3. সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা :-

3. Analyse the different theories regarding the authorship of the Indus Valley Civilisation.

সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা :-

যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমানের অভাব , সিন্ধু উপত্যকা ও হরপ্পায় প্রাপ্ত লিপিগুলির যথাযথ পাঠোদ্ধারের অভাব - ইত্যাদি কারণে এই সভ্যতা তথা সংস্কৃতির স্রষ্টাদের চিহ্নিত করা দুরূহ ব্যাপার। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার না হলে সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টাদের চিহ্নিত করা যাবে না।
'' It is impossible at the present state of our knowledge to come to any definite conclusion ''
- The Vedic Age.



নৃতত্ত্ববিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতামত 
নৃতত্ববিদদের মতে , সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা ছিলেন প্রোটো অস্ট্রোলয়েড ও মোঙ্গল জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষ। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে , যুগে যুগে হরপ্পা সংস্কৃতির অবক্ষয় ঘটে ও ভিন্ন ভিন্ন ধরণের সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। আবার এই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি দ্বারা সিন্ধু উপত্যকা ও হরপ্পা সমৃদ্ধশালী হয়। যে সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে এই সংস্কৃতিকে মিশ্র সংস্কৃতি বলা যায়।

সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল 
ধ্বংসাবশেষের নিদর্শন থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে , এই সভ্যতা তিন হাজার বছর পূর্বের সুমের , মেসোপটেমিয়া - ইত্যাদি সভ্যতার সমসাময়িক। মহেঞ্জোদাড়োর ধবংসাবশেষে আরো কয়েকটি স্তর আবিষ্কৃত হওয়াতে আরো জানা যায় যে এই সভ্যতা প্রায় দুহাজার বছর স্থায়ী ছিল।
ঐতিহাসিক  W. Durant এর মতে ,
'' The Indus Valley Civilisation was older than that which flowered out of the mud of the Nile ''.



দ্রাবিড় সৃষ্ট 
গবেষকদের অনেকেই দ্রাবিড় জাতিকে এই সংস্কৃতির স্রষ্টা বলে মনে করেন। এর পেছনে তাঁদের যুক্তি হলো - আর্যদের আগমনের বহু পূর্বে দ্রাবিড় জাতি উত্তর , উত্তর -পশ্চিম ও পশ্চিম ভারতে বসবাস শুরু করে। আজও বেলুচিস্তানে ''ব্রাহুই '' নামক দ্রাবিড় ভাষাভাষি উপজাতি বাস করে।
এর মতে , সিন্ধু লিপির সাথে তামিল ভাষার কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। আজও দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে প্রোটো অস্ট্রোলয়েড এবং ভূমধ্যসাগরীয় মানুষের মিশ্রণ দেখা যায়।
ধর্মের দিক দিয়েও হরপ্পা ও দ্রাবিড় সংস্কৃতির মধ্যে বহু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। শিব পূজা , লিঙ্গপূজা , দেবী পূজা - উভয় সংস্কৃতিতেই প্রচলিত ছিল।
কিন্তু এই সমস্ত যুক্তি স্বত্বেও দ্রাবিড় ও হরপ্পা সংস্কৃতির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শব সৎকার ব্যবস্থায় উভয় সংস্কৃতির মধ্যে কোনো মিল নেই। উভয় সংস্কৃতির অভিন্নতা প্রমাণিত হয়নি।

সুমেরীয় সৃষ্ট 
সুমের অঞ্চলে ব্যবহৃত ধাতু সামগ্রী ও সুমেরীয় পদ্ধতিতে তৈরী ইঁট আবিষ্কৃত হওয়াতে অনেকের ধারণা সুমেরীয় জাতি হরপ্পা সংস্কৃতির স্রষ্টা। হুইলারের মতে , হরপ্পা সংস্কৃতির ধারণা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীর থেকে এসেছিল।
গর্ডন চাইল্ড এর মতে , সুমেরীয় ও হরপ্পা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ ব্যাপারে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন - (ক ) উন্নত নগর বিন্যাস , (খ ) শস্য উৎপাদন প্রণালী , (গ ) কুম্ভকার চাকার গড়ন , (ঘ ) পোড়া ইঁট , (ঙ ) তাম্র ও ব্রোঞ্জ নির্মিত বাসনপত্র , (চ ) সচিত্র লিখন পদ্ধতি - ইত্যাদি।
তবে উভয় সংস্কৃতির মধ্যে ভাস্কর্যে , পোড়ামাটির কাজে এবং লিপিতে পার্থক্য রয়েছে। হরপ্পার সীলগুলির সাথে সুমেরীয় সীলগুলির শিল্পগত পার্থক্য দেখা যায়। সুতরাং সুমেরীয় সংস্কৃতির মধ্যে হরপ্পা সংস্কৃতির উৎস সন্ধান করা যায় না।



বৈদিক আর্য সৃষ্ট 
আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে , হরপ্পা সংস্কৃতি আর্যদের সৃষ্টি। কিন্তু বিশিষ্ট পন্ডিতগণ কেউই আজ এই মত সমর্থন করেন না।
'' there is not the least doubt that we can no longer accept the view ; now generally held that Vedic Civilisation is the sole foundation of all subsequent civilisation of India .''

স্যার জন মার্শাল দ্রাবিড়দেরই এই সংস্কৃতির স্রষ্টা বলে মনে করেন। তাঁর ভাষায় -
'' Mohenjodaro was not Aryan and very likely was Dravidian.''

Basam ও আর্যদের মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার স্রষ্টা বলে মনে করেন না। কেননা , তাদের মধ্যে সমাজ ব্যবস্থা , পূজা পদ্ধতি , ও নাগরিক বৈশিষ্টের ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

সুমের ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সাথে হরপ্পা সভ্যতার তুলনা 
কুম্ভকার চক্র , পোড়া ইঁটের ব্যবহার , উন্নত নাগরিক জীবন এবং চিত্রকলার লেখনভঙ্গি উভয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট ছিল। তাছাড়া , মহেঞ্জোদাড়োর সীলমোহর ইলাম ও মেসোপটেমিয়াতে পাওয়া গিয়েছে ; আবার তাদের সীলমোহর মহেঞ্জোদাড়োতে পাওয়া গিয়েছে। সুতরাং , ঐতিহাসিকগণ এই দুই সভ্যতাকে সমগোত্রীয় মনে করে '' Indo - Sumerian Culture '' নামে অভিহিত করেন। কিন্তু স্যার জন মার্শাল এই মতবাদকে অস্বীকার করে বলেন -
'' The Indus Valley was the cradle of the Sumerian and later civilisation of Western Asia .''

উপসংহার 
মহেঞ্জোদাড়োতে তিনটি স্বতন্ত্র জাতির অস্তিত্বের নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন - (i) ভূমধ্যসাগরীয় , (ii) ককেশীয় জাতি ও (iii) তৃতীয়টি অজ্ঞাত। তাছাড়া মহেঞ্জোদাড়োর সমাধিস্থল থেকে মোঙ্গল জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তাই সহজেই অনুমান করা যেতে পারে যে , সিন্ধু সভ্যতা বিশেষ কোনো সভ্যতার দ্বারা সৃষ্ট নয়। বস্তুতঃ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতি দ্বারা তা সৃষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছিল। মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পায় আবিষ্কৃত বিভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন এই মতবাদের যৌক্তিকতা সমর্থন করে।         


 

Share
Tweet
Pin
Share