শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

 শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো। 
অথবা ,
প্রয়োগবাদ কী ? শিক্ষার লক্ষ্য , পাঠক্রম , শিক্ষন পদ্ধতি , শিক্ষকের ভূমিকা এবং শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে প্রয়োগবাদের অবদান আলোচনা করো। 

প্রয়োগবাদ 

আধুনিকতম দার্শনিক মতবাদগুলির মধ্যে প্রয়োগবাদ একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য মতবাদ। প্রকৃতিবাদের সাথে এর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেলেও প্রয়োগবাদের একটি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রয়োগবাদের মূলকথা হলো উপযোগিতা। তাই যে অভিজ্ঞতা বা ধারণার জীবনে কোনো ব্যবহারিক উপযোগিতা নেই - তা সত্যও নয় এবং তা গ্রহণযোগ্যও নয়। কোন অভিজ্ঞতা বা ধারণা সত্য কি'না -তা জানার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরীক্ষণ ( Experimentation ) ।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


প্রয়োগবাদ ও পরীক্ষণভিত্তিক ব্যবহারিক উপযোগিতা :-
এজন্য প্রয়োগবাদে দেখা যায় পরীক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপের প্রবণতা। প্রয়োগবাদীরা বিশ্বাস করেন - মানুষের জীবন বিকাশের ধারা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যবিধানের মাধ্যমে সাধিত হয়। সামাজিক পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই শিক্ষার্থীর ব্যাক্তিত্ব বিকশিত হয়। সর্বোপরি , প্রয়োগবাদী দর্শনে মানুষের জীবনকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ও উপযোগিতার পটভূমিকায় বিচার করা হয়েছে।
প্রয়োগবাদের প্রথম সূচনা :-
১৮৭৮ সালে সর্বপ্রথম প্রয়োগবাদের প্রচার করেন চার্লস পিয়ার্স ( Charles Peirce )। এরপর এই মতবাদ সুসংহতরূপে প্রকাশিত হয় উইলিয়াম জেমস , জন ডিউই - প্রমুখ দার্শনিকদের দ্বারা।
প্রয়োগবাদ সম্পর্কে উইলিয়াম জেমস বলেছেন - Truth is that works .
অর্থাৎ , জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানে যার কোনো ভূমিকা নেই - তা সত্যিই অর্থহীন।
উপকরণবাদ :-
জন ডিউই এই মতবাদকে স্বতন্ত্র ধারায় বিশ্লেষণ করেন এবং বলেন যে - মানুষের ভাবনারাজি হচ্ছে জীবনের প্রয়োজন সাধনের উপযোগী উপকরণ। এই কারণে প্রয়োগবাদের ওপর নাম উপকরণবাদ।
প্রয়োগবাদের প্রবক্তাগণ :-
প্রয়োগবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলেন - চার্লস পিয়ার্স ( Charles Peirce ) , উইলিয়াম জেমস , জন ডিউই। এছাড়াও এই মতবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কিলপ্যাট্রিক ( Kilpatrick )।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদ 
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদের গুরুত্ব ও ভূমিকা বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করা যায়। যেমন -

শিক্ষার লক্ষ্য ও প্রয়োগবাদ :- শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে প্রয়োগবাদী দর্শন কোনো নির্দিষ্ট লক্ষের কথা বলেনি। প্রয়োগবাদী দর্শনের মতে শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। সংক্ষেপে প্রয়োগবাদীদের শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থী শিশুকে এমন সকল শারীরিক , মানসিক ও নৈতিক কাজে নিযুক্ত করা যা তাকে তার জীবনের মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও ব্যবহারিক শিক্ষার বিশেষ প্রচলন দেখা যায়। সুতরাং বলা যায় , বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষভাবে প্রয়োগবাদ দ্বারা প্রভাবিত।
পাঠক্রম নির্ধারণে প্রয়োগবাদ :- পাঠক্রম নির্বাচনে প্রয়োগবাদীরা  অপরবর্তনীয় মনোভাবকে বর্জন করেছেন এবং পাঠক্রমের পরিবর্তন ও পরিমার্জনকে স্বীকার করেছেন।
এছাড়া পাঠক্রমে অখণ্ডতা বজায় রেখে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক ব্যাক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। এর সাথে সাথে শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা ও কর্মধারার উপর গুরুত্ব দিয়ে পাঠক্রম রচনা করতে হবে এবং শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক প্রবণতা , আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রমের মধ্যে সংযোজনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

শিক্ষা পদ্ধতি ও প্রয়োগবাদ :- প্রয়োগবাদীদের মতে , শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে শুধু বিষয়ই নয় , পদ্ধতিরও পরিবর্তন করতে হবে। সুতরাং শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তাধারার বিজ্ঞানসম্মত প্রবর্তনের মাধ্যমে এবং প্রত্যক্ষ কর্মের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করবার প্রয়োজনীয়তা প্রয়োগবাদীরা বলে থাকেন।
কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার ( Activity centered education ) উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাঁরা শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষাগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মূলত দুই ধরণের পদ্ধতি প্রয়োগবাদী চিন্তার ফসল। যথা - ১. প্রকল্প পদ্ধতি  (Project Method ) ও ২. সমস্যা সমাধান পদ্ধতি ( Problem solving method )।
শিক্ষকের ভূমিকা ও প্রয়োগবাদ :- প্রয়োগবাদী দার্শনিকগণ শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা প্রসঙ্গেও নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তাঁদের মতে শিক্ষকের কর্তব্য হবে শিক্ষার্থীর সামনে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরী করা। শিক্ষার্থী যাতে আদর্শ পরিবেশের সাথে সার্থক অভিযোজনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে - তার দিকে শিক্ষককে দৃষ্টি রাখতে হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলারক্ষা প্রসঙ্গে প্রয়োগবাদ :- প্রয়োগবাদী দার্শনিকদের মতে , শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুভাবে শিক্ষক এই প্রক্রিয়াকে সম্পাদন করতে পারেন।
প্রথমত - শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতালাভের পথে শিক্ষন প্রক্রিয়াকে সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করা।
দ্বিতীয়ত - প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে নিজকর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আত্মশৃঙ্খলাপূর্ণ  ( Auto Discipline ) ব্যবস্থাতে অংশগ্রহণ করতে পারে - তার ব্যবস্থা করা।
সমালোচনা 
তবে একথা স্বীকার করতেই হয় যে - প্রয়োগবাদ মানুষের ব্যবহারিক জীবনের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে জীবনের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিগত দিকটিকে অস্বীকার করেছে। ফলে মূলত শিক্ষার ব্যবহারিক দিক দিয়েই প্রয়োগবাদের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার 
শিশুর আগ্রহ , ইচ্ছা , নিজস্ব ক্ষমতা , চাহিদার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে প্রয়োগবাদ প্রকৃতিবাদের বক্তব্যকে দৃঢ়তর করেছে। তাছাড়া , গণতান্ত্রিক ভাবধারাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে প্রয়োগবাদ শিক্ষায় সামাজিক পটভূমিকার গুরুত্ব স্বীকার করেছে।   

Share
Tweet
Pin
Share