জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ

by - August 07, 2021

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা কর। 

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ :- 




জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন :- 
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বা স্বদেশী আন্দোলন জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে। স্বদেশী আন্দোলনের ফলে ছাত্র - ছাত্রীরা তীব্রভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এই পরিস্থিতিতে সরকার কার্লাইল সার্কুলার জারি করে। কার্লাইল সার্কুলারের মূল বক্তব্য ছিল শিক্ষক ও ছাত্রদের জাতীয় আন্দোলন থেকে বিরত রাখা। এই পরিস্থিতিতে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। পুরোপুরি জাতীয় আদর্শে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ৯২ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ জাতীয় কলেজ ও স্কুল স্থাপন করে। জাতীয় কলেজের অধ্যক্ষ নির্বাচিত শ্রী অরবিন্দ ঘোষ। এরপর ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই মার্চ সতীশচন্দ্রের ডন সোসাইটি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সাথে মিশে যায়।  জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফলে পূর্ববঙ্গে ৪০ টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ১১ টি জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। 


জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায় - 
প্রথম পর্যায় ( ১৯০৫ - ১৯১০ ) 
দ্বিতীয় পর্যায় ( ১৯১১ - ১৯২০ ) 

তবে কিছু সাফল্য লাভ করলেও জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন তার আশানুরূপ সাফল্যের স্তরে পৌঁছতে পারেনি। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের আপাত ব্যর্থতার কারণগুলি নীচে আলোচনা করা হল।  

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ :- 


প্রথমতঃ জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের খুব একটা পরিষ্কার ধারণা ছিলনা। তাছাড়া , জাতীয় প্রয়োজনে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করার পক্ষপাতী তাঁরা ছিলেন না। 

দ্বিতীয়তঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। ফলে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর সাথে সাথে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়ে। 

তৃতীয়তঃ দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলন অনেক বেশি সফল হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনও প্রথম পর্যায়ের আন্দোলনের মতই রাজনৈতিক আন্দোলন নির্ভর ছিল। এরপর গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন চৌরিচৌরা ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রত্যাহত হলে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনও মন্দীভূত হয়ে গেল এবং অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলি টিকিয়ে রাখা ও পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। 


চতুর্থতঃ জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেগের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ফলে যুক্তির পরিবর্তে আবেগ দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়নি। 

পঞ্চমতঃ আর্থিক অনটন ছিল জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম একটি প্রতিকূলতা। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের আর্থিক ব্যায়ভার নির্বাহ হত কিছু মানুষের দানের ভিত্তিতে। ফলে এই বিরাট দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের দানে বেশিদিন চলতে পারেনি। 

ষষ্টতঃ ইংরেজ সরকারের দমন - পীড়ন নীতি জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কার্লাইল ও পেডলার সার্কুলার জাতীয় শিক্ষার প্রসারকে মন্দীভূত করেছিল। 

সপ্তমতঃ জাতীয় শিক্ষা আন্দোলের মধ্যে নতুন কোনো শিক্ষা চিন্তা অঙ্গীভূত ছিলনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধাঁচেই গড়ে উঠেছিল। ফলে শিক্ষা পাঠক্রম বাস্তব জীবনের প্রয়োজন দূরীভূত করতে পারেনি। 

অষ্টমতঃ একশ্রেণীর ভারতীয় বিশেষকরে মুসলিম সম্প্রদায় জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন না। তারা সাম্প্রদায়িকতার অজুহাতে শিক্ষা আন্দোলন থেকে বিরত ছিলেন। 


নবমতঃ তাছাড়া , জাতীয় নেতৃবৃন্দ জাতীয় শিক্ষার প্রকৃতি সম্পর্কে একমত ছিলেন না। নেতৃবৃন্দের জাতীয় শিক্ষার প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় আন্দোলন তার আশু লক্ষ্যে উপনীত হতে পারেনি।          

পরিশেষে বলা যায় , জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে মনে হলেও এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে ভারতীয় সংবিধান , বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি বহুক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের বিশেষ কিছু নীতিকে অনুসরণ করেছিলেন।     


You May Also Like

1 comments