যতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে তোলা। ৭. জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিকতা বোধের শিক্ষার বিকাশ। 
৮. বিজ্ঞান , কারিগরিবিদ্যা , কৃষিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার প্রসার ঘটানো। 


B. বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন :- 
১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারমিডিয়েট স্তরটির বিলোপ ঘটিয়ে , সেটিকে উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। 
২. প্রতিটি রাজ্যে অধিক সংখ্যক উন্নতমানের ইন্টারমিডিয়েট মহাবিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। 
৩. সাধারণধর্মী শিক্ষার পাশাপাশি বহু সংখ্যক বৃত্তিশিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। 
৪. শিক্ষকদের যোগ্যতাকে সময়োপযোগী করে তোলার জন্য কমিশন  বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রিফ্রেসার কোর্স প্রবর্তনের সুপারিশ করে। 
৫. মহাবিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ 1500 জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ 3000 জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। ৬. ৬. গ্রন্থাগার ও বীক্ষণাগারগুলির উন্নতি বিধান করতে হবে। 

C. শিক্ষক সম্পর্কিত সুপারিশ :- 
যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার উপযুক্ত মান , সাফল্য ইত্যাদি নির্ভর করে যোগ্য , প্রতিভাবান এবং উপযুক্ত শিক্ষক - শিক্ষিকার ওপর। তাঁর শিক্ষক সংক্রান্ত সুপারিশগুলি হল - 
১. মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ। 
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থাভাব দূরীকরণ। 
৩. মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষিকাদের গুরুত্ব ও স্বীকৃতি প্রদান। 
৪. প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কয়েকজন করে রিসার্চ ফেলো নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। 
৫. শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক - শিক্ষিকাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। 


D. ব্যায়নির্বাহ সংক্রান্ত সুপারিশ :- 
বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বলেছেন , বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলে উচ্চশিক্ষার প্রসার বা মানোন্নয়ন - কোনোটিই সম্ভব নয়। 
১. মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহনির্মাণের জন্য অর্থ অনুদান। 
২. শিক্ষা উপকরণ ও আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান। 
৩. গ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও বইপত্র কেনার জন্য আর্থিক অনুদান। 
৪. ছাত্রাবাস পরিচালনার জন্য আর্থিক অনুদান। 
৫. শিক্ষক - শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য বেতন , প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন - প্রভৃতির জন্য উপযুক্ত সাহায্য দান। 
৬. গবেষণামূলক কাজ পরিচালনার জন্য অর্থসাহায্য। 

E. নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ও অন্যান্য সুপারিশ :- 
১. বেনারস ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রদায়িক সনদ বাতিল করতে হবে। 
২. কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার্থীরা সর্বভারতীয় ভিত্তিতে পঠন পাঠনের সুযোগ পায় - তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
৩. UGC - র অনুমোদনক্রমে দেশের বিভিন্ন অংশে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। 
৪. নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপযুক্ত ও উন্নতমানের গবেষণাগার স্থাপন করতে হবে। 
৫. বোলপুরের বিশ্বভারতী এবং দিল্লির জামিয়া - মিলিয়া - ইসলামিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদান দিতে হবে। 
৬. নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার সময় আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

F. ভাষা শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ :- 
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মোট তিনটি ভাষা চর্চা করতে হবে। এগুলি হল - ১. মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা  , ২. রাষ্ট্রভাষা এবং ৩ ইংরেজি ভাষা। মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার্থীরা যাতে ইংরেজি চর্চা করার সুযোগ পায় , সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।    


You May Also Like

0 comments